বৃষ্টি মাত্রই ধুয়ে দিয়ে গিয়েছে রাজপথটাকে । ঢালু রাজপথের উপর পানির আধারে চুপচাপ খেলে বেড়ায় বাতাস । আর বাতাসের সাথে পানির মৈত্রিতে তৈরি হয় মৃদু স্রোত । পানি মাঝে বিশাল আকাশের উজ্জ্বল
প্রতিবিম্ব ফুটে উঠে । স্রোতের মাঝেও পানির আপ্রান চেষ্টা থাকে আকাশের প্রতিবিম্বকে ধরে রাখার । দৃশ্যপট বদলে যায় না , শুধু চরম নিঃসঙ্গতার মাঝে নিজের নিরব অস্তিত্ব ধরে রাখে । খুব ভোর এখন , সচারচর এতো ভোরে সাধারনত মানুষ বের হয় না । কিন্তু আমি বের হয়েছি , হ্যা এই ঘন বর্ষনের দিনও বের হয়েছি । ক্ষনে ক্ষনে আবেগ আর বাস্তবতার মধ্যে যুদ্ধ চলছে । এশা তো বলেই দিয়েছে সে আসবে না তারপরও কেন আসলাম ? আমি সত্যিই জানি না কেন আদৌ আসলাম , শুধু জানি আমি আসতে বাধ্য ছিলাম । অনেকদিন বৃষ্টিতে ভিজা হয়নি , এখন বৃষ্টি হচ্ছে না । কিন্তু আমি জানি বৃষ্টি আসবে , অন্তত আমাকে ভিজিয়ে দেওয়ার জন্য হলেও আসবে । ধানমন্ডি লেকের পাশে রাস্তাটা দিয়ে হাটছি আমি । কতো স্মৃতি জড়িয়ে আছে রাস্তাটাকে ঘিড়ে ! জমে থাকা পানিতে পায়ের স্যান্ডেল ডুবে যায় , পা ভিজে গিয়েছে , তবুও আপনমনেই চলতে থাকে আমার হাটা । হাটতে হাটতে ফিরে গেলাম অতিতে । কুমিল্লা টু সিলেট বাস কাউন্টারের নিচে চোখ কুচকে দাড়িয়ে আছে মেয়েটা । চোখে দেয়া কাজল লেপ্টে গিয়েছে , কিন্তু তাতে যেন সৌন্দর্য আরো কয়েকগুন বেড়ে গিয়েছে মেয়েটার । মুখের ভঙ্গিমাই বলে দেয় প্রচন্ড রেগে আছে মেয়েটা । কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম , তারপর ধিরে সুস্থে সিগারেটের দিকে মনোযোগ ফিরিয়ে নিলাম । লাইটারটা একদম নতুন , ছোট একটা পিস্তলের মতো । লাইটারটা বের করে ট্রিগারে টিপ দিয়ে আগুন জ্বালানোটায় বেশ মজা লাগে । বাসটা আর মাত্র পাঁচ মিনিট পর ছেড়ে যাবে সিলেটের উদ্দেশ্যে । কয়েকটা গভীর টান দিয়ে সিগারেটটা ফেলে দিলাম । বাসটা বিশেষ সুবিধার না , মুড়ির টিনকে টেনে টুনে লম্বার করার ব্যার্থ প্রয়াস বলা যেতে পারে । হেলে দুলে এগোতে থাকলাম দু সারি সিটের মাঝখান দিয়ে । সিট খুজতে গিয়ে দেখি মেয়েটা আমার পাশের সিটেই বসে আছে । বন্ধুদের সাথে আড্ডায় যতই বলি না কেন যে "দোস্ত পাশে একটা সুন্দরি মাইয়া থাকলে জীবনডা পাত্থরকুচি হইয়া যাইতো । খালি সুখের পাতা সৃষ্টি হইতো !" কিন্তু বাস্তবে ভ্যাবাচ্যাকা ছাড়া কিছুই খেলাম না । যথাসম্ভব ভদ্রভাবে বসতে না বসতেই সুন্দরি নাক কুচকে বলে উঠলো "আপনি স্মোক করেন ! ছিঃ ! প্লিজ অন্য সিটে গিয়ে বসুন !" আমার মান ইজ্জত যাই ছিল না কেন সব কিছু বেনসনের ধোয়ার মতো উবে গেলো । মুখ কালো করে পাশের সিটে বসলাম । বাস ভর্তি হতে থাকলো এবং যাত্রীরা বেশিরভাগই এলিট শ্রেণীয় অর্থাত্ নিন্মবিত্ত । কয়েকজন তো কোদাল , শাবল , কড়াই নিয়ে উঠলো ! সুন্দরির দিকে আড়চোখে তাকাতেই দেখি আতংকিত দৃষ্টিতে লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে সে । তাদের মধ্যে একজন সুন্দরির পাশে বসার উপক্রম করতেই সুন্দরি আমার দিকে ফিরে প্রায় চিত্কার দিয়ে বলল "এই যে এই এই আপনার টিকেটে ১৫ লেখা না ? এই যে এটা আপনার সিট তো । এখানে এসে বসেন ।" এ সুযোগ হাতছাড়া অথবা বলা যেতে পারে সিটছাড়া করার পাত্র আমি না । সুতরাং লক্ষী ছেলের মতো সুন্দরির পাশে বসে গেলাম । একটু পর বাস ছেড়ে দিলো , সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো