প্রত্যেকদিন তার মিষ্টি সুরে আমার ঘুমটা ভাঙ্গে।আজ অনেক তাড়াতাড়ি ঘুমটা ভেঙ্গে দিল।তারপর হাতে এক কাপ চা ধরিয়ে বলল "শুভ জন্মদিন",আজ বিকেলে তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব।তাড়াতাড়ি বাসায় আসিও।
Love story
আজ আমার জন্মদিন অথচ আমার মনে নেই।জন্মদিনটা ভুলে যাওয়ার পিছনে একটা কারণ আছে।কারণ না থাকলে'ত কেউ নিজের জন্মদিনটা ভুলে যায় না।জন্মদিনটা ভুলার কারণটা হল 'ফারিয়া' তার সাথে ব্রেক-আপ হওয়ার পর থেকে আমি আর আমার জন্মদিনটা মনে রাখি না।ফারিয়া আর আমার জন্মদিন
ছিল একই দিনে।ফারিয়া চলে যাওয়ার সাথে সাথে আমার জীবন থেকে জন্মদিনটাও হারিয়ে যায়।

আজ আমার স্ত্রী তানিয়া শুভ জন্মদিন বলে আবার আমার জন্মদিন আর ফারিয়ার সাথে কাটানো অতীতের কথা মনে করে দিল।
ফারিয়া ছিল আমার একান্ত কাছের মানুষ।ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষার জন্য আমি একটা কোচিং-এ ভর্তি হয় আর এই কোচিং-এ তার সাথে পরিচয় হয়।কোচিং-এ বেশ কয়েকজন ভাল বন্ধু পাই তার মধ্যে ফারিয়া অন্যতম।
আমরা বন্ধু সবাই মিলে বেশ মজায় ছিলাম।সবার স্বপ্ন ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া।তাই এই লক্ষ্য ঠিক রেখে সবাই পড়ালেখায় ব্যস্ত ছিল।পড়ার ক্ষেত্রে সবাই সবাইকে সাহায্য করত।মাঝে মাঝে আমরা কোচিং ফাঁকি দিয়ে সবাই মিলে একসাথে ঘুরতে যেতাম।বেশ মজায় দিন কাটছিল।
দেখতে দেখতে ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষা চলে আসল।পরীক্ষা দিলাম।ভালই হল।
ভার্সিটিতে দেখি আমাদের বন্ধু সার্কেলের সবাই চান্স পেয়ে গেল।সবাই খুশিতে আত্মহারা।

আমি আর ফারিয়া একই ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট ছিলাম।
নতুন পরিবেশ,নতুন বন্ধু।সবার সাথে নতুন পরিচয়।আস্তে আস্তে সবার সাথে কথাবার্তা,চলাফেরা,আড্ডা বাড়তে লাগল।
ফারিয়ার সাথেও বন্ধুত্ব আরও গাঢ়ত্ত হতে লাগল।ফারিয়া ছাড়া আমি এক মুহূর্তও চলতে পারতাম না।তার সাথে প্রত্যেকদিন রাত জেগে মোবাইলে কথা বলতাম।একদিন কথা না বললে কেমন জানি লাগত।সারাদিনের কল্পনায় ছিল ফারিয়া।অবশেষে বুঝতে পারলাম ''অ্যাই এম লাভ ইন ফারিয়া" কিন্তু কোন এক অজানা কারণে থাকে আমার ভালবাসার কথা বলতে পারতাম না।

ফারিয়া আমার বেশির ভাগ এসাইনমেন্ন্ট করে দিত।সে পড়ালেখায় অনেক ভাল ছিল।তার নোট গুলো আমি কপি করে পড়তাম।
দেখতে দেখতে প্রথম বর্ষ শেষ হয়ে এল।মোটামুটি একটা ভাল রেজাল্ট করি।
দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস শুরু হল।ক্লাস শুরু হওয়ার কয়েকদিন পর অপু নামে একটি ছেলে ফারিয়াকে প্রপোজ করে।এতে মনে এক অজানা ভয়ের সৃষ্টি হয়।এই ভয় ফারিয়াকে হারানোর ভয়।তখন সিদ্ধান্ত নিলাম আমার ভালবাসার কথা ফারিয়াকে জানাব।আমি জানে সেও আমাকে ভালবাসে।কিন্তু কেউ কাউকে বলতে পারছি না।

আমার মনে যে ভয়ের সৃষ্টি হল তা অতি অল্প সময়ে অবসান ঘটল।ফারিয়া অপুকে পরিষ্কার জানিয়ে দিল তার পক্ষে অপুকে ভালবাসা সম্ভব না।এতে অপু ফারিয়াকে হুমকি দেয়।তারপরও ফারিয়া তার আগের অবস্থানে অনড়।
এই ঝামেলা কিছু দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যায়।
কয়েকদিন পর আমি ফারিয়াকে আমার ভালবাসার কথা জানায়।তাকে আমি প্রপোজ করি।ফারিয়া সে দিন কিছু না বলে শুধু আমার দিকে চেয়েছিল,আর নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিল।আমি তার চোখের পানি মুছে দেওয়ার সময় সে আমাকে জরিয়ে ধরে আর বলল আমিও তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি।
সে দিন ফারিয়ার হাত ধরে অনেকক্ষণ হাঁটলাম।হাত ধরার সময় ফারিয়া বলল,"আজীবন আমাকে এইভাবে ধরে রাখতে পারবে'ত।কোন দিন দূরে ঠেলে দিবে না'ত'' আমি থাকে বলি,"জীবন দিয়ে হলেও এই হাত মৃত্যেুর আগ পর্যন্ত ধরে রাখব"।
এই কথাটা আমাকে এখনও তাড়না দেয়।এই তাড়না কষ্টের,দুঃখের,বেদনার,হতাশার।

একটু অভিমান,রাগ,সুখ,দুঃখ নিয়ে আমাদের প্রেম বেশ ভালই চলছিল।আমরা ছিলাম ডিপার্টমেন্টের অন্যতম এক জুটি।স্যার থেকে শুরু করে ডিপার্টমেন্টের সবাই আমাদের ভালবাসার কথা জানত।
দেখতে দেখতে ভার্সিটি লাইফ শেষ হয়ে এল।আর সে সাথে আমার দুঃখের বোঝা আস্তে আস্তে ভারি হতে লাগল।
আমি ভার্সিটি থেকে একটা স্কলারশিপ পাই।আর এই স্কলারশিপটি নিয়ে দেশের বাইরে যাওয়া ছিল আমার সবচে বড় ভুল।
আর অন্যদিকে ফারিয়াকে তার বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিছে।
দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য সব কিছু ঠিক হয়ে যায়।যাওয়ার দুই দিন আগে আমি ফারিয়াকে কল করে দেখা করতে বলি।ফারিয়া আমার সাথে বিকালে দেখা করে আর এই দেখা ছিল শেষ দেখা।
আমরা দুইজন একটা রেস্টুরেন্টে যায়।তখন আমাদের বেশ কথা কাটাকাটি হয়।কিছুটা এইরূপ---

ফারিয়াঃদেখ নিলয়, বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে।বাবা অনেক সিরিয়াস।এখন আমি কি করব?প্লিজ,তুমি একটা কিছু কর।
আমিঃতুমি আমার জন্য দুই বছর অপেক্ষা কর।তুমি জান আমি একটা স্কলারশিপ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় যাচ্ছি।এর মাধ্যমে আমার ক্যারিয়ার গঠন হবে।এখন'ত আমি তেমন কিছু করি না।আর এই অবস্থায় তোমার বাবা আমার সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য রাজি হবে না।
ফারিয়াঃতাইলে তোমার কিছু করার নাই??আমার সাথে বাবা অন্য কারোর সাথে বিয়ে দিয়ে দিলে তোমার কিছু যায় আসবে না??
আমিঃকেন তুমি অন্য একজনকে বিয়ে করবে,তুমি আমার জন্য অপেক্ষা কর।আমি প্রতিষ্ঠিত হয় তারপর তোমাকে বিয়ে করব।
ফারিয়াঃতোমার জন্য এত দিন অপেক্ষা করা সম্ভব না।বাবা অনেক সিরিয়াস।ইতিমধ্যে পাত্র দেখা শুরু করেছে।যদি তুমি কিছু করতে না পার তাইলে বাবার কথায় রাজি হয়ে যেতে হবে।

আমিঃতখন আমার প্রচন্ড রাগ হয়।ঠিক আছে,তোমার যা খুশি তাই কর।
এই কথা বলার পর ফারিয়া রেস্টুরেন্ট থেকে উঠে চলে যাই।আমি নির্বাক হয়ে ফারিরা চলে যাওয়া দেখতে লাগলাম।তখন আমার কিছু করার ছিল না।আর এখন ফারিয়াকে বিয়ে করা সম্ভব না।বাসা থেকে কখনও আমাদের বিয়ে মেনে নিবে না।
দুইদিন পর আমি অস্ট্রেলিয়ায় চলে আসি।তারপর সপ্তাহখানিক তার সাথে অল্প কথা হয়।কয়েকদিন পর দেখি তার মোবাইল বন্ধ।তখন অনুমান করতে পারি,ফারিয়ার সাথে অন্য কারোর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।
একমাস পর এক বন্ধু থেকে শুনলাম ফারিয়ার আমার এক বন্ধুকে বিয়ে করে।তখন আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না।নিজের পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে আসছে।নিজেকে অনেক কষ্টে সামাল দিয়।
বিয়ের সাত মাস পর ফারিয়া আমাকে একটা চিঠি দেয়।চিঠি ছিল এইরকম---

"কেমন আছ?আশা করি আমাকে কষ্টে রেখে খুব ভাল আছ।তোমার সাথে আমার ব্রেক-আপ হয় অনেক আগে।
ব্রেক-আপ হওয়ার কারণ তুমি।কেননা তুমি বললা তোমার পক্ষে আমাকে এখন বিয়ে করা সম্ভব না।তোমার ফ্যামিলি এইটা মেনে নিবে না।তাই আমি বাবার ইচ্ছা মত বিয়ে করি।
তোমার সাথে আমার বন্ধুত্ব ছিল অনেক আগে থেকে।তারপর ভার্সিটির ২য় বর্ষের শুরুর দিকে তুমি আমাকে প্রপোজ করেছিলে।
আমি না বলতে পারিনি কেননা আমিও তোমাকে অনেক ভালবাসি।
আমাদের প্রেম বেশ ভালই চলছিল।তারপর ৩য় শুরুর শেষের দিকে আমাদের শারীরিক সম্পর্ক হয়।

তোমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করা ছিল আমার জীবনের সবচে বড় ভুল।
কিছু দিন পর বুঝতে পারি আমি প্রেগন্যান্ট হতে চলেছি।তারপর দুই জনের সিদ্ধান্ত আর ডাক্তারের পরামর্শে আমি আমার গর্ভের ভ্রুন নষ্ট করে ফেলি।
আমার জন্য ভ্রুন নষ্ট করা ছিল খুব অপরাধের কাজ।এই অপরাধমূলক কাজটা তুমি আর আমি ছাড়া আর কেউ জানত না।
আজ আমার বিয়ের সাত মাস অতিবাহিত হচ্ছে।আর আজই আমার স্বামী আমার এই অপরাধমূলক কাজটা সম্পর্কে জানতে পারে।আজ সে আমাকে নিয়ে একজন মহিলা বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়েছিল।আর তিনি বললেন আমি আর কোন দিন মা হতে পারব না।আমার স্বামী কোন দিন বাবা ডাক শুনবে না।আমি যখন ভ্রুন নষ্ট করি তখন নাকি চিরদিনের জন্য মা হওয়ার ক্ষমতা হারায়।

আর কিছু লিখতে ইচ্ছা করছে না।তোমাকে এখন প্রচন্ড ঘৃণা করি।তুমি আমার সব কিছু কেঁড়ে নিয়ে অনেক দূরে পাড়ি জমালে।আর আমাকে রেখে গেল কষ্টের সাগরে।
বেশ ভাল থেক।বিদায় নিলাম চিরতরে"।
এই চিঠিটা পড়ার পর আমি স্তব্ধ হয়ে যায়।তাকে কিছু বলার ভাষা খুঁজে পেলাম না।আজ নিজেকে নিজে ধিক দিছি।কেন আমি এত বড় অপরাধ করতে গেলাম।নিজের জীবনকে কেন এই ভাবে শেষ করলাম।ক্যারিয়ার গঠন করতে গিয়ে নিজ হাতে হত্যা করলাম আমার ভালবাসাকে।
পিছন দিক থেকে আমার স্ত্রী তানিয়া ডাক দিল,এই কিছু বললানা যে?কি ভাবছ এত?

না,কিছু ভাবছি না।তুমি যেখানে যেত চাও ঐখানে নিয়ে যাব।
জীবনটা দীর্ঘশ্বাসে ভরপুর
 
Top