মা

ভোরের প্রথম পাখিটা জেগে উঠার আগেই মহিলাটিকে জেগে উঠতে হয়...বড় ছেলেটার জন্য জল খাবার তৈরী করতে হবে...আজও হয়তো ছেলেটা প্রতিদিনের মত চাকরির খোঁজে বের হবে...আর সে বিদায় নেবার পরই ছোট ছেলেটাকে পাঠাতে হবে স্কুলে...গত ৩টা বছর এমন ভাবেই চলছে...স্বামী হারিয়েছেন ১২টা বছর হয়ে গেল...সহায় সম্বল বলতে একটা টিনের দোচালা বাড়ি আর প্রবিডেন্ড ফান্ডের অল্পকিছু টাকা...স্বামী সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন...কিন্তু অতিরিক্ত স্বত হওয়ার কারনে তেমন কিছুই করতে পারেন নি...যেখানে জুনিয়র কর্মচারীরা ৮-১০ তালা বিল্ডিং বানিয়ে ফেলেছে সেখানে তিনি কোনমতে একটা দোচালা বাড়ি করেছিলেন,তাও আবার ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে...সেই টাকা পরিশোধ করতে করতেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন লোকটা....
বড় ছেলে ঘুম থেকে উঠেই কোন মতে মুখে দু মুঠো গুঁজে বেরিয়ে পড়ল...মা তাকে একবার বলেছিল ছাতা নিয়ে জেতে...কিন্তু নিল না...ঘরে একটাই মাত্র ছাতা,সে তার বিলাসের জন্য অন্য কাউকে কষ্টে ফেলতে চায় না...তাছারা ছোট ভাইটা স্কুলে যাবে...তাকে ছাতা না দিলে হয়তো বাহানা বানিয়ে সে স্কুলেই যাবেনা...ঘর থেকে বের হতেই পোশা কুকুরটা তাকে ঘিরে ঘুর ঘুর করতে থাকল...এই কুকুরটার বুদ্ধি খুবই কম...না হলে সুধু একবেলা খাবারের জন্য এই বাড়িতে পরে থাকার মানেই হয় না...ছেলেটা পারার চায়ের দোকান থেকে একটা বিস্কুট নিয়ে কুকুরটাকে দিল...আর খবরের কাগজ টা নিয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পাতাটা বার বার দেখতে থাকল...গত ৩ টা বছর ধরে এটাই তার নিয়মিত রুটিন....তার উঠার সময় হয়ে এসেছে....বিস্কুটের বিল দিতে গিয়ে টের পেল মানিব্যাগে ১০০ টাকা কম আছে...নিশ্চয় ছোট ভাইটার কাজ...ইদানিং সে এই ধরনের কাজ একটু বেশিই করছে...কিন্তু তাকে শাসন করতে ইচ্ছা করে না...বাবার খুব আদরের ছেলে ছিল ছোট এই ভাইটা...মনে এক চাপা দুঃখ নিয়েই হাটা শুরু করলো সে....কুকুরটা গলির মোড়েই দাঁরিয়ে আছে...এখন আর পিছে পিছে আসছে না....এদেরও হয়তো নির্দিষ্ট সীমারেখা আছে...এরা তার বাইরে আসে না...হাটতে হাটতে সে রাস্তার মোরে চলে এসেছে....তার একটা চাকরি খুবই দরকার...কিন্তু এখনকার সময়ে মামা চাচা ছারা চাকরি হয় না...তার মামা চাচা দেওয়ার কোন সামর্থ্য নেই...তাই সে চাকরিও পায় না...দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেলে সে আবার হাটতে থাকলো...
ছোট ছেলেটা একটু আগেই ঘুম থেকে উঠেছে...তার মাথায় ঘুরছে কিভাবে স্কুল টা আজ ফাকি দেওয়া যায়...কিন্তু না তার মায়ের সামনে কোন যুক্তিই খাটলো না...তাকে বাধ্য হয়ে স্কুলের জন্য বের হতেই হল..স্কুলের পথে হাটতে হাটতেই সে ঠিক কুরে ফেললো আজ ক্লাস না করে কোথায় যাবে...নতুন উদ্দমে সেই পথেই যাত্রা শুরু কোরল সে....
মহিলাটি চুপচাপ বসে আছে আর ভাবছে,এভাবে আর কত দিন...বড় ছেলেটা হন্ন্যে হয়ে ঘুরেও কোনও চাকরি পায় না...সে এই জীবন পরিবর্তন করতে চায় কিন্তু পারে না...ছোট ছেলে টা দিন দিন বখে যাচ্ছে...প্রায়ই তার নামে বিচার আসে...সে এই জীবনটাকে অভিশাপ মনে করে...আর ১০টা মধ্যবিত্ত পরিবারের মত তার পরিবারেও নানা ধরনের টানাপোড়ন সর্বদা লেগেই থাকে...কিন্তু কিইবা করতে পারে তারা...জীবনের এই নির্মমতার কাছে তারা অসহায়...নির্বাক দৃষ্টিতে তিনি চেয়ে থাকেন নিল আকাশের দিকে আর দীর্ঘশ্বাস ছারেন।
 
Top