বাসটার ভিতরে তিল ধারনের জায়গাটাও আর রইলো না । রাতের বাসে উঠার অসুবিধা এটাই , সিটিং বাস লোকাল হয়ে যায় । যদিও আমার কোন সমস্যা নেই , আমি দিব্যি ঘুমিয়ে যেতে পারবো । কিন্তু পাশে বসা সুন্দরির কপালের রেখা ঘন হতেই বুঝলাম উনি আজকে অন্তত ঘুম কি জিনিস ভুলে যাবেন । আমি ভাবিনি আমার ভাগ্য এতটা খারাপ হবে । সুন্দরি সময় কাটানোর জন্য আমার সাথে খাজুরা আলাপ জুড়ে দিল ! জানতে পারলাম তার নাম এশা । কিছুক্ষন আলোচনায় অংশগ্রহন করলেও একটু পর ঘুমের দিকেই কেন যেন আমার মস্তিস্ক বেশি আকর্ষন অনুভব করলো । এই আকর্ষন যখন ভাঙ্গলো তখন দেখি আমার পিছনের সিটে বসা পিচ্চি আমার চুল টানাটানি করছে আর এশা সুন্দর করে এই দৃশ্য ভিডিও করছে । মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো , তবুও আস্তে করে পিচ্চিটার হাত সড়িয়ে দিলাম । তারপর এশার দিকে শীতল দৃষ্টিতে যেই তাকাতে গিয়েছি , পিচ্চি আর শক্ত করে চুল চেপে ধরলো ! এবার আর সহ্য করলাম না , পিছন ফিরে বললাম "বেয়াদপ পোলা থাপড়ায়ে বেহুশ কইরা দেমু !" যদিও পিচ্চি ভয় পেলো কিনা যথেষ্ঠ্য সন্দেহ আছে আমার । আসলে ভয় তো দূরের কথা পিচ্চি নিজের আত্মসম্মানের উপর আঘাত মনে করলো আমার ধমকটাকে । সোজা চুলের মধ্যে চুইংগাম লাগিয়ে দিলো ! রাগে দুঃখে দিশেহারা হয়ে গেলাম একদম ! কিছু বলতে গেলাম কিন্তু তার আগেই দেখি পিচ্চির মা পিচ্চিকে বেদম বকা দিচ্ছে । কিন্তু আমার মস্তিস্ক তখন অন্যদিকে ঘুড়ে গিয়েছে । খিল খিল করে হাসছিলো এশা , অদ্ভুত হলেও সত্য জীবনে কখনো কাওকে এতো সুন্দর লাগেনি হাসতে দেখে । চুপচাপ হয়ে গেলাম একদম , একটু লজ্জাও পেয়েছিলাম বোধহয় , সুতরাং এশাকে হাসতে দিয়ে চুল চুইংগাম মুক্ত করার ব্যার্থ চেষ্টা করতে থাকলাম । মূলত এটাই ছিল এশার সাথে আমার প্রথম পরিচয় । তারপর আর কি ছয় ঋতুর আগাগোনা শেষে দেখি ওর হাত ধরে ধানমন্ডির এই রাস্তাটায় হেটে যাচ্ছি আমি । এশা মাঝে মাঝে যখন রেগে যায় তখন তার পুরো মুখটা টমেটোর মতো লাল হয়ে উঠে । আমার তখন মাথায় একটাই চিন্তা থাকে যে মানুষ রেগে গেলে তার মুখ টমেটো আকার ধারন করে কেন ! আমি ভবঘুরে , আপনভোলা টাইপের একটা ছেলে । এশার ভাল লাগা , মন্দ লাগাগুলো কখনো বুঝতে চেয়েছি বলে মনে পরে না আর যখন চেয়েছি তখন হয়তো এশা বলে না । আমার জানা হয়নি এই জানা শোনা আর চেনা অচেনার বেড়াজালে কখন আমরা দূরে সরে গেলাম । প্রথম ব্যাপারটা উপলব্দি করলাম সেদিনই যেদিন বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় আমার পাশে এশা ছিল না । অথবা ধোয়া উঠা কফির কাপ দুটোর একটা একদম ভর্তি ছিল । কিংবা হয়তো লেকের পানিতে রোদ্রের প্রতিচ্ছবি শুধু আমাকেই রাঙ্গিয়ে দিয়ে গিয়েছিলো তখন ।
রায়হানের ব্যাপারটা আসলে আমি তেমন পাত্তা দিতাম না । ছেলেটা এশার ক্লাসমেট এবং বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল । কখনো দেখিনি ছেলেটাকে , তবে সুদর্শন যে হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই । এশার কাছে শুনতে শুনতে মোটামুটি মুখস্থ হয়ে গেছে ছেলেটার সবকিছু । প্রথমদিকে বেশ আগ্রহ নিয়ে শুনতাম সবকিছু । কিন্তু যেদিন শুনলাম ছেলেটা এশাকে ভালবাসে । কেন যেন খুব অসহ্য লাগতো ছেলেটাকে । এশা পছন্দ করতো না তাই সিগারেট প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম । আবার বেড়ে গেলো সিগারেট এর