চোখ খুলে রাতের আকাশটার দিকে তাকালাম । ওইতো ছোট্ট তারা । এই তারাকে আমার আজ অন্য রকম ভাল লাগছে ।
যতই দিন যাচ্ছে বুঝতে পারছি রাইসাকে আমি অসম্ভব ভালবাসি । সে বাসে কিনা বুঝতে পারছি না । মেয়েদের মন বোঝা বড়ই কঠিন । আর কিছুদিন পর পহেলা বৈশাখ । ঠিক করলাম রাইসাকে ওইদিন প্রপোজ করব । যা হবে হোক, আল্লাহ ভরসা ।
পহেলা বৈশাখের আগের দিন । জান্নাতকে কল দিলাম ।
__ জান্নাত, কালতো সেই দিন । আমার ভয় করছে ।
__ টেনশন নিস না । আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কে আমি চিনি । তুই গ্রীন সিগনালই পাবি । আর যদি রেড সিগনাল পাস তাইলে আমিতো আছি নাকি? কালই তোকে বিয়ে করে নিব ।
__ হারামি কুফা লাগাস না ।
__ আচ্ছা লাগালাম না । অল দ্য বেস্ট ।
আজ পহেলা বৈশাখ । রাইসাকে টিএসসি তে ডাকলাম । সে আসলো । হালকা নীল শাড়িতে তাকে চমত্কার লাগছে ।
লাল গোলাপ নয়, একটা চকোলেট দিয়ে ফিলমি স্টাইলে প্রপোজ করলাম । সে টোল পড়া হাসি দিয়ে চকোলেট টা নিল । গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে গেছি ।
তারপর ভালবাসায় কেটে গেল দুটি বছর । খুব সুন্দর কেটেছে দিনগুলি । রাইসা আমাকে অসম্ভব ভালবাসে, আর আমি রাইসাকে ।
-----------------
এগার বছর পর
"আব্বু উঠ । এত দেরি করে উঠলে হবে?"
__ হু বাবা, আরেকটু ঘুমাই ।
__ না । এখন না উঠলে আমি কিন্তু আম্মুকে ডাক দিব ।
আমি ধরাস করে উঠে গেলাম ।
__ মাথা খারাপ তোর । তুই কি চাস সকালে উঠেই তোর মার চিল্লাফাল্লা শুনি?
__ হিহি । তাহলে উঠ । একসাথে খাব...
তারপর আবির দৌড়ে চলে গেল । আমি বিছানা থেকে উঠলাম । ছেলেটা যা হয়েছে না! পুরাই মায়ের মত দুষ্টু । সকালে আবার আমাকে ছাড়া খাবে না ।
আমি হাতমুখ ধুয়ে নাস্তার টেবিলে গেলাম ।
__ মামুন, বিকালে আমি আর আবির ওর নানীর বাসায় যাব । বেশি রাত হলে খেয়ে নিও ।
__ বাবা তুমিও চল আমাদের সাথে ?
__ থাক বাবা । আমি বাসায় থাকি । আজকে অন্তত স্টার প্লাস থেকে মুক্তি পাব ।
ছেলে হাসা শুরু করল, ওর মা আমার উপর অগ্নিদৃষ্টি ধারণ করল । আর আমি নাস্তার দিকে মনোযোগ দিলাম ।
সন্ধ্যায় আমার অফিসের ফাইলগুলা ঘুচাচ্ছিলাম । তখন আমি আলমারিতে একটা ডায়েরী পেলাম । ডায়েরীটা রাইসার । পড়া শুরু করলাম ।
১৬/৫/২০১৬
আজ আমি যা লিখছি কেন লিখছি জানি না । আমার কষ্ট থেকেই লিখছি । আজ আমার কষ্টের দিন । আজ তোমার সাথে আমার ব্রেক আপ হয়ে গেল । ইচ্ছা করেই করেছি । জানি তোমার কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু আমিতো জলে পুড়ে মরছি । তুমি আমাকে অনেক ভালবাস তাই তোমাকে এর চেয়ে বেশি কষ্ট কি করে দিই বল ? কারণ আমিও তোমাকে ভালবাসি ।
