হঠাৎ করেই আকাশে মেঘ ডেকে উঠল। এতক্ষণ খেয়ালই করেনি অনি। এখন বাহিরে তাকিয়ে দেখে গুমোট অন্ধকার হয়ে গেছে চারদিক। এবার বই থেকে মুখ তুলে অনি। রবীন্দ্রনাথের "নৌকাডুবি" উপন্যাসে এতটাই ডুবে গিয়েছিল যে অন্যদিকে সামান্য মনযোগও দিতে পারেনি। বুড়োটা অনেক ভাল লিখেছে। একেবারে নেশা ধরিয়ে দেয়।
বইটা বন্ধ করে উঠে দাড়ায় অনি। বারান্ধার দিকে এগিয়ে যায়। হঠাৎ জানালার পাশে রকিং চেয়ারের উপর বানরটাকে দেখতে পায় । অনির খুব আদরের বানর এটা। এগিয়ে গিয়ে বানরটাকে তুলে নেয়। এমন সময় আকাশে মেঘ ডেকে উঠে। ভয় পেয়ে বানরটাকে বুকে জড়িয়ে ধরে অনি। অনির গত বার্থডেতে ইভান এটা গিফট করেছিল। পাগলটা কোথা থেকে যে এই পুতুল বানরটা খুঁজে এনেছে সেই জানে। এইসব ভাবতে ভাবতে বারান্ডায় গিয়ে দাড়ায় অনি। চারদিক অন্ধকার হয়ে এসেছে। কিছুক্ষণের মাঝেই বৃষ্টি নামবে। অনি আজ তার প্রিয় রংয়ের জামা পড়ে আছে। সাদা রংয়ের জামা। সাদা রংয়ের জামা হওয়ার কারণেই হয়ত এই অন্ধকারের মাঝেও তাকে আলাদা করে দেখা যাচ্ছে । যেন আপন শুভ্রতায় প্রতিষ্ঠিত। চারদিকে বাতাস বইছে। বাতাসে অনির ওড়নার কোণাও উড়ছে।
অনিদের বাসার চারদিক জুড়ে শুধু গাছপালা। সব অনির বাবার হাতে লাগানো। কিন্তু সবগুলো গাছের মধ্যে কদমগাছটা অনির সবচেয়ে প্রিয়। ছোটবেলায় এই গাছের নিচে অনেক খেলেছে সে।
বৃষ্টিতে যখন কদম গাছটা সম্পূর্ণ ভিছে যায় তা দেখতে অনির খুব ভাল লাগে। বৃষ্টিভেজা কদমফুলগুলো দেখতে দেখতে কোথায় যেন হারিয়ে যায়। কোথায় যেন শূণ্যতা অনুভব করে অনি। ভীড়ের মাঝে থেকেও একা সে। খুব বেশী বন্ধু-বান্ধবও নেই তার। প্রায় সবসময়ই একা কাটায় সে। আর তাই সারাদিন বই পড়ে নিজের একাকীত্ব দূর করতে চেষ্টা করে। বই আর সে এই নিয়ে তার একটা আলাদা পৃথিবী। আরও একটা ব্যাপার বাদ পড়েছে। তা হল ইভান। বই আর ইভানকে ঘিরে তার অন্য একটা পৃথিবী। কিন্তু ইভান এতদিনেও অনির মনের কথাটা বুঝতে পারল না। বন্ধুত্ব দিয়ে শুরু হয়েছিল, বন্ধুত্বই রয়ে গেছে। আর অনি এতটাই আত্মকেন্দ্রিক যে নিজেও কিছু মুখ ফুটে বলতে পারেনি। কিন্তু ইভানের সাথে দুটা মূহুর্ত কাটাতে পারলে অনেক ভাল লাগে অনির। ইভানের পাগলামীগুলো দেখতে অনেক ভাল লাগে আর ভাল লাগে ইভানের কথাগুলো। কত সুন্দর করেই না কথা বলে।
ইভান অনিকে ডাকে কুয়ার ব্যাঙ। কুয়ার ব্যাঙ যেমন কুয়ার গোল মুখ দিয়ে আকাশ দেখে। পুরোটা দেখতে পারে না। অনিও নাকি তাই। শুধু বইয়ের জগতটাই দেখে গেল। বাহিরের জগতটা অদেখাই রয়ে গেল।
এসময় অনির বলতে ইচ্ছা হয়, আমি তোমাকে নিয়ে বাহিরের দুনিয়াটা দেখতে চাই। একা নয়। কিন্তু অনি বলতে পারেনা । কখনোই পারেনা।
বৃষ্টির ছাট গায়ে লাগতেই বাস্তবে ফিরে আসে অনি। বৃষ্টির জোর অনেকটাই কমে গেছে। আকাশ পরিস্কার হয়ে গেছে। বৃষ্টির মাঝে হাত বাড়িয়ে দেয় অনি। বৃষ্টির পানি তার হাত চুইয়ে পড়তে থাকে। কদমগাছটার দিকে তাকায় কদমফুলগুলো থেকেও বৃষ্টির পানি চুইয়ে পড়ছে মাটিতে।