মাত্রা , বিশাক্ততার মাঝে হারিয়ে যেতে থাকলাম আমি । তবুও বিশ্বাস ছিল এশার উপর । মেয়েটা যখন চুপচাপ হাত ধরে বসে থাকতো , কিংবা আলতো করে মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিতো সত্যিই সব ভুলে যেতাম । একটা সময় পড়াশোনার তাগিতে চলে আসলাম অন্য একটা জেলায় । জীবন যুদ্ধ এক অদ্ভুত যুদ্ধ , যেখানে সব খানে আহত হতে হয় । এশার সাথে যোগাযোগ সেলফোনে এসে ঠেকলো । ফোনের এপাড় ওপাড় শুধু অনুভূতির আদান প্রদান চলল । কতো যে ইচ্ছা করতো এশাকে একটা বার দেখার । ঢাকায় যখন যেতাম অল্প কিছুদিনের জন্য তখন এশার নানান মুখি সমস্যা থাকতো । সন্দেহ জাল বুনতে শুরু করে দিয়েছিলো ততদিনে , এশাকে সাফ বলে দিলাম রায়হানের সাথে না মিশতে । আমাকে অবাক করে দিয়ে এশা অস্বিকার করলো । আমার কি হয়েছিলো জানি না , ভয়াবহ রেগে গিয়ে যা তা বলে ফেলেছিলাম তাকে । সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হলো সেখান থেকেই । আমার জানা হলো না এশার দুঃখের সময়টা রায়হান আপন করে নিয়েছে ততদিনে । প্রতিদিনের ঝগড়ায় একদিন হুট করে এশা বলে ফেলল কথাটা । নিয়তিকে বড় নিষ্ঠুর মনে হলো হটাত্ । তারপর একদিন সম্পর্কের ইতি টানতেই হলো আমাদের । এশা জানিয়ে দিলো আমার সাথে আর হচ্ছে না , মিলছে না তার কিছুই । আমি শুধু চুপচাপ শুনে গিয়েছিলাম কথাগুলো । তারপর আবারো সেই সিগারেট । শুধু মাঝে মাঝে অনেক খারাপ লাগা নিয়ে লেকের পাশে চুপচাপ বসে থাকার মাঝে নিজের অস্তিত্বকে খোঁজার চেষ্টা করে যাই ।
আজকে অনেকদিন পর এশাকে আসতে বলেছি । স্কলারশিপটা পেয়ে গিয়েছি , জার্মানিতে চলে যাব এই তো কিছুদিনের মধ্যেই । অতীত থেকে বর্তমানে ফিরে আসলাম বৃষ্টির প্রথম ফোটা মুখের উপর পরায় । ডিঙ্গি রেসটুরেন্টের কাছাকাছি এসে পরেছি , একটু দ্রুত হেটে ডিঙ্গির নিচে দাড়িয়ে পরলাম । সিগারেট ধরালাম একটা , এক টান দিয়ে ধোয়া ছাড়তেই বৃষ্টির পানির সাথে মিশে গেলো । এশা যখন এলো তখন ঝুম বৃষ্টি নেমেছে , সেই আগের মতোই ধীর পায়ে ছাতা মায়া এগিয়ে আসছে সে । সে কাছাকাছি আসতেই সিগারেটটা ফেলে দিলাম । বৃষ্টির জমে থাকা পানিতে পরে ছ্যাত্ করে নিভে গেল সেটা । "তুমি আবার সিগারেট ধরেছো ?" ছাতা বন্ধ করতে করতে বলল এশা । জবাব দিলাম না , এশার দিকে তাকিয়ে আছি । ছাতা বন্ধ করে সরাসরি আমার দিকে তাকালো এশা । মনে হলো একটু যেন ধাক্কা খেয়েছে সে । এশাকে সেজে আসতে বলেছিলাম একটু , চোখে কাজল দিয়ে আসতে বলেছিলাম । এশা চোখে কাজল দিয়ে আসেনি , তার সিগ্ধ মুখটা কেমন যেন খালি খালি দেখাচ্ছে । "কি ব্যাপার চুপ করে আছো কেন ? বলো কেন ডেকেছো ?" আবার বলল এশা । এশার চিবুক বেয়ে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে নামছে , হটাত্ করে মনে হলো খুব আস্তে এশার চিবুক স্পর্শ করি , মুছে দিই পানির ফোটা । সামলে নিলাম দ্রুত , বললাম "কেমন আছো ।" এশা হাসলো , সে হাসির মাঝে কোন উচ্ছলতা নেই । বলল "হমম ভালই আছি । তুমি ?"-"হ্যা এই তো আছি একরকম"--"তারপর কি করছো আজকাল ?"-"তেমন কিছু না , জার্মানিতে চলে যাচ্ছি কিছুদিনের মধ্যে ।"--"ও আচ্ছা । ভাল" নিস্পৃহ কন্ঠে জবাব দিলো এশা । কি বলবো বুঝে উঠতে পারলাম না , খুব অসহায় লাগলো নিজেকে । আশে পাশে গুমোট অন্ধকার হয়ে আসা প্রকৃতির মাঝে যদি হারিয়ে যেতে পারতাম ! "আচ্ছা তুমি কি কিছু বলবা ? আমার যেতে হবে । রায়হান ওয়েট করতেছে আমার জন্য ।" আবারও বলে উঠলো এশা । কিছু বলতে পারলাম না , ধক্ করে উঠলো বুকের ভিতরে । অনুভূতিটা সুখকর নয় মোটেই , মাথা নিচু করে রইলাম । "অযথা এতো নাটক না করলেও পারতা । আর শোন আর কখনো কল করে এসব নাটক দেখাবা না আমাকে ।" এশা আবার বলল । ঝট করে উঠে দাড়ালো সে , তাড়াহুড়ো করে ছাতা খুলতে গিয়ে ছাতার একটা শিক ভেঙ্গে গেলো । আমি তখন এশার যাত্রাপথের উল্টোদিকে বসে আছি । ছপ ছপ আয়োয়াজ তুলে পায়ের শব্দ দ্রুত বৃষ্টির পানির সাথে মিলিয়ে যাচ্ছে । শেষ সিগারেটা ধরালাম , লাইটারটা বেশ পুরোনো হয়ে গিয়েছে , গ্যাস প্রায় শেষের দিকে । সিগারেট ধরিয়ে লম্বা একটা টান দিলাম , তারপর ধোয়াগুলো ছেড়ে দিলাম বাতাসের মাঝে । মানুষের জীবনের সমীকরনগুলো ক্ষণে ক্ষণে শাখা প্রশাখা বিস্তার করে , সব সময় তারা সুখকর হয় না । এই জ্বলন্ত সিগারেট আর ধূসর ধোয়ার মাঝে দেখা দুনিয়াটাকে খুব ঘোলাটে লাগে । জমে থাকা পানিরা আর আকাশের প্রতিবিম্ব ধরে রাখতে পারে না , বিক্ষিপ্ততার মাঝে হারিয়ে ফেলে প্রতিবিম্বকে । সিগারেট প্রায় শেষের দিকে , হটাত্ পিঠে ভয়াবহ একটা বাড়ি লাগায় হাত থেকে ছিটকে পরে গেলো সিগারেটটা । অবাক হয়ে পিছনে ফিরে দেখতেই দেখি এশা হাতা ভাজ করা অবস্থায় চুপচুপে ভেজা অবস্থায় দাড়িয়ে আছে । "অসভ্য ছেলে । দেখস নাই ছাতা ভেঙ্গে গেছে ? দেখস নাই আমি ভিজতেছিলাম ? যাস নাই কেন ফিরিয়ে আনতে ? সব সময় আমাকেই কেন তোর কাছে আসতে হবে ? এরপর যদি কখনো আসতে হয় প্রত্যেকবার দশটা করে ছাতার বাড়ি খাবি তুই ।" অশ্রুশিক্ত চোখে বলল এশা । আমি তখনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে । হটাত্ করেই মনে হলো ধূসর ধোয়ার আড়ালের পৃথিবীটাও অনেক সুন্দর । বিক্ষিপ্ত পানির আধারও আকাশের প্রতিবিম্ব ধরে রাখে তার প্রতিটি পানি কণার মাঝে । এশা হু হু করে কাঁদছে , খুব মায়া লাগছে দেখতে । এগিয়ে গিয়ে এশাকে জড়িয়ে ধরলাম । কান্নার মাঝেই ব্যাগ থেকে কাজলের স্টিক বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিলো সে । হেসে ফেললাম এবার , এশাও হেসে ফেলল । বাহিরে বৃষ্টির বেগ বাড়ছে , রাস্তার উপর জমা পানির বিক্ষিপ্ততা বাড়ছে । বিক্ষিপ্ততার মাঝে আমাদের প্রতিবিম্ব যদিও দেখা যাচ্ছে না তবুও আমি জানি পানির প্রতিটি কণা তাদের অভ্যন্তরে আমাদের প্রতিবিম্ব ধারন করেছে । শুধু কখনো প্রতিবিম্বের পরিস্ফুটন হবে না কখনো । থাকুক না অনেক গোপনে , সব কিছু পরিস্ফুটিত না হলেও তো চলে ।
কিছু কথা এবং উত্সর্গঃ
গল্পটা হ্যাপি এন্ডিং কেন দিলাম ? কেন দিলাম হ্যা ? আসলে রাগে দুঃখে হতাশায় হ্যাপি এন্ডিং দিয়ে দিছি কারন স্যাড এন্ডিং দিলে নায়ক ধোয়ার মাঝে অস্পষ্ট পৃথিবী দেখতে চাইতো যার ফলে তার অনেক অনেক সিগারেট লাগতো । এমনিতেই সরকার সিগারেটের দাম বাড়াইছে , নায়ক গরীর মানুষ আর যদি গরিব নাও হয় তাইলে অস্পষ্ট পৃথিবী দেখতে গিয়ে যে গরিব হয়ে যাবে তাতে আমার কোন সন্দেহ নাই । তাই অবিলম্বে সিগারেটের দাম কমাবার দাবি জানাচ্ছি নাইলে আমার গল্পের নায়কের কি হবে বলেন ?
এশার দৃষ্টিভঙ্গিটা উহ্য রাখলাম । এশা রায়হানকে কখনো ভালবাসেনি , ভালবেসেছে গল্পের নায়ককে । মাঝখানে ব্রেকআপের ব্যাপারটা আসলে ভুল বোঝাবুঝি আর অতিরিক্ত আত্মপক্ষ সমর্থনের ফলে হয়েছে । এশার দৃষ্টিভঙ্গির বিশ্লেষন আর করবো না । কারন রহস্য থাকা ভাল ....