ডাক্তার বলেছে আমি বড়জোড় এক, দুই বছর বাঁচব । ব্লাড ক্যান্সার । আয়ুটা আরো কম হল না কেন ? এক, দুই বছর তোমাকে ছাড়া কি করে বাঁচব ? আমি জানি তুমি আমাকে ঘৃণা কর । আজ তোমার সাথে কত খারাপ খারাপ কথা বলেছি । প্লিজ আমাকে মাফ করে দিও । নাহলে যে মরে গেলেও শান্তি পাব না ।
মেঘের ভাজে কষ্টগুলো বৃষ্টি হয়ে ঝরেছিল আজ । সারাদিন ভিজেছি । আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি । ভাললাগা, ভালবাসা অতঃপর যে শুধুই ভালবাসা ।
১১/১১/১৬
আজ তোমার বিয়ে । খুব শখ ছিল তোমার বউ হবো । লাল টুকটুকে একটা শাড়ি পড়ব, তুমি আর আমি নিজেদের বিয়ের বাজার করব । কিন্তু তা আর হল না ।
ভেবেছিলাম তোমার বিয়েতে যাব । কিন্তু তুমি তখন আমাকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখবে । তখন আমার কষ্ট হবে । আজ আমি কেঁদেছি খুব কেঁদেছি ।
মেঘ পরীকে খুব কিউট লাগছে তাই না ? মেঘ পরীকে অনেক দেখতে ইচ্ছে করছে । লাল শাড়িতে কতই না সুন্দর লাগছে আমার গাধীকে ! বিয়েতে আসার জন্য অনেকবার ডেকেছে জান্নাত । রাগ করেছে আমার উপর, যায়নি তাই । জান্নাত, তুইতো সব জানিস । প্লিজ মাফ করে দে ।
তোদের জীবন অনেক সুন্দর হোক । ভালবাসায় কাটুক তোদের দিনগুলি । রাতের আকাশের ছোট্ট তারা হয়ে আমি তোদের খুনসুটি ভালবাসা দেখব আর মিটিমিটি হাসব ।
ডায়েরীটা বন্ধ করে আমি ছাদে গেলাম । কি সুন্দর পরিবেশ । জোছনার আলো , প্রশান্তির বাতাস চারিদিকে । অনেক দিন পর আজ আমি কাঁদছি । শেষবার কেঁদেছিলাম রাইসা যখন আমাকে ছেড়ে চলে যায় । সেইদিন নিঝুম বৃষ্টিতে আমিও ভিজেছিলাম ।
রাইসা, আমি তোমাকে কখনোই ঘৃণা করি নি । পাগলি তুই । তোকে ঘৃণা করলে তো আমি বাঁচতাম না ।
__ মামুন, তুমি কি আমার উপর রাগ করেছ ? রাইসা কিছু বলতে মানা করেছিল ।
চোখ মুছে পিছনে ঘুরে দেখলাম জান্নাত এসেছে ।
__ তুমি কখন এলে?
__ একটু আগে । বিছানায় রাইসার ডায়েরী দেখলাম । বাসায় তোমাকে পেলাম না । তাই ভাবলাম ছাদে আছ ।
__ হ্যাঁ ডায়েরীটা পড়ে মন খারাপ হয়ে গেছিল তাই ছাদে এলাম ।
জান্নাত আমার হাত ধরে বলল,
__ প্লিজ সোনা, মন খারাপ করো না । আমি কিন্তু কেদে দিব ।-- এ বলেই জান্নাত কান্না শুরু করল ।
আমি জান্নাতকে কাছে টেনে তার মায়া ভরা চোখের অশ্রু মুছে বললাম, "আরে গাধী, কান্নার কিছু নাই । তুই আমার মেঘ পরী । পরীরা কখনো কাঁদে নাকি ! আমি তোমাকেই ভালবাসি, অনেক ভালবাসি ।" জান্নাত আমার বুকে মাথা রেখে বলল, "আমিও তোমাকে অনেক ভালবাসি ।"
শত তারার মাঝে ছোট্ট একটি তারার দিকে হাত বাড়িয়ে জান্নাতকে বললাম, " দেখ দেখ আমাদের দেখে তারাটি মিটিমিটি হাসছে ।"
জোছনার অল্প আলোতে আমরা দুজন ছোট্ট সেই তারার দিকে তাকিয়ে আছি । আমাদের দেখে তারাটি কি হাসিটাই হাসছে আজ !
যতই দিন যাচ্ছে বুঝতে পারছি রাইসাকে আমি অসম্ভব ভালবাসি । সে বাসে কিনা বুঝতে পারছি না । মেয়েদের মন বোঝা বড়ই কঠিন । আর কিছুদিন পর পহেলা বৈশাখ । ঠিক করলাম রাইসাকে ওইদিন প্রপোজ করব । যা হবে হোক, আল্লাহ ভরসা ।
পহেলা বৈশাখের আগের দিন । জান্নাতকে কল দিলাম ।
__ জান্নাত, কালতো সেই দিন । আমার ভয় করছে ।
__ টেনশন নিস না । আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কে আমি চিনি । তুই গ্রীন সিগনালই পাবি । আর যদি রেড সিগনাল পাস তাইলে আমিতো আছি নাকি? কালই তোকে বিয়ে করে নিব ।
__ হারামি কুফা লাগাস না ।
__ আচ্ছা লাগালাম না । অল দ্য বেস্ট ।
আজ পহেলা বৈশাখ । রাইসাকে টিএসসি তে ডাকলাম । সে আসলো । হালকা নীল শাড়িতে তাকে চমত্কার লাগছে ।
লাল গোলাপ নয়, একটা চকোলেট দিয়ে ফিলমি স্টাইলে প্রপোজ করলাম । সে টোল পড়া হাসি দিয়ে চকোলেট টা নিল । গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে গেছি ।
তারপর ভালবাসায় কেটে গেল দুটি বছর । খুব সুন্দর কেটেছে দিনগুলি । রাইসা আমাকে অসম্ভব ভালবাসে, আর আমি রাইসাকে ।
-----------------
এগার বছর পর
"আব্বু উঠ । এত দেরি করে উঠলে হবে?"
__ হু বাবা, আরেকটু ঘুমাই ।
__ না । এখন না উঠলে আমি কিন্তু আম্মুকে ডাক দিব ।
আমি ধরাস করে উঠে গেলাম ।
__ মাথা খারাপ তোর । তুই কি চাস সকালে উঠেই তোর মার চিল্লাফাল্লা শুনি?
__ হিহি । তাহলে উঠ । একসাথে খাব...
তারপর আবির দৌড়ে চলে গেল । আমি বিছানা থেকে উঠলাম । ছেলেটা যা হয়েছে না! পুরাই মায়ের মত দুষ্টু । সকালে আবার আমাকে ছাড়া খাবে না ।
আমি হাতমুখ ধুয়ে নাস্তার টেবিলে গেলাম ।
__ মামুন, বিকালে আমি আর আবির ওর নানীর বাসায় যাব । বেশি রাত হলে খেয়ে নিও ।
__ বাবা তুমিও চল আমাদের সাথে ?
__ থাক বাবা । আমি বাসায় থাকি । আজকে অন্তত স্টার প্লাস থেকে মুক্তি পাব ।
ছেলে হাসা শুরু করল, ওর মা আমার উপর অগ্নিদৃষ্টি ধারণ করল । আর আমি নাস্তার দিকে মনোযোগ দিলাম ।
সন্ধ্যায় আমার অফিসের ফাইলগুলা ঘুচাচ্ছিলাম । তখন আমি আলমারিতে একটা ডায়েরী পেলাম । ডায়েরীটা রাইসার । পড়া শুরু করলাম ।
১৬/৫/২০১৬
আজ আমি যা লিখছি কেন লিখছি জানি না । আমার কষ্ট থেকেই লিখছি । আজ আমার কষ্টের দিন । আজ তোমার সাথে আমার ব্রেক আপ হয়ে গেল । ইচ্ছা করেই করেছি । জানি তোমার কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু আমিতো জলে পুড়ে মরছি । তুমি আমাকে অনেক ভালবাস তাই তোমাকে এর চেয়ে বেশি কষ্ট কি করে দিই বল ? কারণ আমিও তোমাকে ভালবাসি ।
