শুভ আর রীমা দুই ভাই বোন। রীমা এক বছর আগে ডাক্তারি পাশ করেছে। আর শুভ এইচ,এস,সি ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। কিছুদিন পরে রীমার বিয়ে। রীমা যে শুভর থেকে এত্ত বড় তা ওকে দেখে বোঝা যায় না। রীমাকে দেখে মনে হয় যেন কলেজ ইউনিভার্সিটিতে পড়া এক তরুণী। আর সব ভাই বোনের মত ওদেরও মারা মারি হয়। মাঝে মাঝে তো রক্তা রক্তি কাণ্ড করে বসে। এই যেমন আজ সকালে ছুটির দিনে টিভির রিমোট নিয়ে দুইজনে সে কি মারামারি!
kacer curi
শুভর ঠোট কেটে গেছে মার খেয়ে আর রিমার কপালে যেন ছোট্ট একটা গোল আলু ফুলে উঠেছে। মারা মারির এক পর্যায়ে ওদের মা অদের এসে থামায় আর যার যার রুমে পাঠিয়ে দেয়।
ওদের মারামারিটা এমনি হয়। আবার কিছুক্ষণ পর দেখা গেল রীমা শুভর রুমে যেয়ে ওর ঠোটে স্যাভলন লাগিয়ে দিচ্ছে। শুভ প্রথমে একটু আইগুই করলেও পরে ঠিক হয়ে যায়।

ওদের মা আড়াল থেকে ওদের কাজ দেখে খুশিতে তার চোখে পানি চলে আসে। শুধু যে রীমায় শুভকে আদর তা না শুভও রীমাকে খুব ভালোবাসে; কিন্তু ও সেটা প্রকাশ করে না। একদিন রীমার খুব জ্বর। রাতে ওষুধ খেয়েও কমেনি। রাতে রীমার মার ঘুম ভাঙ্গলে রীমার ঘরে উকি দিলে দেখে শুভ রীমার মাথায় পানি পট্টি দিচ্ছে।
রীমা প্রত্যেক মাসে শুভকে কিছু না কিছু কিনে দেয়। শুভর এস,এস,সি র রেজাল্ট হবার পর রীমা ওকে একটা মোবাইল ফোন কিনে দিয়েছে।
ওদের ভাইবোনের সম্পর্ক যে শুধুই মিষ্টি তা না... এতে টক,ঝাল সবই আছে। এই পহেলা বৈশাখে রিমা শুভকে একটা সুন্দর পাঞ্জাবি কিনে দেয় আর শুভ বোনের জন্য নানা রঙের একসেট কঁচের চুড়ি কিনে দেয়... কিন্তু ও সেটা সরাসরি রীমাকে না দিয়ে ওর ওয়ারড্রবে অথবা ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে ঢুকিয়ে রাখে।
একবার রীমা আর শুভ মার্কেটে গেছে। মার্কেটে শুভর এক বন্ধুর সাথে দেখা। ওদের দেখেই বলল, “আরে দোস্ত তা কী ব্যাপার? কবে থেকে প্রেম করছ?”
বলে রীমার দিকে ইঙ্গিত করে বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হাসল।
রীমা তখন ওর দিকে তাকিয়ে বলল, “ওর জন্ম থেকে। তা ভাইয়া তুমি কোন ক্লাসে পড়?”
- মানে?
- মানে আমার সাথে ও জন্ম থেকে প্রেম করছে। তা তুমি কী ওর ক্লাসমেট?
- জী মানে হ্যাঁ। কেন?

“আবে গাধু, এইটা আমার বড় বোন। গরু কোথাকার!” বলে উঠল শুভ। আর রীমা গলা খুলে হেসে উঠল। আশেপাশের মানুষজন ওর দিএক তাকাচ্ছে। শুভরে বন্ধু আমতা আমতা করতে করতে চলে গেলো। আর দুই ভাই বোনের সে কী হাসি!
রীমার বিয়ের আগের দিন রাতে অর্থাৎ হলুদ সন্ধ্যার দিন রাতে শুভ রীমার রুমে এলো। ওর হাতে রঙ্গিন চিকমিকি কাগজে মোড়ানো একটা ছোট্ট প্যাকেট।
প্যাকেটটা রীমার সামনে এনে বলল, “এটা তোর গিফট। বিয়ের গিফট।”
- গিফট? কী এতে?
- হ্যাঁ আজ সরাসরি দিলাম। খুলে দেখ।
রীমা প্যাকেটটা খুলে দেখল তাতে একটা সুন্দর নকশা করা বাক্স। আর বাক্সের মাঝে অনেক গুলো লাল টুকটুকে কাঁচের চুড়ি।
“কী সুন্দর!”বলে রীমা ড্রেসিং টেবিলের কাছে যেয়ে চুড়ি গুলো পরতে লাগল। চুড়ি গুলো পড়ে আয়নার ভেতর দিয়ে শুভর দিকে তাকিয়ে বলল, “কেমন লাগছে রে?”
- পেত্নীর মত।
- যাহ, বদ... আচ্ছা শোন আমি শ্বশুর বাড়ি চলে গেলে তোর খারাপ লাগবে না?
শুভ রীমার দিকে না তাকিয়ে বলল...
- ও মা খারাপ লাগবে কেন? তুই বিদায় হলেইতো বাঁচি। আর তোর রুমটাতো তখন আমারই হবে। উফ!! কী যে আরাম হবে।
- যাহ, শয়তান
- ঘুমা, আজ বাপের বাড়িতে শেষ ঘুম। ঘুমা
বলে শুভ চলে যাচ্ছিল। রীমা ওকে পিছ থেকে ডেকে বলল, “ এই শুভ শোন...”
- আবার কী হলো?
- কাছে আয়।
শুভ কাছে গেলে রীমা ওকে ধরে মেঝেতে বসাল বলল, “কতো দিন আমি তোকে আদর করিনি বলতো? আমার শুভ সোনা” বলে রীমা শুভর চুলে হাত বুলাতে থাকে।
- আমি চলে গেলে তুই সত্যি মন খারাপ করবি না তো?
- জানি না...
- আহা বল না...

শুভ রীমার দিকে ঘুরে বলল, “তুই চলে গেলে আমার খুব খারাপ লাগবে রে আপু... আমি তখন কার সাথে মারামারি করব আর কে আমাকে সুন্দর সুন্দর টি শার্ট কিনে দিবে? কে আমাকে তোর মত আদর করবে?” এই বলে শুভ ভেউ ভেউ করে কাঁদতে লাগ্ল।
শুভর কান্না দেখে রীমারও চোখ ভিজে উঠল। ও বলল, “ আরে পাগল আমি কী একে বারে চলে যাচ্ছি? আমিতো আস্তেই থাকব। ছি কাঁদে না। ওই কান্না থামা নাইলে আমি কাতু কুতু দিব। হাস বলছি হাস...”
শুভ চোখের পানি মুছে রীমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, “যাহ তোর বিদায়ের কান্না কেঁদে নিলাম। কাল আর কাঁদব না।”

রীমা বেনারসি সাড়ি পরে বউ সেজে বসে আছে, অকে দেখতে একেবারে পরীর মত লাগছে। বরের বাড়ির লোকজন আর রীমাদের আত্মীয় স্বজন চলে এসেছে। আর সবাই রীমাকে অবাক হয়ে দেখছে। সোনার আলংকারে সেজেছে রীমা কিন্তু শুধু দুই হাত ভর্তি লাল টুকটুকে কাঁচের চুড়ি। ভাইয়ের দেয়া সেই লাল কাঁচের চুড়ি।
 
Top