আজ রাতে চাঁদ উঠলে ছাদ থেকে দেখতে অনেক ভাল লাগবে। বৃষ্টির পর মেঘমুক্ত আকাশে চাঁদ দেখা অন্যরকম ব্যাপার; ভাবে অনি।
সন্ধ্যার পর থেকেই অনি ছাদে। চাঁদ দেখার লোভে। এতক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে তারপর উঠল চাঁদ। বড় গোল একটা চাঁদ। কিন্তু ইভানকে মিস করতে লাগল অনি। ও পাশে থাকলে ভাল লাগত। এমন সময় বেজে উঠে মোবাইলটা। ইভানের ফোন। হাসিমুখে রিসিভ করে।
:হ্যালো
:কেমন আছ, অনি?
:ভালো। তুমি?
:আমি সবসময়ই ভাল থাকি অনি। বিধাতা আমাকে খারাপ রাখেন না।
:তাহলে বিধাতা তোমাকে অনেক পছন্দ করে দেখছি।
:হয়তবা। আচ্ছা তুমি কাল বিকেলে লেকের পাড়ে আসতে পারবে?
:কেন? কোন দরকার?
:না। এমনিই। আসবে?
:আচ্ছা আসব।
:ঠিক আছে। ভাল থেকো অনি।
ইভান ফোন রেখে দিল। অনি চাঁদের দিকেই তাকিয়ে রইল। এত দেখে তবুও কেন পুরোনো হয়না?
লেকের উত্তর দিকে বসে আছে অনি। চারদিকে ঠান্ডা বাতাস বইছে। যেকোন সময় বৃষ্টি আসতে পারে। হঠাৎ করে বৃষ্টি নেমেই পড়ল। তড়িগড়ি করে অনি একটা ছাউনির নিচে দাড়ায়। বড় ফোটায় বৃষ্টি হচ্ছে। মনটাই খারাপ হয়ে যায় অনির। এই বৃষ্টিতে তো ইভান আসতে পারবে না। কিন্তু মন খারাপ বেশীক্ষণ স্থায়ী হয় না অনির। দূর থেকে ভিজতে ভিজতে ইভানকে আসতে দেখে। ইভানকে দেখেই অনি খুশি হয়ে উঠে। কিন্তু পাগলটার বৃষ্টিতে ভিজে আসার কি দরকার ছিল? যদি জ্বর হয়।
ইভান এগিয়ে আস। অনির সামনে এসে দাঁড়ায়। ভিজে যাওয়া কিছু তাজা কদমফুল অনির হাতে তুলে দেয়। অনি হেসে কিছু বলতে যায় কিন্তু ইভান থামিয়ে দেয়।
:আগে আমাকে শেষ করতে দেও অনি।
:বল।
:ছিলাম তো সবসময়ই পাশে। তবুও বুঝতে দেওনি কেন? মনের কথাটা মুখে আন নি কেন? এতদিন এভাবে বোকা বানিয়ে রাখল।
:তুমিই বুঝতে চাওনি। কিন্তু এবার তো বুঝেছ। মনের কথাটা তুমিই মুখে বলে দেও।
:কি হবে আর কথা বলে, এখনিতো যাবে চলে;
তবে থাক, তোলা থাক না বলা কথা।
:ঠিক আছে। তোলা থাক। এসো বৃষ্টিতে ভিজি।
:চলো ভিজি।
ইভান আর অনি ভিজতে ভিজতে লেকের পারে হাঁটছে। একে অপরের হাত ধরে। পরম নির্ভরতায়।
বৃষ্টিতে পানিতে অনির মুখ ধুয়ে যাচ্ছে। সাথে চোখের অশ্রুও। আনন্দের অশ্রু। প্রাপ্তির অশ্রু।
উৎসর্গঃ গল্পের চরিত্রদ্বয়কেই। যারা বাস্তবেও বিদ্যমান। আমার চেনার মধ্যে অন্যতম সুন্দর একটা জুটি। গল্পের শেষে আমি যেমন মিলিয়ে দিয়েছি; বাকিটা জীবন আল্লাহ যেন তাদের এর চেয়েও বেশি মিলেমিশিয়ে রাখেন।
বইটা বন্ধ করে উঠে দাড়ায় অনি। বারান্ধার দিকে এগিয়ে যায়। হঠাৎ জানালার পাশে রকিং চেয়ারের উপর বানরটাকে দেখতে পায় । অনির খুব আদরের বানর এটা। এগিয়ে গিয়ে বানরটাকে তুলে নেয়। এমন সময় আকাশে মেঘ ডেকে উঠে। ভয় পেয়ে বানরটাকে বুকে জড়িয়ে ধরে অনি। অনির গত বার্থডেতে ইভান এটা গিফট করেছিল। পাগলটা কোথা থেকে যে এই পুতুল বানরটা খুঁজে এনেছে সেই জানে। এইসব ভাবতে ভাবতে বারান্ডায় গিয়ে দাড়ায় অনি। চারদিক অন্ধকার হয়ে এসেছে। কিছুক্ষণের মাঝেই বৃষ্টি নামবে। অনি আজ তার প্রিয় রংয়ের জামা পড়ে আছে। সাদা রংয়ের জামা। সাদা রংয়ের জামা হওয়ার কারণেই হয়ত এই অন্ধকারের মাঝেও তাকে আলাদা করে দেখা যাচ্ছে । যেন আপন শুভ্রতায় প্রতিষ্ঠিত। চারদিকে বাতাস বইছে। বাতাসে অনির ওড়নার কোণাও উড়ছে।
অনিদের বাসার চারদিক জুড়ে শুধু গাছপালা। সব অনির বাবার হাতে লাগানো। কিন্তু সবগুলো গাছের মধ্যে কদমগাছটা অনির সবচেয়ে প্রিয়। ছোটবেলায় এই গাছের নিচে অনেক খেলেছে সে।
বৃষ্টিতে যখন কদম গাছটা সম্পূর্ণ ভিছে যায় তা দেখতে অনির খুব ভাল লাগে। বৃষ্টিভেজা কদমফুলগুলো দেখতে দেখতে কোথায় যেন হারিয়ে যায়। কোথায় যেন শূণ্যতা অনুভব করে অনি। ভীড়ের মাঝে থেকেও একা সে। খুব বেশী বন্ধু-বান্ধবও নেই তার। প্রায় সবসময়ই একা কাটায় সে। আর তাই সারাদিন বই পড়ে নিজের একাকীত্ব দূর করতে চেষ্টা করে। বই আর সে এই নিয়ে তার একটা আলাদা পৃথিবী। আরও একটা ব্যাপার বাদ পড়েছে। তা হল ইভান। বই আর ইভানকে ঘিরে তার অন্য একটা পৃথিবী। কিন্তু ইভান এতদিনেও অনির মনের কথাটা বুঝতে পারল না। বন্ধুত্ব দিয়ে শুরু হয়েছিল, বন্ধুত্বই রয়ে গেছে। আর অনি এতটাই আত্মকেন্দ্রিক যে নিজেও কিছু মুখ ফুটে বলতে পারেনি। কিন্তু ইভানের সাথে দুটা মূহুর্ত কাটাতে পারলে অনেক ভাল লাগে অনির। ইভানের পাগলামীগুলো দেখতে অনেক ভাল লাগে আর ভাল লাগে ইভানের কথাগুলো। কত সুন্দর করেই না কথা বলে।
ইভান অনিকে ডাকে কুয়ার ব্যাঙ। কুয়ার ব্যাঙ যেমন কুয়ার গোল মুখ দিয়ে আকাশ দেখে। পুরোটা দেখতে পারে না। অনিও নাকি তাই। শুধু বইয়ের জগতটাই দেখে গেল। বাহিরের জগতটা অদেখাই রয়ে গেল।
এসময় অনির বলতে ইচ্ছা হয়, আমি তোমাকে নিয়ে বাহিরের দুনিয়াটা দেখতে চাই। একা নয়। কিন্তু অনি বলতে পারেনা । কখনোই পারেনা।
বৃষ্টির ছাট গায়ে লাগতেই বাস্তবে ফিরে আসে অনি। বৃষ্টির জোর অনেকটাই কমে গেছে। আকাশ পরিস্কার হয়ে গেছে। বৃষ্টির মাঝে হাত বাড়িয়ে দেয় অনি। বৃষ্টির পানি তার হাত চুইয়ে পড়তে থাকে। কদমগাছটার দিকে তাকায় কদমফুলগুলো থেকেও বৃষ্টির পানি চুইয়ে পড়ছে মাটিতে।
আজ রাতে চাঁদ উঠলে ছাদ থেকে দেখতে অনেক ভাল লাগবে। বৃষ্টির পর মেঘমুক্ত আকাশে চাঁদ দেখা অন্যরকম ব্যাপার; ভাবে অনি।
সন্ধ্যার পর থেকেই অনি ছাদে। চাঁদ দেখার লোভে। এতক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে তারপর উঠল চাঁদ। বড় গোল একটা চাঁদ। কিন্তু ইভানকে মিস করতে লাগল অনি। ও পাশে থাকলে ভাল লাগত। এমন সময় বেজে উঠে মোবাইলটা। ইভানের ফোন। হাসিমুখে রিসিভ করে।
:হ্যালো
:কেমন আছ, অনি?
:ভালো। তুমি?
:আমি সবসময়ই ভাল থাকি অনি। বিধাতা আমাকে খারাপ রাখেন না।
:তাহলে বিধাতা তোমাকে অনেক পছন্দ করে দেখছি।
:হয়তবা। আচ্ছা তুমি কাল বিকেলে লেকের পাড়ে আসতে পারবে?
:কেন? কোন দরকার?
:না। এমনিই। আসবে?
:আচ্ছা আসব।
:ঠিক আছে। ভাল থেকো অনি।
ইভান ফোন রেখে দিল। অনি চাঁদের দিকেই তাকিয়ে রইল। এত দেখে তবুও কেন পুরোনো হয়না?
লেকের উত্তর দিকে বসে আছে অনি। চারদিকে ঠান্ডা বাতাস বইছে। যেকোন সময় বৃষ্টি আসতে পারে। হঠাৎ করে বৃষ্টি নেমেই পড়ল। তড়িগড়ি করে অনি একটা ছাউনির নিচে দাড়ায়। বড় ফোটায় বৃষ্টি হচ্ছে। মনটাই খারাপ হয়ে যায় অনির। এই বৃষ্টিতে তো ইভান আসতে পারবে না। কিন্তু মন খারাপ বেশীক্ষণ স্থায়ী হয় না অনির। দূর থেকে ভিজতে ভিজতে ইভানকে আসতে দেখে। ইভানকে দেখেই অনি খুশি হয়ে উঠে। কিন্তু পাগলটার বৃষ্টিতে ভিজে আসার কি দরকার ছিল? যদি জ্বর হয়।
ইভান এগিয়ে আস। অনির সামনে এসে দাঁড়ায়। ভিজে যাওয়া কিছু তাজা কদমফুল অনির হাতে তুলে দেয়। অনি হেসে কিছু বলতে যায় কিন্তু ইভান থামিয়ে দেয়।
:আগে আমাকে শেষ করতে দেও অনি।
:বল।
:ছিলাম তো সবসময়ই পাশে। তবুও বুঝতে দেওনি কেন? মনের কথাটা মুখে আন নি কেন? এতদিন এভাবে বোকা বানিয়ে রাখল।
:তুমিই বুঝতে চাওনি। কিন্তু এবার তো বুঝেছ। মনের কথাটা তুমিই মুখে বলে দেও।
:কি হবে আর কথা বলে, এখনিতো যাবে চলে;
তবে থাক, তোলা থাক না বলা কথা।
:ঠিক আছে। তোলা থাক। এসো বৃষ্টিতে ভিজি।
:চলো ভিজি।
ইভান আর অনি ভিজতে ভিজতে লেকের পারে হাঁটছে। একে অপরের হাত ধরে। পরম নির্ভরতায়।
বৃষ্টিতে পানিতে অনির মুখ ধুয়ে যাচ্ছে। সাথে চোখের অশ্রুও। আনন্দের অশ্রু। প্রাপ্তির অশ্রু।
উৎসর্গঃ গল্পের চরিত্রদ্বয়কেই। যারা বাস্তবেও বিদ্যমান। আমার চেনার মধ্যে অন্যতম সুন্দর একটা জুটি। গল্পের শেষে আমি যেমন মিলিয়ে দিয়েছি; বাকিটা জীবন আল্লাহ যেন তাদের এর চেয়েও বেশি মিলেমিশিয়ে রাখেন।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন