কাঁধে গরম পাতলা কি জানো পড়ল।ড্যাম।কাকের বাচ্চা কাক।কাউয়া।আর টাইম পাইলি না।বিড়বিড় করে কিছুক্ষন গালাগালি পাড়ল রেজা।শাদা শার্টের কাধের জায়গাটায় অলরেডি সুন্দর একটা আলপনা তৈরি হয়ে গেছে।এখন আর বাসায় গিয়ে চেঞ্জ করার সময় নাই।চেঞ্জ করতে গেলে চাকরীর ইন্টারভিওটা মিস
হয়ে যাবে।এতদিন গ্রাহ্য না করলেও এখন এই চাকরীটা পাওয়ার উপরই নির্ভর করছে ওর সাথে লিনার বিয়ের ব্যাপারটা।আপাতত একটা টিস্যু দিয়ে কাকের ছোঁড়া মিসাইলের ব্যাপারটা সমাধান করল রেজা।
প্রায় ২ ঘন্টা যাবত বসে আছে রেজা ওয়েটিং রুমে।চেয়ারগুলা আরামদায়ক,ঘুম চলে আসছে।গত মাসের ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে ঘুমিয়েই পড়েছিল রেজা,ঘুম থেকে জেগে দেখে তার চাকরী আরেকজন নিয়ে চলে গেছে।নাহ এসব বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোতে এসির নিচে বসে কেমনে চাকরী করবে তা নিয়ে যখন ভাবছে তখনই ওর ডাক পড়ল।
-স্যার আসবো? রেজা হাসিমুখে জিজ্ঞেস করে।
-আসতে তো হবেই,বাতচিত না করলে চাকরী দিব কিভাবে?
বয়স্ক একজন বলল।রেজা ঢুকেই বসে পড়ল।অনুমতি নেওয়ার কথা বেমালুম ভুলে গেছে।৩ জন।রেজা হিসেব করছে।বয়স্ক,টাকলু,গোফওয়ালা।
-কি নাম? টাকলু জিজ্ঞেস করল।
-কার নাম স্যার?
-কার নাম মানে?
-মানে স্যার আমার না বাবার?
-কার নাম মানে?ফাইজলামী কর?আর চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে এসেছ,শার্টের কাঁধে ময়লা কেন?
-স্যার ময়লা না স্যার,কাকের বিষ্ঠা,কাকটা খুব বজ্জাত,আমাকে দেখলেই...।।
-আরে?চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে এসেছ নাকি মামাদের সাথে খেজুরে আলাপ পাড়তে এসেছ?
-স্যার চাকরীর জন্য।আসলে স্যার চাকরীটা আমার লাগতো না,শুধু লিনার
বিয়ে হয়ে যাচ্ছে,এইটা সেফটি ফ্যাক্টর।নাহলে লীনাকে আরেক জায়গায় বিয়ে দিয়ে দিবে।
আজ লিনার বিয়ে।লিনার পরিবার লিনাকে আরেক জায়গায় বিয়ে দিচ্ছে।রেজা কল্পনা করছে লিনাকে বিয়ের সাজে কেমন লাগতে পারে।টিশার্ট টা মাথায় গলিয়েই বেড়িয়ে পড়ল রেজা।রাস্তায় বের হতেই সেই গরম পদার্থ।রেজা হাসলো কিছুক্ষন,উপরের দিকে তাকিয়ে বলল,নাইস শট,আজ পুরা মাথার মাঝখানে ফেলতে পারছিস।রেজা একটা টিস্যুপেপার দিয়ে মাথাটা মুছতে মুছতে একটা রিকশা ডাকলো।রিকশা মামাকে বলল মগবাজারের দিকে যেতে।মাথার উপর তপ্ত রোদ,রেজা ভাবছে,লিনার বিয়ে আজ।গত ৬ টা বছর দুজন দুজনকে আগলে রেখেছিল।শেষ চাকরীর ইন্টারভিউতে চাকরিটা হলো না।যেই লোক পাখির হাগু সদৃশ শার্ট পড়ে ইন্টারভিউতে আসে তাকে নিয়ে কোম্পানির লোকজনের ভরসা করা মানায় না।রেজার জীবনটাই হয়ে গেছে ভরসাহীন।লিনাকে বলতেই ফোনের ওপাশ থেকে লিনার কান্না,রেজাকে অপদার্থ,বেয়াক্কেল,কতকিছু বলে ফোনটা রেখে দেয় লিনা।ঠিকই তো,পাশ করার ২ বছরেও একতা চাকরী জোগাড় করতে পারলো না রেজা,কোন হিসেবে লিনা আর অপেক্ষা করবে।রেজা শুনেছে লিনাকে যে বিয়ে করবে সে নাকি আমেরিকা থেকে পিএইচডি করা ইঞ্জিনিয়ার,বিশাল বেতনে চাকরী করে।লিনা কেন রেজার মত ভবঘুরে কে বিয়ে করবে।রেজা ভাবতে থাকে,তপ্ত রোদে ঝিমিয়ে আসে চারিপাশ।
-এই তোমার আসা,আমি কতক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে আছি।উফফ তুমি কি মানুষ হবা না।আর কি পড়ে আসছো তুমি এটা।তুমি কি জীবনে আর বিয়ে করতে পারবা?তোমাকে নিয়ে আর পারি না।মাথায় কি?আজও তোমার কাউয়া তোমার সাথে টার্গেট প্র্যাকটিস করছে।চল,মানুষজন তাকিয়ে আছে।আচ্ছা বলতো বিয়ের সাজে একতা মেয়ে আর টিশার্ট পড়া একটা ছেলে দাঁড়িয়ে কথা বলছে,মানুষ কি ভাবছে।চল...এক নিশ্বাসে লিনা কথাগুলো বলে গেল রেজাকে।
-হুম চলো। রেজা আকাশের দিকে তাকায়,আরো রোদ চাই,পৃথিবী আজ আলোর বন্যায় ভেসে যাক।কাজি অফিসের দিকে পা বাড়ায় রেজা।
নাহ,ভালোবাসাটা ব্বৃথা যায় নাই।বিয়ের আসর থেকে যে মেয়ে পালিয়ে আসতে পারে ওর মত একটা অলস কর্মহীনের জন্য, সে মেয়ের ভালোবাসার কাছে নিজেকে তুচ্ছ মনে হতে থাকে রেজার।বাকী জীবন এই মেয়ে কঠিন বাঁধনে বেধে রাখবে দুজনকে।কারণ এটাই যে শিরোনামহীন ভালবাসা।
৮ বছর পর...
রেজা বসে আছে এসি দেয়া একটা রুমে,সাথে তার দুই ম্যানেজার।ইন্টারভিউ নিচ্ছে চাকরীর।
হতদন্ত হয়ে একটা ছেলে প্রবেশ করলো রুমে,
-স্যার আসবো?
-এসেই তো পড়েছ।। রেজা দেখল ছেলেটার শাদা শার্টের কাঁধের কাছটায় পাখির মুত্রের দাগ...
-কি নাম?
-স্যার কার নাম?
-কার নাম মানে?
-মানে স্যার আমার না বাবার?
-কার নাম মানে?ফাইজলামী কর?আর চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে এসেছ,শার্টের কাঁধে ময়লা কেন?
-স্যার ময়লা না স্যার,কাকের বিষ্ঠা,কাকটা খুব বজ্জাত,আমাকে দেখলেই...।।
-আরে?চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে এসেছ নাকি মামাদের সাথে খেজুরে আলাপ পারতে এসেছ?
-স্যার চাকরীর জন্য।আসলে স্যার চাকরীটা আমার লাগতো না,শুধু অহনার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে,এইটা সেফটি ফ্যাক্টর।।নাহলে ওকে আরেক জায়গায় বিয়ে দিয়ে দিবে।
-তারপর?লিনা জিজ্ঞেস করল।চাকরীটা দিলে?
-হুম,চিন্তা করলাম ওকে চাকরীটা না দিলে হয়ত ওর মনের মানুষকে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে আসতে হতো তোমার মত।ভুলে গেছ সেই দিনগুলার কথা।কি স্ট্রাগলটাই না করেছিলাম আমরা।
-হুম,দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল লিনা।ভালো করেছ।নাও কফি ঠান্ডা হয়ে গেল তো।বারান্দায় যা বাতাস।
খুব দূরে একটা তারা মিটমিট করে জ্বলছিল।রেজা লিনার কথোপকথন চলতে থাকে মাঝরাত অবধি যতক্ষন তারাটা থাকে।ওরা ঘুমিয়ে গেলে তারাটাও ঘুমিয়ে যায়,আরেকটা নতুন ভোরকে আহবান করতে
হয়ে যাবে।এতদিন গ্রাহ্য না করলেও এখন এই চাকরীটা পাওয়ার উপরই নির্ভর করছে ওর সাথে লিনার বিয়ের ব্যাপারটা।আপাতত একটা টিস্যু দিয়ে কাকের ছোঁড়া মিসাইলের ব্যাপারটা সমাধান করল রেজা।
প্রায় ২ ঘন্টা যাবত বসে আছে রেজা ওয়েটিং রুমে।চেয়ারগুলা আরামদায়ক,ঘুম চলে আসছে।গত মাসের ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে ঘুমিয়েই পড়েছিল রেজা,ঘুম থেকে জেগে দেখে তার চাকরী আরেকজন নিয়ে চলে গেছে।নাহ এসব বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোতে এসির নিচে বসে কেমনে চাকরী করবে তা নিয়ে যখন ভাবছে তখনই ওর ডাক পড়ল।
-স্যার আসবো? রেজা হাসিমুখে জিজ্ঞেস করে।
-আসতে তো হবেই,বাতচিত না করলে চাকরী দিব কিভাবে?
বয়স্ক একজন বলল।রেজা ঢুকেই বসে পড়ল।অনুমতি নেওয়ার কথা বেমালুম ভুলে গেছে।৩ জন।রেজা হিসেব করছে।বয়স্ক,টাকলু,গোফওয়ালা।
-কি নাম? টাকলু জিজ্ঞেস করল।
-কার নাম স্যার?
-কার নাম মানে?
-মানে স্যার আমার না বাবার?
-কার নাম মানে?ফাইজলামী কর?আর চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে এসেছ,শার্টের কাঁধে ময়লা কেন?
-স্যার ময়লা না স্যার,কাকের বিষ্ঠা,কাকটা খুব বজ্জাত,আমাকে দেখলেই...।।
-আরে?চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে এসেছ নাকি মামাদের সাথে খেজুরে আলাপ পাড়তে এসেছ?
-স্যার চাকরীর জন্য।আসলে স্যার চাকরীটা আমার লাগতো না,শুধু লিনার
বিয়ে হয়ে যাচ্ছে,এইটা সেফটি ফ্যাক্টর।নাহলে লীনাকে আরেক জায়গায় বিয়ে দিয়ে দিবে।
আজ লিনার বিয়ে।লিনার পরিবার লিনাকে আরেক জায়গায় বিয়ে দিচ্ছে।রেজা কল্পনা করছে লিনাকে বিয়ের সাজে কেমন লাগতে পারে।টিশার্ট টা মাথায় গলিয়েই বেড়িয়ে পড়ল রেজা।রাস্তায় বের হতেই সেই গরম পদার্থ।রেজা হাসলো কিছুক্ষন,উপরের দিকে তাকিয়ে বলল,নাইস শট,আজ পুরা মাথার মাঝখানে ফেলতে পারছিস।রেজা একটা টিস্যুপেপার দিয়ে মাথাটা মুছতে মুছতে একটা রিকশা ডাকলো।রিকশা মামাকে বলল মগবাজারের দিকে যেতে।মাথার উপর তপ্ত রোদ,রেজা ভাবছে,লিনার বিয়ে আজ।গত ৬ টা বছর দুজন দুজনকে আগলে রেখেছিল।শেষ চাকরীর ইন্টারভিউতে চাকরিটা হলো না।যেই লোক পাখির হাগু সদৃশ শার্ট পড়ে ইন্টারভিউতে আসে তাকে নিয়ে কোম্পানির লোকজনের ভরসা করা মানায় না।রেজার জীবনটাই হয়ে গেছে ভরসাহীন।লিনাকে বলতেই ফোনের ওপাশ থেকে লিনার কান্না,রেজাকে অপদার্থ,বেয়াক্কেল,কতকিছু বলে ফোনটা রেখে দেয় লিনা।ঠিকই তো,পাশ করার ২ বছরেও একতা চাকরী জোগাড় করতে পারলো না রেজা,কোন হিসেবে লিনা আর অপেক্ষা করবে।রেজা শুনেছে লিনাকে যে বিয়ে করবে সে নাকি আমেরিকা থেকে পিএইচডি করা ইঞ্জিনিয়ার,বিশাল বেতনে চাকরী করে।লিনা কেন রেজার মত ভবঘুরে কে বিয়ে করবে।রেজা ভাবতে থাকে,তপ্ত রোদে ঝিমিয়ে আসে চারিপাশ।
-এই তোমার আসা,আমি কতক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে আছি।উফফ তুমি কি মানুষ হবা না।আর কি পড়ে আসছো তুমি এটা।তুমি কি জীবনে আর বিয়ে করতে পারবা?তোমাকে নিয়ে আর পারি না।মাথায় কি?আজও তোমার কাউয়া তোমার সাথে টার্গেট প্র্যাকটিস করছে।চল,মানুষজন তাকিয়ে আছে।আচ্ছা বলতো বিয়ের সাজে একতা মেয়ে আর টিশার্ট পড়া একটা ছেলে দাঁড়িয়ে কথা বলছে,মানুষ কি ভাবছে।চল...এক নিশ্বাসে লিনা কথাগুলো বলে গেল রেজাকে।
-হুম চলো। রেজা আকাশের দিকে তাকায়,আরো রোদ চাই,পৃথিবী আজ আলোর বন্যায় ভেসে যাক।কাজি অফিসের দিকে পা বাড়ায় রেজা।
নাহ,ভালোবাসাটা ব্বৃথা যায় নাই।বিয়ের আসর থেকে যে মেয়ে পালিয়ে আসতে পারে ওর মত একটা অলস কর্মহীনের জন্য, সে মেয়ের ভালোবাসার কাছে নিজেকে তুচ্ছ মনে হতে থাকে রেজার।বাকী জীবন এই মেয়ে কঠিন বাঁধনে বেধে রাখবে দুজনকে।কারণ এটাই যে শিরোনামহীন ভালবাসা।
৮ বছর পর...
রেজা বসে আছে এসি দেয়া একটা রুমে,সাথে তার দুই ম্যানেজার।ইন্টারভিউ নিচ্ছে চাকরীর।
হতদন্ত হয়ে একটা ছেলে প্রবেশ করলো রুমে,
-স্যার আসবো?
-এসেই তো পড়েছ।। রেজা দেখল ছেলেটার শাদা শার্টের কাঁধের কাছটায় পাখির মুত্রের দাগ...
-কি নাম?
-স্যার কার নাম?
-কার নাম মানে?
-মানে স্যার আমার না বাবার?
-কার নাম মানে?ফাইজলামী কর?আর চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে এসেছ,শার্টের কাঁধে ময়লা কেন?
-স্যার ময়লা না স্যার,কাকের বিষ্ঠা,কাকটা খুব বজ্জাত,আমাকে দেখলেই...।।
-আরে?চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে এসেছ নাকি মামাদের সাথে খেজুরে আলাপ পারতে এসেছ?
-স্যার চাকরীর জন্য।আসলে স্যার চাকরীটা আমার লাগতো না,শুধু অহনার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে,এইটা সেফটি ফ্যাক্টর।।নাহলে ওকে আরেক জায়গায় বিয়ে দিয়ে দিবে।
-তারপর?লিনা জিজ্ঞেস করল।চাকরীটা দিলে?
-হুম,চিন্তা করলাম ওকে চাকরীটা না দিলে হয়ত ওর মনের মানুষকে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে আসতে হতো তোমার মত।ভুলে গেছ সেই দিনগুলার কথা।কি স্ট্রাগলটাই না করেছিলাম আমরা।
-হুম,দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল লিনা।ভালো করেছ।নাও কফি ঠান্ডা হয়ে গেল তো।বারান্দায় যা বাতাস।
খুব দূরে একটা তারা মিটমিট করে জ্বলছিল।রেজা লিনার কথোপকথন চলতে থাকে মাঝরাত অবধি যতক্ষন তারাটা থাকে।ওরা ঘুমিয়ে গেলে তারাটাও ঘুমিয়ে যায়,আরেকটা নতুন ভোরকে আহবান করতে
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন