ভালোবাসার গল্প

একা মনমড়া হয়ে পাশের বারান্দার দাড়িয়ে থাকা ছেলেটিকে দেখে রিনির মনেকোথাও একটা মায়া জমল।রিনি খুব কমই বাড়ির বাইরে বের হয়।শুধু
বারান্দায় দাড়িয়ে থাকতেই সে বেশি পছন্দ করে ।সেই ছেলেটা ওদেরই বাসায় ভাড়া থাকে কিন্তু নিজেদের মধ্যে এখনো পরিচয়টাই হয়নি। ছেলেটাও মাঝে মাঝে বারান্দায় আসে। এভাবেই তাদের দেখা হয়,কথা হয় না। তাই রিনি আজ নিজ থেকেই ছেলেটার সাথে কথা বলতে এগিয়ে এল কিন্তু কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছিল না___
কিছুক্ষণের নীরবতা ভেঙে রিনিই বলে উঠল
>আমি রিনি
>অর্নব
>মুড অফ ?
>জি
>জানতে পারি ?
কিছুক্ষণ চুপ থেকে অর্নব বলল
>ভার্সিটি নেই আজ ?
রিনি বুঝতে পারল অর্নব মুড অফের
কথাটা এভোয়েড করল।
>হুম ছিল
>যাননি ?
>যেতে ইচ্ছা করেনি
>সাবজেক্ট ?
>হোম ইকোনোমিক্স
>গুড
>কফি খাবেন ?
অর্নব ঠোটটা একটু বাড়িয়ে খুব শুষ্ক
একটা হাসি দিয়ে বলল
>তোলা রইল
>বাকি তো ফাকিও হতে পারে
>তাহলে আদায় করে নিব ।
>ঠিক আছে (একটু হেসে)
আরো কিছুক্ষণ নির্বাক পুতুলের মত
দাড়িয়ে থাকল ওরা ।আর কোন কথা যেন
বাকি নেই ।অর্নব হাতের
ঘড়িটা সামনে এনে বলল
>সরি আজ আসি ।একটু বাইরে যাব।পরে কথা হবে।
>ঠিক আছে যান।আমিও একটু বেরোব ।
পরদিন সকালে_____________
>মা তুমি কি কখনো আমাকে বড় হতে দিবে না?এত বড় হয়েছি তবু রোজ টিফিন দাও।বন্ধুরা হাসাহাসি করে ।
>মায়ের কাছে সন্তান বড় হয়না ।
>হুম খুব হয়েছে দাও এখন ।
>সাবধানে যাস ।
রিনি রাস্তায় বাসের জন্য দাড়িয়ে আছে।নীল ওড়না আর খোলা চুল যেন বাতাসের সাথে খেলা করছে।খুব সুন্দর লাগছে রিনিকে।দুর থেকে দেখে এগিয়ে এল অর্নব ।
>বাসের জন্য দাড়িয়ে আছেন বুঝি ?
>হ্যা
>কখন আসে বাস ?
>এতক্ষণে চলে আসে ।আজ কেন যে দেরিকরছে?
>আপত্তি না থাকলে আমার বাইকে যেতে পারেন।
প্রথমে একটু সংকোচ করলেও বাস আসছে না দেখে এত রোদে দাড়িয়ে থাকার চেয়ে অর্নবের সাথে যাওয়াটাবেটার মনে করল রিনি ।
>আপনি খুব আদরের মেয়ে তাইনা ?
>হুম তা একটু ।
>কতটুকু সেটা তো আপনি বের হওয়ার সময়ইবুঝতে পারলাম।এত যত্ন করে আমার মা কখনো আমাকে টিফিন করে দেয়নি।এমনকি ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময়ও না ।
এনিওয়ে আপনার ভার্সিটি এসে গেছে ।
অর্নবের সাথে কথা বলতে বলতে রিনি খেয়ালই করেনি কখন এতটা পথ ফুরিয়ে গেছে ।অর্নবের কথা শুনে হঠাত্ করেই যেন রিনি কোন এক অজানা জগত্ থেকে ফিরে এল।সাথে সাথে নেমে গেল ।
>আরে আরে আজব মেয়ে তো আপনি ।একটা উপকার করলাম থ্যাংকস তো দিলেনই না উল্টা এমনভাবে চলে যাচ্ছেন যেন বাঘে তাড়া করেছে ।
রিনি লজ্জা পেয়ে ইতঃস্তত স্বরে থ্যাংকস বলল ।
সুন্দরি মেয়েটাকে এখন খুব বোকা বোকা লাখছে দেখে অর্নব উচ্চস্বরেহেসে বলল
>আপনার এই বোকা বোকা ফেস দেখার জন্য একটু মজা করলাম।ডোন্ট মাইন্ড প্লিজ।এবার আমি আসি,বাই ।
রিনি বুঝতে পারল না হঠাত্ আজ এমন কেন হল?তবে এটা বুঝতে পারল যে অর্নব আসলে ততটাবেরসিক নয় যতটা সে ভেবেছিল।একদিনেরপরিচয়ে মনে হচ্ছে বেশ পুরাতন বন্ধু ।
বেশ কয়েকদিন হল অর্নবের দেখা মেলেনি বারান্দার গ্রিলের ফাকে।রাস্তায়ও দেখা হয়নি অনেকদিন।যদিও রিনি অর্নবকে নিয়ে ভাবছে না তবুও কেন জানি চিন্তাও হচ্ছে একটু ।তাই কিছু না ভেবেই রিনি অর্নবদের গেটের কলিং বেলটা চাপল।দু তিনবার চাপার পর ওদের বাসার কাজের মেয়েটা গেট খুলে দিল ।
>আরে রিনি আপা যে !ভেতরে আসেন ।
>অর্নব নেই ?
>ভাইজান হাসপাতালে ।বাসার সবাই সেখানেগেছে শুধু ভাইজানের ছোট বোন টুম্পা আছে।
>হাসপাতালে কেন ?কি হয়েছে ?
>ভাইজানের খুব বড় অসুখ করছে ।ডাক্তার বলেছে ভাইজান আর বাচবে না ।
বলেই মেয়েটা কেদে ফেলল ।
>কথাটা শুনে রিনি স্তব্ধ হয়ে গেল।আর কোন প্রশ্ন না করে নির্বাক পুতুলের মত দাড়িয়ে রইল।
ভেতর থেকে টুম্পা এসে ডাকল
রিনি আপু...
রিনি মুখে কোন কথা না বলে শুধু মাথা নাড়ল ।
টুম্পা একটা খাম এগিয়ে দিয়ে বলল
>এটা ভাইয়া তোমাকে দিতে বলেছে ।
রিনি খামটা নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল ।খামটা খোলার আগে রিনি একবার অর্নবের বন্ধ দরজাটার দিকে তাকালো ।সাদা খামে লুকানো চিঠিটায় লেখা ছিল.......
"রিনি,
. . . . জানি হয়ত অবাক হবে তবুও কিছু বাস্তবতা মেনে নিও।আজ প্রথম ও শেষবারেরমত তোমাকে তুমি বলে সম্বোধন করলাম ।তোমার সাথে পরিচয়হওয়ার পর তোমাকে নিজের অজান্তেই অনেক আপন ভেবেছিলাম ।তোমার সাথে কাটানো স্বল্প সময়টুকু আমাকে খুবআনন্দ দিত ।একসময় বুঝতে পারলাম তোমাকে আমি ভালবেসে ফেলেছি ।কিন্তু সেই ভালবাসা নিতান্তই একটা মরিচিকার মত কারণ তোমাকে ভালবেসে আপন করে পাওয়ার স্বপ্ন দেখা আমার জন্য অবাস্তব কল্পনা ছিল। ব্রেইন টিউমার ধরা পরার পর ডাক্তার বলেছিল খুব বেশি হলে একবছরের সম্ভাব্য জীবন আমার।তোমাকে ভালবেসে খুব বাঁচতে ইচ্ছে হত কিন্তু জীবন তো কোন নাটকনয় যে পরিচালকের ইচ্ছামত বাস্তবতা বদলে যাবে।দিন গুনতে গুনতে আমার জীবন প্রদ্বীপ নিভে যাওয়ারসময় ঘনিয়ে এল।তাই আমার অস্ফুট ভালবাসার কথা তোমাকে জানিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।জানি না তোমার মনে আমার জন্য কখনো কোন জায়গা ছিল কিনা তবে আমি নিশ্চিত এই চিঠিটা পাওয়ার পর তোমার মনে একটু হলেও জায়গা পাব ।সেটুকুই আমার স্বার্থকতা ।ভাল থেকো তুমি,
. . . . . . . . . . . . . , . .অর্নব"
চিঠিটার প্রতিটা কথা রিনির একেক ফোটা অশ্রু হয়ে ঝরে পড়ল আর স্থির দুচোখ অর্নবের দরজার দিকে তাকিয়ে রইল ।
 
Top