সামনে সার দিয়ে দর্শক, স্টেজ আর হল উজাড় করে আলোর বাহারি ঝলকানি আর উচ্চগ্রামের মিউজিক। তারই তালে পা মিলিয়ে বাছাই সুন্দরীরা পোশাক প্রদর্শনের নেশায় নেমেছেন। অথবা ভাবুন ব্যালকনির
মডেল গার্ল
দরজাটা খুললেই সামনের বিশাল হোর্ডিংয়ে সুগন্ধীর বিজ্ঞাপনে বুক খোলা সুপুরুষের উদ্দামতায় মাঝেমধ্যে হিংসে জাগে কিনা? মনে মনে ভাবতে ইচ্ছা করে, যদি আপনিও পৌঁছাতে পারতেন কল্প-বাস্তবের ওই রঙিন জগতে? মডেলিং-এর জগতে? গ্ল্যামার, বাহারি আলো, স্বপ্ন- সব মিলিয়ে শুধু নামোচ্চারণেই কী অদ্ভুত আকর্ষণ, তাই না? এবার সেই পথ যদি পরিষ্কার করে দেয় ইন্টারনেট? চিন্তা নেই, এবার ইন্টারনেটে কয়েক ক্লিকেই আপনি পা ফেলতে পারেন মডেলিং-এর দুনিয়ায়। প্রশ্ন হল, যেখানে বাস্তব জগতে লড়াইটা ভয়ানক কঠিন, সেখানে কীভাবে সাহায্য করবে ইন্টারনেট? বিশেষ করে কলকাতার মতো শহরে, যেখানে গ্ল্যামার দুনিয়ার আলোর ঝলসানিটা অন্য শহরের তুলনায় অনেকটাই কম?

আসলে মডেলিংয়ের বাস্তবটা বড়ই কঠিন। প্রিন্ট মডেলিংয়ের দুনিয়ায় যেটুকু জীবন বেঁচে আছে, দেশের র‍্যাম্পের দুনিয়া তার পাশে অনেকটাই খুঁড়িয়ে হাঁটছে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। রাজধানী বা মুম্বইয়ের র‍্যাম্পের দুনিয়ার এমন সাদা-কালো ছবির পাশে তো কলকাতার চিত্র আরওই বেমানান। তবু মধ্যবিত্ত বাড়ির এ প্রজন্মের অনেকেই টিচিং, সরকারি চাকরির বাঁধা-ধরা গন্ডির বাইরে গিয়ে ঝুঁকছে এই পেশায়। কিন্তু প্রতিযোগিতা, কাজের সুযোগ না-মেলা ইত্যাদি নিয়ে মডেলিং পেশা হিসেবে খুব সুখকর হচ্ছে না। কারণ বিশেষজ্ঞদের মতে গোড়ায় গলদ। প্রথম থেকেই এই পেশা সম্বন্ধে সঠিক হাল হকিকত জেনে, নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী ঠিকঠাক গ্রুমিংয়ের মধ্যে দিয়ে এগোলে তবেই মডেলিং নিয়ে স্বপ্নের কেরিয়ার গড়া যায় বলে জানাচ্ছেন, অন-লাইন মডেলিং সংক্রান্ত একটি সংস্থার আধিকারিক অপ্রতীম ঘোষাল। আর সেই গ্রুমিং আর খুঁটিনাটি অনেক কিছু নিয়েই এখন ধরা দিচ্ছে অন-লাইনে।

কেন না, পেশা হিসেবে মডেলিং সহজ নয় মোটেই। র‍্যাম্প নাকি প্রিন্ট- মডেলিংয়ের কোন জায়গায় নিজেকে দাঁড় করাবেন সে নিয়ে সঠিক হদিশ দিতে এ শহরে পথ নির্দেশকের সংখ্যাও বড় কম। সেই ফাঁকটুকুই পূরণ করছে বেশ কিছু অন-লাইন সংস্থা। তার মধ্যে কিছু ওয়েবসাইটে মডেলরা আপলোড করতে পারবেন নিজেদের পোর্টফোলিও, তারপর যোগ্যতা বিচার করে সেই সংস্থা তাঁদের পাইয়ে দেবে কাজ। এমনই একটি সংস্থার প্রধান জানাচ্ছেন, ‘এই জগতে সঠিক ভাবে প্রবেশ করতে গেলে প্রথমত সঠিক পোর্টফোলিও বানানো প্রয়োজন। আমাদের সংস্থায় আমরা এই পুরো প্রসেসটা করে থাকি। এখানে পোর্টফোলিও থেকে শুরু করে ফ্যাশন শো, গ্রুমিং এমনকী পরবর্তী ক্ষেত্রে বিভিন্ন জায়গায় মডেলদের প্রোমোট করার কাজটাও আমরা করে থাকি। আর প্রোমোট করি বলেই প্রফেশনাল পোর্টফোলিও ছাড়া আমরা অ্যালাও করি না। ছবি পছন্দ না হলে আমাদের এখান থেকেও পোর্টফোলিও বানানো যায়। এই প্রয়োজনটা আমরা অনুভব করেছিলাম প্রথম শো করতে গিয়ে। এদেশে এমন কোনও সাইট ছিল না যেখান থেকে মডেলস, ডিজাইনার, গ্রুমার, এজেন্সির ঠিকঠাক ডেটাবেস মেলে। আসলে এরা এই পেশায় একে অপরের সঙ্গে যুক্ত, কিন্তু একটা কমন প্ল্যাটফর্ম নেই বলে কেউ পরস্পরের হদিশ পান না। আমাদের সাইট সেই কাজটা করে। ১০ বছর আগে এমনটা ছিল না। আসলে মডেলিংয়ের জগৎ এখন অনেক বেশি ওপেন। তাই ছেলেমেয়েরা অনেকেই এগিয়ে আসছে। কিন্তু তাদের সঠিক রাস্তাটা দেখাতে হবে’।

তবু মডেলিংয়ের জগতের তো নানা ভয়াবহ ঘটনাও আমাদের সামনে আসে প্রায়শই। মানসিক অবসাদ, আত্মহত্যা, মডেলিং ছেড়ে অন্য পেশায় প্রবেশ করায় বাধা- এই সব কিছুই একটা সময়ে হয়ে দাঁড়ায় কঠিন বাস্তবতা। অন-লাইন মডেলিং সংস্থা সে ব্যাপারে কতটা সাহায্য করতে পারবে? অপ্রতীমবাবুই জানাচ্ছেন, মডেলিংয়ের দুনিয়া এবং ফ্যাশন মার্কেট যেভাবে লাভের দিকে এগোচ্ছে, তাতে প্রাথমিকভাবে এই সমস্যাগুলো থাকলেও তা থেকে অচিরেই মুক্তিও মিলবে। ‘কিন্তু ওই নিজেকে জানতে হবে। আমরা তাই ওয়ার্কশপ করাই। নামীদামি লোকেরা আসেন। এখানে একটি মেয়ে বা ছেলে কাউন্সেলিং-এর মধ্যে দিয়ে বুঝতে পারে, মডেল সে আদৌ হতে চায় কিনা। বা কোন ধরনের কাজ সে করতে চায়। ফ্যাশন ডিজাইনার থেকে শুরু করে মেকআপ আর্টিস্ট, ডায়েটিশিয়ান, সাইকোলজিস্ট সবাই এখানে আসেন।

তবে পেশা যাই হোক, গ্লোবালাইজেশনের দৌলতে তাকে হাতের মুঠোয় আনতে আর কতক্ষণ? গুগলে সার্চ করলেই মিলবেই প্রচুর অন-লাইন মডেলিং সংস্থার সন্ধান, তারপরে নিজেকে জেনে-বুঝে এগোলেই র‌‌‌‌্যাম্প আসবে পায়ের তলায়।
 
Top