তরবারি আর লাঠিসোটার দিন শেষ। এখন আর কেউ মহাবীর আলেকজান্দার হতে চায় না। তবে
মডেল
নেফারতিতি কিংবা হেলেনের দিন ফুরিয়ে যায়নি। তাদের মতো হওয়ার কথা বললেই লাইনে দাঁড়িয়ে যাবেন অনেকে। বিউটি রেইনস বলে একটা কথা আছে। সৌন্দর্যই নাকি শাসন করে। আর রূপের রাজ্যে রাজা-রানী হওয়ার জন্য এ কালের কোটি কোটি মানুষ নির্বিকারচিত্তে তাদের চেহারাটা সঁপে দিচ্ছে ছুরি কাঁচির তলায়। ২০১২ সালে শুধু আমেরিকাতেই বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক সার্জারি করিয়েছে ১ কোটি ৪৫ লাখ মার্কিনি।
প্লেটো বলতেন সব মানুষেরই তিনটি ইচ্ছে আছে— সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া, সত্ উপায়ে ধনী ও তৃতীয়ত সুন্দর হওয়া। প্রথম দুটোর জন্য বহু উপায় থাকলেও মানুষ বারবার ঝামেলা পড়ছে তিন নম্বরটা নিয়ে। অনেক চেষ্টার পর কোনো কিছুতেই যখন কাজ হয় না, তখনই মানুষ বেছে নেয় চূড়ান্ত পদ্ধতিটা— প্লাস্টিক সার্জারি। সম্প্রতি এখানেও বাগড়া দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। প্রশ্ন তুলেছেন প্লাস্টিক সার্জারি কি আসলেই রূপ বাড়াতে পারে? দুনিয়াতে এখন যত ধরনের প্লাস্টিক সার্জারি আছে সব ধরনের নমুনা নিয়েই পরীক্ষা চালালেন ম্যানহাটনের লেনক্স হিল হসপিটালের ড. এ জশুয়া জিম ও তার দলের সদস্যরা। একদল মানুষকে ছবি দেখিয়ে যাচাই করতে বললেন, আগের ও পরের চেহারা। গড়পড়তায় যে ফলাফল এল তাতে হতাশ রূপসন্ধানীরা। প্লাস্টিক সার্জারি সৌন্দর্য বাড়াতে পারে না! উল্টো আরও কমিয়ে দিতে পারে। আর এ জরিপকে উড়িয়ে দিতে পারবেন না সহজে। কেননা কারও রূপ কম কি বেশি, সেটা যাচাই করার ভার তো অন্যের হাতেই!

জরিপে একটা ইতিবাচক দিকও অবশ্য খুঁজে পাওয়া গেছে— প্লাস্টিক সার্জারির পর বয়স কিছুটা কম দেখায়! কিন্তু এখানেও আপত্তি। যতটা কম দেখানোর জন্য কাড়ি কাড়ি ডলার খরচ করা হয়, সেই অনুপাতে বয়সটা কমে না। অর্থাত্ কেউ তার চেহারার বয়স দশ বছর কমানোর স্বপ্নে আত্মভোলা হয়ে একগাদা ডলার খরচা করে প্লাস্টিক সার্জারি করালো। কিন্তু দেখা গেল সবাই বলছে বয়স খুব একটা কমেনি। জরিপে দেখা গেছে এই কমে যাওয়াটা গড়ে তিন থেকে চার বছর। অর্থাত্ ৫৫ বছর বয়সী কেউ সার্জারির পর দেখল তাকে ৫২ বছর বয়সীর মতো দেখাচ্ছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মনে মনে ডাক্তারদের পিলে চমকানোই স্বাভাবিক।

১ লাখ ২০ হাজার মার্কিনির প্লাস্টিক সার্জারির পর তোলা ছবি নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন ড. জশুয়া। সার্জারি পরবর্তী চেহারার আবেদন নিয়েও রেটিং দিতে বলেছেন স্বেচ্ছাসেবীদের। দেখা গেল নতুন চেহারাকে কেউই দশে ৪-৬ এর বেশি দিচ্ছে না। এর জবাবে পাল্টা যুক্তি তৈরি আছে। প্রথমত, আমরা এখন বুড়িয়ে যাওয়া বলতে যা বুঝি দশ বছর আগে হয়ত তা একরকম ছিল না। তাই জরিপকারীরা বিভ্রান্ত হবেই। আবার সব বিশেষজ্ঞ যে প্লাস্টিক সার্জারিতে সমান পারদর্শী এমনও নয়। হয়তো যাদের ছবি দেখানো হয়েছে তাদের কপালে ভালো সার্জন জোটেনি।

মোট কথা, যারা খানিকটা বাড়তি সৌন্দর্যের আশায় ছুরি কাঁচিরও তোয়াক্কা করেন না তাদের কাছে যুক্তি-তক্ক সবসময়ই ‘পরের কথা’আগে অপারেশনটা করেই দেখা যাক। আবেদন যদি তিল পরিমাণও বাড়ে তবে মন্দ কী। আর খরচ? শুধু টাকায় কী আর চিড়ে ভেজে?
ফ্যাক্টস
# প্লাস্টিক সার্জারি এ যুগের আবিষ্কার নয়। ২৭০০ বছর আগেও হতো! রানি নেফারতিতি কী তবে … ?

# ২১০০ বছর আগেও রোমানরা তাদের নাক, ঠোঁট, দাঁতের গঠন ঠিক করা ও ত্বকের দাগ দূর করতে অস্ত্রোপচার করাত।

মধ্যযুগে প্লাস্টিক সার্জারিকে পাপ মনে করা হতো। শরীরের গঠন পাল্টে দেয়াকে তখন মেনে নিতে পারেনি অনেকেই।

# আধুনিক প্লাস্টিক সার্জারির জনক বলা হয় ইতালির চিকিত্সক গ্যাসপারে তাগলিয়াকোজ্জিকে (১৫৪৬-১৫৯৯)।

# ১৪০০-১৭০০ সালের দিকে মানুষ তাদের চেহারায় ছুরি কাঁচি চালাতে নরসুন্দরের কাছে যেত!

# বিশ্বের প্রথম বক্ষ স্ফীতকরণ সার্জারি হয়েছিল জার্মানিতে, ১৮৯৩ সালে। সেই থেকে নারীদের মধ্যে এটাই সবচেয়ে পছন্দের সার্জারি।

# এখন সবচেয়ে বেশি সার্জারি হয় শরীরের বিভিন্ন অংশ হতে বাড়তি মেদ ঝরাতে (যাকে বলে লিপোসাকশন)এরপরই রয়েছে বক্ষ স্ফীতকরণ ও ভ্রূ সার্জারি।

# এখন ৯০ শতাংশ প্লাস্টিক সার্জারি হয় নারীদের। বছরে চেহারায় ছুরি কাঁচি চালায় ১ কোটি নারী আর ১০ লাখ পুরুষ। এদের দুই-তৃতীয়াংশই একাধিকবার প্লাস্টিক সার্জারি করায়।

# শুধু যুক্তরাস্ট্রে বিভিন্ন ধরনের কসমেটিক সার্জারির পেছনে বছরে ব্যয় হয় প্রায় দেড় হাজার কোটি ডলার।

# সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক সার্জারি করান ৪০-৫৪ বছর বয়সীরা, বছরে ৫৩ লাখ।

# একটি প্লাস্টিক সার্জারি সম্পন্ন হওয়ার পর গ্রাহককে সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ হাসপাতালে থাকতে হয়।

# চেহারার সৌন্দর্য বাড়াতে এখন বেশি ব্যবহূত হয় বোটক্স নামে একটি পদ্ধতি। এতে ত্বকের ভেতর ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রোটিন প্রবেশ করিয়ে মাংসপেশিকে কোমল বানিয়ে দেয়া সম্ভব। একটি বোটক্স ইনজেকশনের দাম প্রায় ৪০০ ডলার। ইদানীং কেউ আবার প্লাস্টিক সার্জারির মধ্যে ক্লোনিং প্রযুক্তিও খাটানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। আর এ কাজে তারা নিয়মিত নজর রাখছেন ভ্রূণের বৃদ্ধির ওপর। কেননা, ভ্রূণের ভেতর কোনো দাগ থাকে না, আবার কোথাও কোনো সমস্যা দেখা দিলে সেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেরেও যায়।
 
Top