এবার আসি উত্সর্গে । আমি জানি গল্পখানা পড়ে অলরেডি জুতা ছেড়ায় ব্যাস্ত আপনারা । কারন খুব ভাল করেই জানেন যে ভাল জুতা আমার গায়ে মারলে আমি জুতার ব্যাবসা শুরু করে দিব । আমার হাইট মাত্র পাচ ফুট দশ ইন্চি । জুতা মারলে মুখ মিস হওয়ার সম্ভাবনা আছে । এজন্য আমার পিছনে অর্নব ফায়েককে দাড় করায়ে দেওয়ার জোড় আবেদন জানাচ্ছি । তাতে আমার মুখ মিস হলেও ছয় ফুটি ঐ দৈত্যেরটার কখনই মিস হবে না । তাতে অন্তত মুখ সই করার আনন্দটা পাইবেন । হে হে
ফারিয়া জহির মেয়েটাকে আমার একদমই সহ্য হয় না । আমার কাছে যা কিছু ভাল লাগে সব এই মেয়ের কাছে বাজে লাগে । জিকু ভাইয়ের পাংখা দাড়ির স্টাইল তার ভাল লাগে না । অর্নইব্বার হেয়ালি তার ভাল লাগে না । সবচেয়ে বড় কথা আমার এতো সুন্দর এডিট করা ছবিটা (ভয়াবহ !) যেটা হাজারো তরুনি অজ্ঞান করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে তবে সেটা ভয়ে নাকি সৌন্দর্যে তা আমি অবশ্য জানি না , ঐ ছবি নাকি ভাল হয় নাই ! এইগুলা কোন কথা হৈলো ? তারপরও মানুষ বলে মেয়েটা নাকি অনেক লক্ষী , আমিও কিছু কিছু নিদর্শন পাইছি বটে । কিন্তু তাতে কি ? এই মেয়ে ভাল তাতে কি ? তাকে সহ্য হয় না ।
প্রতিবিম্ব ফুটে উঠে । স্রোতের মাঝেও পানির আপ্রান চেষ্টা থাকে আকাশের প্রতিবিম্বকে ধরে রাখার । দৃশ্যপট বদলে যায় না , শুধু চরম নিঃসঙ্গতার মাঝে নিজের নিরব অস্তিত্ব ধরে রাখে । খুব ভোর এখন , সচারচর এতো ভোরে সাধারনত মানুষ বের হয় না । কিন্তু আমি বের হয়েছি , হ্যা এই ঘন বর্ষনের দিনও বের হয়েছি । ক্ষনে ক্ষনে আবেগ আর বাস্তবতার মধ্যে যুদ্ধ চলছে । এশা তো বলেই দিয়েছে সে আসবে না তারপরও কেন আসলাম ? আমি সত্যিই জানি না কেন আদৌ আসলাম , শুধু জানি আমি আসতে বাধ্য ছিলাম । অনেকদিন বৃষ্টিতে ভিজা হয়নি , এখন বৃষ্টি হচ্ছে না । কিন্তু আমি জানি বৃষ্টি আসবে , অন্তত আমাকে ভিজিয়ে দেওয়ার জন্য হলেও আসবে । ধানমন্ডি লেকের পাশে রাস্তাটা দিয়ে হাটছি আমি । কতো স্মৃতি জড়িয়ে আছে রাস্তাটাকে ঘিড়ে ! জমে থাকা পানিতে পায়ের স্যান্ডেল ডুবে যায় , পা ভিজে গিয়েছে , তবুও আপনমনেই চলতে থাকে আমার হাটা । হাটতে হাটতে ফিরে গেলাম অতিতে । কুমিল্লা টু সিলেট বাস কাউন্টারের নিচে চোখ কুচকে দাড়িয়ে আছে মেয়েটা । চোখে দেয়া কাজল লেপ্টে গিয়েছে , কিন্তু তাতে যেন সৌন্দর্য আরো কয়েকগুন বেড়ে গিয়েছে মেয়েটার । মুখের ভঙ্গিমাই বলে দেয় প্রচন্ড রেগে আছে মেয়েটা । কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম , তারপর ধিরে সুস্থে সিগারেটের দিকে মনোযোগ ফিরিয়ে নিলাম । লাইটারটা একদম নতুন , ছোট একটা পিস্তলের মতো । লাইটারটা বের করে ট্রিগারে টিপ দিয়ে আগুন জ্বালানোটায় বেশ মজা লাগে । বাসটা আর মাত্র পাঁচ মিনিট পর ছেড়ে যাবে সিলেটের উদ্দেশ্যে । কয়েকটা গভীর টান দিয়ে সিগারেটটা ফেলে দিলাম । বাসটা বিশেষ সুবিধার না , মুড়ির টিনকে টেনে টুনে লম্বার করার ব্যার্থ প্রয়াস বলা যেতে পারে । হেলে দুলে এগোতে থাকলাম দু সারি সিটের মাঝখান দিয়ে । সিট খুজতে গিয়ে দেখি মেয়েটা আমার পাশের সিটেই বসে আছে । বন্ধুদের সাথে আড্ডায় যতই বলি না কেন যে "দোস্ত পাশে একটা সুন্দরি মাইয়া থাকলে জীবনডা পাত্থরকুচি হইয়া যাইতো । খালি সুখের পাতা সৃষ্টি হইতো !" কিন্তু বাস্তবে ভ্যাবাচ্যাকা ছাড়া কিছুই খেলাম না । যথাসম্ভব ভদ্রভাবে বসতে না বসতেই সুন্দরি নাক কুচকে বলে উঠলো "আপনি স্মোক করেন ! ছিঃ ! প্লিজ অন্য সিটে গিয়ে বসুন !" আমার মান ইজ্জত যাই ছিল না কেন সব কিছু বেনসনের ধোয়ার মতো উবে গেলো । মুখ কালো করে পাশের সিটে বসলাম । বাস ভর্তি হতে থাকলো এবং যাত্রীরা বেশিরভাগই এলিট শ্রেণীয় অর্থাত্ নিন্মবিত্ত । কয়েকজন তো কোদাল , শাবল , কড়াই নিয়ে উঠলো ! সুন্দরির দিকে আড়চোখে তাকাতেই দেখি আতংকিত দৃষ্টিতে লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে সে । তাদের মধ্যে একজন সুন্দরির পাশে বসার উপক্রম করতেই সুন্দরি আমার দিকে ফিরে প্রায় চিত্কার দিয়ে বলল "এই যে এই এই আপনার টিকেটে ১৫ লেখা না ? এই যে এটা আপনার সিট তো । এখানে এসে বসেন ।" এ সুযোগ হাতছাড়া অথবা বলা যেতে পারে সিটছাড়া করার পাত্র আমি না । সুতরাং লক্ষী ছেলের মতো সুন্দরির পাশে বসে গেলাম । একটু পর বাস ছেড়ে দিলো , সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো বাসটার ভিতরে তিল ধারনের জায়গাটাও আর রইলো না । রাতের বাসে উঠার অসুবিধা এটাই , সিটিং বাস লোকাল হয়ে যায় । যদিও আমার কোন সমস্যা নেই , আমি দিব্যি ঘুমিয়ে যেতে পারবো । কিন্তু পাশে বসা সুন্দরির কপালের রেখা ঘন হতেই বুঝলাম উনি আজকে অন্তত ঘুম কি জিনিস ভুলে যাবেন । আমি ভাবিনি আমার ভাগ্য এতটা খারাপ হবে । সুন্দরি সময় কাটানোর জন্য আমার সাথে খাজুরা আলাপ জুড়ে দিল ! জানতে পারলাম তার নাম এশা । কিছুক্ষন আলোচনায় অংশগ্রহন করলেও একটু পর ঘুমের দিকেই কেন যেন আমার মস্তিস্ক বেশি আকর্ষন অনুভব করলো । এই আকর্ষন যখন ভাঙ্গলো তখন দেখি আমার পিছনের সিটে বসা পিচ্চি আমার চুল টানাটানি করছে আর এশা সুন্দর করে এই দৃশ্য ভিডিও করছে । মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো , তবুও আস্তে করে পিচ্চিটার হাত সড়িয়ে দিলাম । তারপর এশার দিকে শীতল দৃষ্টিতে যেই তাকাতে গিয়েছি , পিচ্চি আর শক্ত করে চুল চেপে ধরলো ! এবার আর সহ্য করলাম না , পিছন ফিরে বললাম "বেয়াদপ পোলা থাপড়ায়ে বেহুশ কইরা দেমু !" যদিও পিচ্চি ভয় পেলো কিনা যথেষ্ঠ্য সন্দেহ আছে আমার । আসলে ভয় তো দূরের কথা পিচ্চি নিজের আত্মসম্মানের উপর আঘাত মনে করলো আমার ধমকটাকে । সোজা চুলের মধ্যে চুইংগাম লাগিয়ে দিলো ! রাগে দুঃখে দিশেহারা হয়ে গেলাম একদম ! কিছু বলতে গেলাম কিন্তু তার আগেই দেখি পিচ্চির মা পিচ্চিকে বেদম বকা দিচ্ছে । কিন্তু আমার মস্তিস্ক তখন অন্যদিকে ঘুড়ে গিয়েছে । খিল খিল করে হাসছিলো এশা , অদ্ভুত হলেও সত্য জীবনে কখনো কাওকে এতো সুন্দর লাগেনি হাসতে দেখে । চুপচাপ হয়ে গেলাম একদম , একটু লজ্জাও পেয়েছিলাম বোধহয় , সুতরাং এশাকে হাসতে দিয়ে চুল চুইংগাম মুক্ত করার ব্যার্থ চেষ্টা করতে থাকলাম । মূলত এটাই ছিল এশার সাথে আমার প্রথম পরিচয় । তারপর আর কি ছয় ঋতুর আগাগোনা শেষে দেখি ওর হাত ধরে ধানমন্ডির এই রাস্তাটায় হেটে যাচ্ছি আমি । এশা মাঝে মাঝে যখন রেগে যায় তখন তার পুরো মুখটা টমেটোর মতো লাল হয়ে উঠে । আমার তখন মাথায় একটাই চিন্তা থাকে যে মানুষ রেগে গেলে তার মুখ টমেটো আকার ধারন করে কেন ! আমি ভবঘুরে , আপনভোলা টাইপের একটা ছেলে । এশার ভাল লাগা , মন্দ লাগাগুলো কখনো বুঝতে চেয়েছি বলে মনে পরে না আর যখন চেয়েছি তখন হয়তো এশা বলে না । আমার জানা হয়নি এই জানা শোনা আর চেনা অচেনার বেড়াজালে কখন আমরা দূরে সরে গেলাম । প্রথম ব্যাপারটা উপলব্দি করলাম সেদিনই যেদিন বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় আমার পাশে এশা ছিল না । অথবা ধোয়া উঠা কফির কাপ দুটোর একটা একদম ভর্তি ছিল । কিংবা হয়তো লেকের পানিতে রোদ্রের প্রতিচ্ছবি শুধু আমাকেই রাঙ্গিয়ে দিয়ে গিয়েছিলো তখন ।
রায়হানের ব্যাপারটা আসলে আমি তেমন পাত্তা দিতাম না । ছেলেটা এশার ক্লাসমেট এবং বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল । কখনো দেখিনি ছেলেটাকে , তবে সুদর্শন যে হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই । এশার কাছে শুনতে শুনতে মোটামুটি মুখস্থ হয়ে গেছে ছেলেটার সবকিছু । প্রথমদিকে বেশ আগ্রহ নিয়ে শুনতাম সবকিছু । কিন্তু যেদিন শুনলাম ছেলেটা এশাকে ভালবাসে । কেন যেন খুব অসহ্য লাগতো ছেলেটাকে । এশা পছন্দ করতো না তাই সিগারেট প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম । আবার বেড়ে গেলো সিগারেট এর মাত্রা , বিশাক্ততার মাঝে হারিয়ে যেতে থাকলাম আমি । তবুও বিশ্বাস ছিল এশার উপর । মেয়েটা যখন চুপচাপ হাত ধরে বসে থাকতো , কিংবা আলতো করে মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিতো সত্যিই সব ভুলে যেতাম । একটা সময় পড়াশোনার তাগিতে চলে আসলাম অন্য একটা জেলায় । জীবন যুদ্ধ এক অদ্ভুত যুদ্ধ , যেখানে সব খানে আহত হতে হয় । এশার সাথে যোগাযোগ সেলফোনে এসে ঠেকলো । ফোনের এপাড় ওপাড় শুধু অনুভূতির আদান প্রদান চলল । কতো যে ইচ্ছা করতো এশাকে একটা বার দেখার । ঢাকায় যখন যেতাম অল্প কিছুদিনের জন্য তখন এশার নানান মুখি সমস্যা থাকতো । সন্দেহ জাল বুনতে শুরু করে দিয়েছিলো ততদিনে , এশাকে সাফ বলে দিলাম রায়হানের সাথে না মিশতে । আমাকে অবাক করে দিয়ে এশা অস্বিকার করলো । আমার কি হয়েছিলো জানি না , ভয়াবহ রেগে গিয়ে যা তা বলে ফেলেছিলাম তাকে । সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হলো সেখান থেকেই । আমার জানা হলো না এশার দুঃখের সময়টা রায়হান আপন করে নিয়েছে ততদিনে । প্রতিদিনের ঝগড়ায় একদিন হুট করে এশা বলে ফেলল কথাটা । নিয়তিকে বড় নিষ্ঠুর মনে হলো হটাত্ । তারপর একদিন সম্পর্কের ইতি টানতেই হলো আমাদের । এশা জানিয়ে দিলো আমার সাথে আর হচ্ছে না , মিলছে না তার কিছুই । আমি শুধু চুপচাপ শুনে গিয়েছিলাম কথাগুলো । তারপর আবারো সেই সিগারেট । শুধু মাঝে মাঝে অনেক খারাপ লাগা নিয়ে লেকের পাশে চুপচাপ বসে থাকার মাঝে নিজের অস্তিত্বকে খোঁজার চেষ্টা করে যাই ।
আজকে অনেকদিন পর এশাকে আসতে বলেছি । স্কলারশিপটা পেয়ে গিয়েছি , জার্মানিতে চলে যাব এই তো কিছুদিনের মধ্যেই । অতীত থেকে বর্তমানে ফিরে আসলাম বৃষ্টির প্রথম ফোটা মুখের উপর পরায় । ডিঙ্গি রেসটুরেন্টের কাছাকাছি এসে পরেছি , একটু দ্রুত হেটে ডিঙ্গির নিচে দাড়িয়ে পরলাম । সিগারেট ধরালাম একটা , এক টান দিয়ে ধোয়া ছাড়তেই বৃষ্টির পানির সাথে মিশে গেলো । এশা যখন এলো তখন ঝুম বৃষ্টি নেমেছে , সেই আগের মতোই ধীর পায়ে ছাতা মায়া এগিয়ে আসছে সে । সে কাছাকাছি আসতেই সিগারেটটা ফেলে দিলাম । বৃষ্টির জমে থাকা পানিতে পরে ছ্যাত্ করে নিভে গেল সেটা । "তুমি আবার সিগারেট ধরেছো ?" ছাতা বন্ধ করতে করতে বলল এশা । জবাব দিলাম না , এশার দিকে তাকিয়ে আছি । ছাতা বন্ধ করে সরাসরি আমার দিকে তাকালো এশা । মনে হলো একটু যেন ধাক্কা খেয়েছে সে । এশাকে সেজে আসতে বলেছিলাম একটু , চোখে কাজল দিয়ে আসতে বলেছিলাম । এশা চোখে কাজল দিয়ে আসেনি , তার সিগ্ধ মুখটা কেমন যেন খালি খালি দেখাচ্ছে । "কি ব্যাপার চুপ করে আছো কেন ? বলো কেন ডেকেছো ?" আবার বলল এশা । এশার চিবুক বেয়ে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে নামছে , হটাত্ করে মনে হলো খুব আস্তে এশার চিবুক স্পর্শ করি , মুছে দিই পানির ফোটা । সামলে নিলাম দ্রুত , বললাম "কেমন আছো ।" এশা হাসলো , সে হাসির মাঝে কোন উচ্ছলতা নেই । বলল "হমম ভালই আছি । তুমি ?"-"হ্যা এই তো আছি একরকম"--"তারপর কি করছো আজকাল ?"-"তেমন কিছু না , জার্মানিতে চলে যাচ্ছি কিছুদিনের মধ্যে ।"--"ও আচ্ছা । ভাল" নিস্পৃহ কন্ঠে জবাব দিলো এশা । কি বলবো বুঝে উঠতে পারলাম না , খুব অসহায় লাগলো নিজেকে । আশে পাশে গুমোট অন্ধকার হয়ে আসা প্রকৃতির মাঝে যদি হারিয়ে যেতে পারতাম ! "আচ্ছা তুমি কি কিছু বলবা ? আমার যেতে হবে । রায়হান ওয়েট করতেছে আমার জন্য ।" আবারও বলে উঠলো এশা । কিছু বলতে পারলাম না , ধক্ করে উঠলো বুকের ভিতরে । অনুভূতিটা সুখকর নয় মোটেই , মাথা নিচু করে রইলাম । "অযথা এতো নাটক না করলেও পারতা । আর শোন আর কখনো কল করে এসব নাটক দেখাবা না আমাকে ।" এশা আবার বলল । ঝট করে উঠে দাড়ালো সে , তাড়াহুড়ো করে ছাতা খুলতে গিয়ে ছাতার একটা শিক ভেঙ্গে গেলো । আমি তখন এশার যাত্রাপথের উল্টোদিকে বসে আছি । ছপ ছপ আয়োয়াজ তুলে পায়ের শব্দ দ্রুত বৃষ্টির পানির সাথে মিলিয়ে যাচ্ছে । শেষ সিগারেটা ধরালাম , লাইটারটা বেশ পুরোনো হয়ে গিয়েছে , গ্যাস প্রায় শেষের দিকে । সিগারেট ধরিয়ে লম্বা একটা টান দিলাম , তারপর ধোয়াগুলো ছেড়ে দিলাম বাতাসের মাঝে । মানুষের জীবনের সমীকরনগুলো ক্ষণে ক্ষণে শাখা প্রশাখা বিস্তার করে , সব সময় তারা সুখকর হয় না । এই জ্বলন্ত সিগারেট আর ধূসর ধোয়ার মাঝে দেখা দুনিয়াটাকে খুব ঘোলাটে লাগে । জমে থাকা পানিরা আর আকাশের প্রতিবিম্ব ধরে রাখতে পারে না , বিক্ষিপ্ততার মাঝে হারিয়ে ফেলে প্রতিবিম্বকে । সিগারেট প্রায় শেষের দিকে , হটাত্ পিঠে ভয়াবহ একটা বাড়ি লাগায় হাত থেকে ছিটকে পরে গেলো সিগারেটটা । অবাক হয়ে পিছনে ফিরে দেখতেই দেখি এশা হাতা ভাজ করা অবস্থায় চুপচুপে ভেজা অবস্থায় দাড়িয়ে আছে । "অসভ্য ছেলে । দেখস নাই ছাতা ভেঙ্গে গেছে ? দেখস নাই আমি ভিজতেছিলাম ? যাস নাই কেন ফিরিয়ে আনতে ? সব সময় আমাকেই কেন তোর কাছে আসতে হবে ? এরপর যদি কখনো আসতে হয় প্রত্যেকবার দশটা করে ছাতার বাড়ি খাবি তুই ।" অশ্রুশিক্ত চোখে বলল এশা । আমি তখনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে । হটাত্ করেই মনে হলো ধূসর ধোয়ার আড়ালের পৃথিবীটাও অনেক সুন্দর । বিক্ষিপ্ত পানির আধারও আকাশের প্রতিবিম্ব ধরে রাখে তার প্রতিটি পানি কণার মাঝে । এশা হু হু করে কাঁদছে , খুব মায়া লাগছে দেখতে । এগিয়ে গিয়ে এশাকে জড়িয়ে ধরলাম । কান্নার মাঝেই ব্যাগ থেকে কাজলের স্টিক বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিলো সে । হেসে ফেললাম এবার , এশাও হেসে ফেলল । বাহিরে বৃষ্টির বেগ বাড়ছে , রাস্তার উপর জমা পানির বিক্ষিপ্ততা বাড়ছে । বিক্ষিপ্ততার মাঝে আমাদের প্রতিবিম্ব যদিও দেখা যাচ্ছে না তবুও আমি জানি পানির প্রতিটি কণা তাদের অভ্যন্তরে আমাদের প্রতিবিম্ব ধারন করেছে । শুধু কখনো প্রতিবিম্বের পরিস্ফুটন হবে না কখনো । থাকুক না অনেক গোপনে , সব কিছু পরিস্ফুটিত না হলেও তো চলে ।
কিছু কথা এবং উত্সর্গঃ
গল্পটা হ্যাপি এন্ডিং কেন দিলাম ? কেন দিলাম হ্যা ? আসলে রাগে দুঃখে হতাশায় হ্যাপি এন্ডিং দিয়ে দিছি কারন স্যাড এন্ডিং দিলে নায়ক ধোয়ার মাঝে অস্পষ্ট পৃথিবী দেখতে চাইতো যার ফলে তার অনেক অনেক সিগারেট লাগতো । এমনিতেই সরকার সিগারেটের দাম বাড়াইছে , নায়ক গরীর মানুষ আর যদি গরিব নাও হয় তাইলে অস্পষ্ট পৃথিবী দেখতে গিয়ে যে গরিব হয়ে যাবে তাতে আমার কোন সন্দেহ নাই । তাই অবিলম্বে সিগারেটের দাম কমাবার দাবি জানাচ্ছি নাইলে আমার গল্পের নায়কের কি হবে বলেন ?
এশার দৃষ্টিভঙ্গিটা উহ্য রাখলাম । এশা রায়হানকে কখনো ভালবাসেনি , ভালবেসেছে গল্পের নায়ককে । মাঝখানে ব্রেকআপের ব্যাপারটা আসলে ভুল বোঝাবুঝি আর অতিরিক্ত আত্মপক্ষ সমর্থনের ফলে হয়েছে । এশার দৃষ্টিভঙ্গির বিশ্লেষন আর করবো না । কারন রহস্য থাকা ভাল ....
এবার আসি উত্সর্গে । আমি জানি গল্পখানা পড়ে অলরেডি জুতা ছেড়ায় ব্যাস্ত আপনারা । কারন খুব ভাল করেই জানেন যে ভাল জুতা আমার গায়ে মারলে আমি জুতার ব্যাবসা শুরু করে দিব । আমার হাইট মাত্র পাচ ফুট দশ ইন্চি । জুতা মারলে মুখ মিস হওয়ার সম্ভাবনা আছে । এজন্য আমার পিছনে অর্নব ফায়েককে দাড় করায়ে দেওয়ার জোড় আবেদন জানাচ্ছি । তাতে আমার মুখ মিস হলেও ছয় ফুটি ঐ দৈত্যেরটার কখনই মিস হবে না । তাতে অন্তত মুখ সই করার আনন্দটা পাইবেন । হে হে
ফারিয়া জহির মেয়েটাকে আমার একদমই সহ্য হয় না । আমার কাছে যা কিছু ভাল লাগে সব এই মেয়ের কাছে বাজে লাগে । জিকু ভাইয়ের পাংখা দাড়ির স্টাইল তার ভাল লাগে না । অর্নইব্বার হেয়ালি তার ভাল লাগে না । সবচেয়ে বড় কথা আমার এতো সুন্দর এডিট করা ছবিটা (ভয়াবহ !) যেটা হাজারো তরুনি অজ্ঞান করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে তবে সেটা ভয়ে নাকি সৌন্দর্যে তা আমি অবশ্য জানি না , ঐ ছবি নাকি ভাল হয় নাই ! এইগুলা কোন কথা হৈলো ? তারপরও মানুষ বলে মেয়েটা নাকি অনেক লক্ষী , আমিও কিছু কিছু নিদর্শন পাইছি বটে । কিন্তু তাতে কি ? এই মেয়ে ভাল তাতে কি ? তাকে সহ্য হয় না ।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন