নিপুণ
অভিনয়ে যাত্রা শুরু মাত্র ছয় বছর আগে। এর মধ্যেই জিতেছেন দুটি জাতীয় পুরস্কার, টালিউডের হার্থথ্রব
প্রসেনজিতের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ ইত্যাদি। রাশিয়া থেকে এফডিসি যাত্রা ঢালিউডের কোন অভিনেত্রীর ঝুলিতে অল্পদিনে এতো সফলতা এই প্রশ্নে যার নাম মনে আসে তিনি আর কেউ নন, চিত্র নায়িকা নিপুণ।

সম্প্রতি টালিউডের ব্যবসা সফল ‘পরিচয়’ সিনেমায় স্বপ্নের নায়ক প্রসেনজিতের সঙ্গে অভিনয় করেছেন নিপুণ। জুনে সিনেমাটি কলকাতায় মুক্তি পায়। সমালোচকদের ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে সিনেমাটি। অভিনেতা-অভিনেত্রী চয়ন ও কাহিনী নির্ভরতাই দর্শক প্রিয়তার মূল কারণ হিসেবে মনে করেন নিপুণ। এছাড়া প্রসেনজিতের সঙ্গে কাজ করতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবানও দাবি করেন তিনি।

সহকর্মীর প্রতি প্রসেনজিতের আন্তরিকতা সম্পর্কে তিনি বলেন, “প্রসেনজিতের সঙ্গে অভিনয় নিয়ে প্রথমে আমি একটু চিন্তিত ছিলাম। ‘পরিচয়’ সিনেমার একটি গানের দৃশ্যের সুটিংয়ে প্রথমে আমাদের দেখা হয়। তিনি সম্ভবত আমার মানসিক অবস্থাটা বুঝতে পেরেছিলেন।

খুব সাবলীল ভাবে আমার কাছে এসে বললেন, ‘আমি প্রসেনজিত চ্যাটার্জী। আমি আপনার সঙ্গে কাজ করছি।’ ওনার এই আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ। আমি সারাদিন ধরে রির্হাসেল করতে থাকি। আর উনি একটুও রির্হাসেল না করে খুব কঠিন দৃশ্যও একবারে ওকে করতে পারেন। তার অভিনয় দক্ষতায় অভিভূত।”

এমনকি ‘পরিচয়’ সিনেমায় আমার (নিপুণ) ও প্রসেনজিতের একটি বিছানার দৃশ্য ছিলো। এই দৃশ্য নিয়ে আমার তো উদ্বিগ্নতার কমতি ছিলো না। অথচ আমাকে অবাক করে দিয়ে প্রসেনজিত বলেন, ‘যেভাবে আপনার সুবিধা আমি বিছানার দৃশ্যটি সেভাবেই করবো।’ আশ্চর্যজনকভাবে ওনার সহায়তায় আমরা খুব অল্প সময়েই এই দৃশ্যটি সম্পূর্ণ করতে পেরেছিলাম।’

প্রসেনজিতের সবচেয়ে ভালো গুণ হলো তিনি নিজের চেয়ে সহ-শিল্পীর অবস্থাকে বেশি প্রাধান্য দেন। এটি সত্যি প্রশংসনীয় একটি বৈশিষ্ট্য।

নিপুণ মনে করেন টালিউড ও ঢালিউডের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো পেশাদারিত্ব ও প্রশিক্ষণ। টালিউডের শিল্পীরা অনেক নিয়ম মেনে চলেন। যেকোনো কাজের আগে তাদের পূর্ব-পরিকল্পনা থাকে। এছাড়া প্রত্যেকের কাজ সুনির্দিষ্ট করা থাকে। সুতরাং, আমাদের কস্টিউম, মেক-আপ ও হেয়ার স্ট্যাইল নিয়ে কোনো চিন্তাই করতে হয় না। শুধুমাত্র অভিনয়ই শিল্পীদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু।

এছাড়া টালিউডে নারীদের কর্ম পরিবেশেরও উচ্ছসিত প্রশংসা করেন তিনি। নিপুণ বলেন, ওখানে আমরা সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কাজ করেছি। মেয়েদের কাজের পরিবেশ বন্ধুত্বপূর্ণ না হলে এতো সময় কাজ করা সম্ভব নয়।

হালের ব্যস্ত অভিনেত্রী নিপুণের হাতে বর্তমানে তিনটি সিনেমার কাজ রয়েছে। এগুলো হলো মায়ের মমতা, এইতো ভালোবাসা ও পদ্মা পাড়ের পাবর্তী।

‘মায়ের মমতা’ সিনেমায় নিপুণের বিপরীতে রয়েছে অভিনেতা ইমন। এ সিনেমায় ‘মমতা’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন নিপুণ এবং এটি তার অন্যতম প্রিয় চরিত্র বলে জানান তিনি।

মে মাসে মুক্তি পেয়েছে ‘এইতো ভালোবাসা’ সিনেমাটি। বর্তমানে জনপ্রিয় দুই অভিনেতা নীরব ও ইমনের বিপরীতে অভিনয় করেন নিপুণ। এটি একটি কমেডি নির্ভর সিনেমা। এই সিনেমাটি মুক্তি আগেই এর গানগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

রাশিয়ার লা শহরে স্বামী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে থাকেন নিপুণ। রাশিয়া থেকে এফডিসি পর্যন্ত সফর সম্পর্কে নিপুণ বলেন- ২০০৬ সালে ঢাকায় বেড়াতে এসেছিলেন তিনি। এসময় ডিপজল আমাকে একটি সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। আমি তাকে জানাই, আর মাত্র ২০দিন আমি ঢাকায় আছি। যদি এই অল্প সময়ের মধ্যে সিনেমার কাজ সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয়, তাহলে আপনি করতে পারেন।

অবিশ্বাস্য হলো এই অল্প সময়েই ‘সাজঘর’ সিনেমার কাজ সম্পূর্ণ করেন তিনি। এ সিনেমায় আমি ‘কুসুম’ চরিত্রে অভিনয় করিছিলাম এবং এই চরিত্রটি জাতীয় পুরস্কার অর্জন করে। হূমায়ন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে এটি নির্মিত। এ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমেই আমি উপলব্ধি করি যে, অভিনয়ই আমার প্রকৃত ঠিকানা।

নিপুণ অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘পিতার আসন’, ‘সাজঘর’, ‘রিকশাওয়ালার প্রেম’, ‘প্রাণের স্বামী’, ‘চাঁদের মতো বউ’, ‘পরিচয়’ ইত্যাদি।
 
Top