একটু পর রাত ১২ টা বাজবে ।

নিরবান আমার বাসায় চলে আসবে প্রিয়ন্তীর জন্মদিন সেলিব্রেট করতে । আজ ৪ বছর ধরে নিরবান এই কাজ টিই করে আসছে । আমি কখনো নিরবান এর এই কাজ এ বাঁধা দেই নি ।কেক কাটার পর ও ওর বাসায় চলে যায় ।তারপর সকালে ছিন্নমূল শিশুদের মাঝে আমি আর নিরবান মিলে কেক বিলি করি । ওর
bondhu
জমানো টাকা নিয়ে সেই দিন আমরা পথের শিশুদের সাথে কাটাই ।আমার অনেক ভালো লাগে নিরবান এর এই ছেলে মানুষী গুলো । প্রিয়ন্তী হলো নিরবান এর ভালো লাগা আর ভালবাসার সেই মানুষ ,যাকে ঘিরে নিত্য নতুন পাগলামি করে যাচ্ছে ছেলেটি । পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে নিরবান প্রিয়ন্তী কে ভালবাসে ।এক তরফা লাভ যে টা কে বলে । প্রিয়ন্তী কে নিয়ে কবিতা ,গান ,গল্প আর ও কত কি যে করে নিরবান ,আমি না দেখলে বিশ্বাস ই করতাম না ।গীটার এ কোনো নতুন সুর সৃষ্টি হলে কিংবা ওকে নিয়ে কোনো গান লিখলে তার একমাত্র স্রোতা হই আমি । রাত ২ টার সময় ফোন দিয়ে বলে নিবেদিতা শোন তো গান টা কেমন হয়েছে ? আমি ঘুম জড়ো কন্ঠে বলি ,হুম বেশ সুন্দর । আসলেই নিরবান অনেক সুন্দর গান করে ।

অনেক কষ্টে আজ প্রিয়ন্তী কে মেনেজ করে আমি পার্কে নিয়ে আসছি। সুধু মাত্র নিরবান এর জন্য । এর আগের দিন রাত এ নিরবান ওর লেখা ১টা গান শুনিয়েছে । আজ সেই গান গেয়েই নাকি প্রপোজ করবে প্রিয়ন্তি কে। নিরবান আসছে ওর গীটার টা কাঁধে ঝুলিয়ে । আসলেই অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে নিরবান কে । ওদের কে পাশাপাশি বসিয়ে কথা বলতে বলে আমি একটু দূরে গিয়ে বসলাম । নিরবান খুব সুন্দর ভাবে ওর মনের সব কথাই প্রিয়ন্তী কে বলল । প্রিয় মানুষের সামনে বসলে যে মানুষ কেনো ঘামতে শুরু করে নিরবান কে দেখে বোঝা যাচ্ছিলো ।ওদের সব কথাই আমার কান এ এসে লাগছে । সব কথা শুনে প্রিয়ন্তী এমন ভাবে রিএক্ট করলো আমি কল্পনা তেউ ভাবি নি ।আমার সামনে আমার প্রিয় বন্ধু কে বলল ,কুকুরের মতো তো অনেক ঘুরছো আমার পেছনে , এভাবে ঘুরে কোনো লাভ আছে ? তোমার মতো অনেক থার্ড ক্লাস ছেলেই আমার পিছনে ঘুরঘুর করে সারাক্ষন । তাই বলে সবাই কে আমার ভালবাসতে হবে ? প্রিয়ন্তী যাওয়ার সময় আমাকে বলে গেলো নেক্সট টাইম আমাকে ডাকার আগে ভাববি , ফাজিল ছেলে গুলোর জন্য তোর দরদ থাকতে পারে । ওদের জন্য আমার মনে কখনই সিম্পেথি তৈরি হবে না । কথা গুলো বলেই প্রিয়ন্তী চলে গেলো । আমি নিরবান এর দিকে চেয়ে থাকলাম ।ওর চোখ জ্বলজ্বল করছে পানি তে । প্রিয়ন্তীর জন্য আনা ওর ডায়েরী আর বেলি ফুল টা ওইখানেই পড়ে আছে । একটা মেয়ে ওইভাবে কাউ কে হার্ট করতে পারে আমার জানা ছিলো না ।নিরবান কে তো আমি চিনি, ওর আচার ব্যাবহার সব কিছুই আমার জানা । ওকে অনেক বুঝানোর পর , বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসলাম । এরপর থেকে ৭ দিন ওর ফোন অফ ।ফেসবুক এউ আসে না । বাসায় গেলেউ দরজা খোলে না ।সারাদিন রুম আটকিয়ে রাখে ।নিরবান এর লাইফ স্টাইলে এই কয়েক দিন এ অনেক পরিবর্তন এসেছে । আমাকে আর ফোন দেয় না । আমি ফোন দিলেউ রিসিভ করে না । সিগারেট , গাঁজা ,ফেন্সিডিল আর ঘুমের ওসুধ নিয়ে থাকে সারাদিন । যে ছেলে সিগারেট এর ধোঁয়া সহ্য করতে পারে না ,সে এই কয়েক দিনের মাথায় কেমন যেনো নেশাগ্রস্ত হয়ে গেছে ।আমার খুব কান্না পায় নিরবান এর জন্য । ফোন দিয়ে আমাকে আর সময় অসময়ে জ্বালায় না ।ওর জ্বালানো টা অনেক বেশি মিস করি । আন্টি আমাকে ফোন দিয়ে বলে , তুই তো ওর ভাল বন্ধু প্লিজ বল আমার নিরবান এর কি হয়েছে । আমি কিছু বলতে পারি না ,শুধু কান্না পায় আন্টির কথা শুনে । তুই প্লিজ কিছু কর মা , তোর বন্ধু টা খায় না কিছুই । একটা মেয়ের জন্য আমার বন্ধু টার জীবন

আজ বিপন্ন হতে চলেছে .........
কয়েক দিন পর নিরবান আমাকে ফোন দিয়ে বলে সাদিয়া ইসলাম প্রিয়ন্তী ওকে ফেসবুক এ sorry লিখে এস এম এস করছে ।আমার বন্ধু টা এই sorry মাঝে যেনো নতুন প্রান ফিরে পেলো । প্রিয়ন্তীর সাথে এখন নিরবানের প্রতিদিন ফেসবুক এ চ্যাট হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ।প্রথম প্রথম নিরবান আমাকে ওদের সব কথা বলতো ,এখন আর তেমন কিছু বলে না । আমি অনলাইন এ থাকলেউ নক করে না ।হুম আমার প্রিয় বন্ধু টা আসলেই অনেক ভালো আছে এখন । সিগারেট টা ছেড়ে দিয়েছে । ঘুমের ওসুধ খায় না আর । প্রিয়ন্তীর সাথে কন্ডিশন হয় যেদিন ভাল জব পাবে নিরবান, সেইদিন দেখা করবে । এর আগে কখনো ফোন দিতে পারবে না , ওর পিছনে ঘুর ঘুর করতে পারবে না । সব কন্ডিশন মেনে নেয় নিরবান । সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে নিরবান । সারাদিন এখন স্টাডি নিয়ে বিজি থাকে । সামনে সেমিস্টার ফাইনাল । যে বন্ধু কে আমি ঠিক করতে পারি নি ,প্রিয়ন্তী তা পেরেছে । আমাদের এতো দিনের বন্ধুত্ব প্রিয়ন্তীর কাছে হার মেনেছে । প্রিয়ন্তী নাকি নিরবান এর আমার সঙ্গে মেলামেশা টা মেনে নিতে পারে না , তাই এখন প্রিয় বন্ধু টা আমাকে এভোইড করতে শুরু করেছে । আমি মেনে নিয়েছি সব কিছু আমার প্রিয় বন্ধু টির জন্য ।

নিরবান আজ ভাল জব পেয়েছে । ফেসবুক এ প্রিয়ন্তী কে এস এম এস করে জানিয়ে দিয়েছে ।প্রিয়ন্তী ওর ফোন নাম্বার দিয়েছে । আজ বিকাল ৫ টায় ওদের দেখা করার কথা । ফোন দেওয়া মাত্র ই অপর পাশ থেকে জানিয়ে দেওয়া হলো এই মুহূর্তে নাম্বার টি তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রিয়ন্তী ওর কথা রাখে নি ।
প্রিয়ন্তীর বিয়ে হয়ে গেছে অনেক আগেই , দিনের দিনের পর দিন আমি সাদিয়া ইসলাম প্রিয়ন্তী আইডি দিয়ে ওর সাথে চ্যাট করেছি । আমার এই ভুল এর কোনও ক্ষমা নেই আমি জানি । নিরবান আমাকে ওর ইমোশন নিয়ে খেলার অধিকার দেয় নি ,তবু আমি খেলেছি । নিরবান কে আজ আমি সব বলেছি ,ও সব শুনে আমাকে একটা থাপ্পর মেরেছে। আমি অপরাধীর চোখ নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম ।.........

( আজ ১০ বছর পর নিরবান এর সাথে আমার দেখা , ও ওর বউ কে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো নিবেদিতা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড , যে আমাকে দ্বিতীয় জীবন দিয়েছে )বন্ধু হিসাবে এর থেকে বেশি আনন্দ আর কিই বা হতে পারে ...... আমার বন্ধু টা আসলেই অনেক সুখ এ আছে এখন...... অনেক টা সত্যি কাহিনী অবলম্বনে ............
 
Top