নিরা ষ্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে ট্রেন এখনও আসেনি। ষ্টেশন মাস্টারকে জিগেস করাই বলেছিল ট্রেন আসতে আর ২ ঘন্টা দেরি হবে । সে ২ ঘন্টা শেষ হয়েছে অনেক আগে কিন্তু ট্রেন আসার কোন চিহ্ন নাই | ভেবেছিলো আবার গিয়ে স্টেশন মাস্টারকে করা ভাষাই কিছু শোনাবো পরক্ষণে সে চিন্তা বাদ দিলো ।
avimani valobasa
ষ্টেশন মাস্টার বেটাকে তেমন সুবিধার মনে হচ্ছে না । এই ধরনের লোক গুলো সুন্দরী কাওকে দেখলে আলাপ জমাতে চায় এদের স্বভাব গুলো অনেকটা মিচকা শয়তানের মতো এই স্বভাবের লোকদের প্রশ্রয় দিতে নেই । এদের সাথে একটু হেসে কথা বললে এরা ভাব জমাতে চাইবে , অনেকটা সেস্রা স্বভাব। এই স্বভাবের লোক নিরার পছন্দের না | অসজহ্যকর পরিস্থিতি। কথা দিয়ে কথা না রাখার অভ্যাসটা নিরা একবারে সজহ্য করতে পারে না । ইদানিং এই অভ্যাসটা স্বভাবে পরিনিত হচ্ছে। অনেকটা দাই ছাড়া ভাব | নিরবের উপর রাগ্‌ হচ্ছে তার। এর মধ্যে এখন দাই ছাড়া ভাবে দেখা দিচ্ছে । নিরা চায়না স্বভাবটা অভ্যাসে পাল্‌টাক। তাই সে নিরবকে শাস্তি দিচ্ছে । সূক্ষ্ম শাস্তি , নিরবকে না বলা সে তার মার বাসায় যাচ্ছে | কয়েকদিনের জন্য । ভুর কুচকাল নিরা । নিরব বড় অপরাধ করেছে । বিবাহ বার্ষিকী ভুলা বড় অপরাধ । বড় অপরাধের জন্য বড় শাস্তি দিতে হয়। নিরা ঠিক করলো কয়েক সপ্তাহ থাকবে সে । নিরা মুচকি হাসছে । নিরাকে বাসায় না পেয়ে নীরবের চেহারার কথা ভেবে | হাসি থামাল নিরা । সে হাসতে চায় না । হাসলে রাগ্‌ কমে যায় । সে মুখ গম্ভীর করলো অভিমান নিয়ে .. অভিমানী নিরা দাড়িয়ে আছে ষ্টেশনে |

নিরবের মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ । নিজেকে এই ভুলের জন্য বোকা দেয়ার বেশ কয়েকটি পর্ব সেরেছে । নিজের উপরি রাগ হচ্ছে তার। বিবাহ বার্ষিকী ভুলা সত্যি বড় অপরাধ। সে ঠিক করেছে নিরার সামনে কান ধরে ১০বার উঠবস করবে | ১০বারে না হলে ১০০বার । নিরার বান্ধবীদের বাসায় খোঁজ নিয়েছে কথাও পাইনি । শেষ ভরসা ষ্টেশনে গিয়ে খোঁজ নিবে । সে চায় না নিরা বাপের বাড়ি যাক । বউ রাগ করে বাপের বাড়ি যাবে ভাবতে লজ্জা লাগছে তার |

ভাইজান কি কোন বিষই নিয়ে চিন্তিত ?
- হ্যাঁ
দুশ্চিন্তার বিষই হইলে বইলা ফেলেন . কাওরে কইলে দুশ্চিন্তা কমে
- বউ রাগ করে বাপের বাড়ি চলে যাচ্ছে .
কথাটা বলেই মেজাজটা খারাপ হয়য়ে গেল নিরবের। বউ বাপের বাড়ি যাচ্ছে ব্যাপারটা সুখের না , লজ্জার , লজ্জার কথা সবাইকে বলতে নেই .
রিক্সাওয়ালাটার উপর রাগ লাগছে তার। বউ চলে যাওয়ার কথা শুনে বার বার করুনার দৃষ্টি নিয়ে তাকাচ্ছে সে . বউ চলে গেলে করুনা নিয়ে তাকাতে হয় কিনা সে জানে না | নিরবের মনে হচ্ছে পৃথিবীর অসহায় ব্যাক্তিদের মধ্যে সে একজন । নিরার বান্ধবীরাও এইভাবে করুনার দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়াছে . নিরব ঠিক করলো সে তার বউকে আর বাপের বাড়ি যেতে দিবে না | ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখবে
নিরার মন খারাপ . মন খারাপের কারন সে খুঁজে পাচ্ছে না | তার খুশি হওয়ার কথা । কিছুক্ষন পর ট্রেন ছাড়বে | তবুও তার মন খারাপ , ভীষণ খারাপ । নিরবের জন্য মায়া হচ্ছে তার | বেচেরা কি চিন্তাটাই করছে | নিরা নিজের উপরি রাগ হচ্ছে | সামান্য বিবাহ বার্ষিকী ভুলার জন্য এতো বড় শাস্তি দেওয়া ঠিক হচ্ছে না | বাসায় ফিরে যেত তার লজ্জা লাগছে | হুইসেল বেজে উঠলো ট্রেনের | ট্রেন ধীরে ধীরে চলা শুরু করলো
নিরব আর নিরা স্ট্রিট লাইটের আলোই পিচ ঢালা পথে হাঁটছে | না নিরা যায়নি । ভালবাসার মানুষকে ভালবাসা যায় | শাস্তি দেওয়া যায়না | তারা ঠিক করেছে সারা রাত রাত জাগা পাখি হয়ে জ্যোছনা দেখবে |

> প্রথম বিবাহ বার্ষিকী ভালই কেটেছে | ভাবছি পরের বার দিনটির কথা ভুলে যাবো ।

নিরবের কথায় নিরা হেসে দিলো। ভালবাসার হাসি | তারা দুজন হাসছে। জ্যোছনার আলোই ভালবাসার হাসির শব্দ মিশে চারদিকে ভালবাসা ছড়াচ্ছে । দূর থেকে এই দৃশ্য আরেকজন দেখছেন | তিনি পেরেছেন ভালবাসার পবিত্র অনুভূতি সবার মাঝে পৌছাতে | রাত জাগা ভালবাসার পাখি দুটিকে দেখে স্রষ্টাও হাসছেন |
 
Top