ডাক্তার বলেছে আমি বড়জোড় এক, দুই বছর বাঁচব । ব্লাড ক্যান্সার । আয়ুটা আরো কম হল না কেন ? এক, দুই বছর তোমাকে ছাড়া কি করে বাঁচব ? আমি জানি তুমি আমাকে ঘৃণা কর । আজ তোমার সাথে কত খারাপ খারাপ কথা বলেছি । প্লিজ আমাকে মাফ করে দিও । নাহলে যে মরে গেলেও শান্তি পাব না ।
মেঘের ভাজে কষ্টগুলো বৃষ্টি হয়ে ঝরেছিল আজ । সারাদিন ভিজেছি । আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি । ভাললাগা, ভালবাসা অতঃপর যে শুধুই ভালবাসা ।
১১/১১/১৬
আজ তোমার বিয়ে । খুব শখ ছিল তোমার বউ হবো । লাল টুকটুকে একটা শাড়ি পড়ব, তুমি আর আমি নিজেদের বিয়ের বাজার করব । কিন্তু তা আর হল না ।
ভেবেছিলাম তোমার বিয়েতে যাব । কিন্তু তুমি তখন আমাকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখবে । তখন আমার কষ্ট হবে । আজ আমি কেঁদেছি খুব কেঁদেছি ।
মেঘ পরীকে খুব কিউট লাগছে তাই না ? মেঘ পরীকে অনেক দেখতে ইচ্ছে করছে । লাল শাড়িতে কতই না সুন্দর লাগছে আমার গাধীকে ! বিয়েতে আসার জন্য অনেকবার ডেকেছে জান্নাত । রাগ করেছে আমার উপর, যায়নি তাই । জান্নাত, তুইতো সব জানিস । প্লিজ মাফ করে দে ।
তোদের জীবন অনেক সুন্দর হোক । ভালবাসায় কাটুক তোদের দিনগুলি । রাতের আকাশের ছোট্ট তারা হয়ে আমি তোদের খুনসুটি ভালবাসা দেখব আর মিটিমিটি হাসব ।
ডায়েরীটা বন্ধ করে আমি ছাদে গেলাম । কি সুন্দর পরিবেশ । জোছনার আলো , প্রশান্তির বাতাস চারিদিকে । অনেক দিন পর আজ আমি কাঁদছি । শেষবার কেঁদেছিলাম রাইসা যখন আমাকে ছেড়ে চলে যায় । সেইদিন নিঝুম বৃষ্টিতে আমিও ভিজেছিলাম ।
রাইসা, আমি তোমাকে কখনোই ঘৃণা করি নি । পাগলি তুই । তোকে ঘৃণা করলে তো আমি বাঁচতাম না ।
__ মামুন, তুমি কি আমার উপর রাগ করেছ ? রাইসা কিছু বলতে মানা করেছিল ।
চোখ মুছে পিছনে ঘুরে দেখলাম জান্নাত এসেছে ।
__ তুমি কখন এলে?
__ একটু আগে । বিছানায় রাইসার ডায়েরী দেখলাম । বাসায় তোমাকে পেলাম না । তাই ভাবলাম ছাদে আছ ।
__ হ্যাঁ ডায়েরীটা পড়ে মন খারাপ হয়ে গেছিল তাই ছাদে এলাম ।
জান্নাত আমার হাত ধরে বলল,
__ প্লিজ সোনা, মন খারাপ করো না । আমি কিন্তু কেদে দিব ।-- এ বলেই জান্নাত কান্না শুরু করল ।
আমি জান্নাতকে কাছে টেনে তার মায়া ভরা চোখের অশ্রু মুছে বললাম, "আরে গাধী, কান্নার কিছু নাই । তুই আমার মেঘ পরী । পরীরা কখনো কাঁদে নাকি ! আমি তোমাকেই ভালবাসি, অনেক ভালবাসি ।" জান্নাত আমার বুকে মাথা রেখে বলল, "আমিও তোমাকে অনেক ভালবাসি ।"
শত তারার মাঝে ছোট্ট একটি তারার দিকে হাত বাড়িয়ে জান্নাতকে বললাম, " দেখ দেখ আমাদের দেখে তারাটি মিটিমিটি হাসছে ।"
জোছনার অল্প আলোতে আমরা দুজন ছোট্ট সেই তারার দিকে তাকিয়ে আছি । আমাদের দেখে তারাটি কি হাসিটাই হাসছে আজ !
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন