মানুষ না চাইতেই অনেক কিছুই নাকি পেয়ে যায়!! আর আমি হা হা হা যাহা চাই তাহাতো পাই না, আর যাহা চাইনা তাহাও পাইনা। কিন্তু জীবন চলার পথে একজন হঠাত এসে বারে বারে বলতে লাগলো- এই যে হ্যা আপনি, এখানে চুপচাপ এগিয়ে আসেনতো, যাহা আছে তাড়াতাড়ি দিয়ে দেন, এই বুকে জমা করে রাখি, কি হলো জলদি করেন।
লভে ইউ বৃষ্টি

নতুন নতুন ভার্সিটিতে ঢুকেছি, সেই উপলক্ষে আমার বড় মামার (ঘুষ খোর) কাছ থেকে পাওয়া একটি মোটর বাইক নিয়ে সারাদিন মাঞ্জা মেরে ঘুরে বেড়াই,মেয়েদের দেখলে বাইকের লুকিং গ্লাসে হাল্কা করে চুল ঠিক করে নিই। আর ক্লাস ফাকি দিয়ে আড্ডাতো আছেই। আমিতো বিন্দাস।

কিন্তু কোন এক শকুনের দোয়ায় আমার মনের হাম্বা হাম্বা বলদের হঠাত মৃত্যু বরন হইল। হায়!! আমার একি হইলো।

-হ্যালো ডারলিং কি করিতেছো?
-বেশি ভাব মারবানা, গত ২ দিন তুমি কোথায় ছিলা??
-আমি আমার চাচার সহিত গ্রামে গিয়াছিলাম...হে হে হে

একটা গুনাহ হয়ে গেলো। আমার ভালোবাসার এই মানুষটির সাথে মিথ্যা বললাম। আমি ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। গাধা ডাক্তার বলে কিনা আমার ২টা কিডনি ফেইল করেছে। গাধার গাধা কিডনি কি পরীক্ষায় বসেছে যে ফেইল করবে।

-গ্রামে যাও আর জাহান্নামে যাও ফোন বন্ধ কেন রাখছো!! Strange…

আমি নিজেই নিজেকে stranger ভাবছি। ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়েই বাইক নিয়ে চন্দ্রিমার লেকের পাড়ে শুয়েছিলাম পাক্কা ৩ ঘণ্টা। একি সাথে ২টা কিডনি। একটু আগে পিছে হইলেওতো আর কিছুদিন...নাহ আমি বেচে থাকতে কারো নিকট কোন মিনতি করবো না।

‘বেচে থাকার প্রবাদে আজ মৃত্যু জড়ালো,
কেন কিংবা কিভাবে নীল ছোবলে আমি একাকি।
আকাশটা টকটকে লাল মনে হয় নাকি এ আমার ভ্রম।
তোমার ভালবাসায় মুগ্ধ হে ঈশ্বর অন্তর্জামি
দেহ নিষ্পাপ পড়ে রবে থাকবোনা কেবল এই আমি।’(-নাঈম)

আমার বাড়িতে কান্নার সোর, হায় হায় মরার আগেই মরা কান্না। বড় মামার ঘুষ খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে গেল। কারন একটাই আমাকে যে করেই হোক বাচাতে হবে। বাবার সকল কিছু বিক্রি করার ব্যাবস্থা করা হল, ঐতো একি কারন আমাকে বাচাতে হবে। মায়ের চোখের ঘুম বিসর্জন দেয়া হল, কারন একটাই তার সোনা মানিক কে বাচাতেই হবে।

-এই হ্যালো তুমি কই, তোমার সমস্যা কি? আমাকে avoid করছো কেনো? এই ভাবেতো continue করা যায় না, তাই না।
-আচ্ছা তুমি কি আমাকে নিয়ে কোন দুঃস্বপ্ন কখনো দেখেছো।
-মানে কি?
-ইয়ে মানে যেমন মা কয়দিন ধরে সপ্ন দেখছে আমার বিয়ে। কি খারাপ সপ্নরে বাবা।
-এই হিমেল now I’m serious, হেলামি রাখো। খুলে বলো।

আমার খুলে বলতে ইচ্ছে করছে না। আমি ফোন নামিয়ে রাখলাম।

আমি এখন রাস্তায় রাস্তায় হেটে বেড়াই। আমার ভাবনা চিন্তা সব এলোমেলো হয়ে গেছে। আমার শরীর অনেক দুর্বল হয়ে গেছে। ওজন একটানে ৮ কেজি কমে গেছে। যাইহোক ভালোই হল এইবার six pack হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। তারপরি চাকিব খান কে হটিয়ে আমি নাম্বার ওয়ান।

পত্রিকা ওয়ালারা রিপোর্ট করবে- ওয়াও ভাই আপনার এই ৬ পোল্টার মাজেজা কি? কিছু বলেন প্লিজ, বাংলার যুব সমাজ এর জন্য আপনি আইডল। আমি একটু অট্ট হাসি নাহ মুচকি হাসি দিয়েই কথা শুরু করবো ভাবছি...

নাহ আমার এই সুন্দর ইণ্টারভিউটা বেশি দূর এগুতে পারল নাহ, পেছন থেকে কে যেন ডাকছে-

-এই যে শুনেন। হ্যা আপনাকেই বলছি। এই বৃষ্টিতে কেন ভিজছেন।
-জী আমার বাসায় পানি নেই তাই গোসল করছি।

অসম্ভব সুন্দরী একজন মেয়ে মনে হয় নতুন নতুন ডাক্তার হয়েছে বা ডাক্তারি পড়ছে। কারন তার পাশে zoology লেখা একটা বই। গাড়ির কাচ নামিয়ে আমার সাথে কথা বলছে। তার চেহারার উপর বৃষ্টির ফোটা যেন মুক্তোর মত জলজল করছে।

-শুনো গাড়িতে উঠে আসো। হিমেল আমি বর্ষা। মনে হচ্ছে ভুলে গেছো, আসো গাড়িতে উঠো।
-আমি অপরিচিতদের সাথে গাড়িতে উঠিনা, মা নিষেধ করেছে...

সে হাসছে, সেই আগের মত করে। বর্ষা আমার কলেজে পড়তো। লোক মুখে শুনেছি সে নাকি আমাকে পছন্দ করে। কিন্তু আমার পাশে এত সুন্দর রাজকন্যাকে মানাবে নাহ, রাস্তা ঘাটে লোকজন নিশ্চয় আড়চোখে তাকাবে আর বলবে- বাদরের গলায় মুক্তোর মালা। তাই আমি আরকি তার থেকে ১০০ হাত দূরে থাকতাম।

-করিম ভাই তুমি গাড়ি নিয়ে চলে যাও। আমি পরে চলে আসবো নে।
-আফা স্যার এ বকা দিবতো।
-না দিবে না, আমি বাবাকে ফোন করে দিবো।

ভিজা শরীর নিয়ে ডেটিং করা যায় না। আমার খুবি ঠান্ডা লাগছে।

-হিমেল কি হয়েছে তোমার, আমার দিকে তাকাও। প্লিজ।
-হা হা হা আমার কি হবে। তুমি কেমন আছো সেইটা বলো।
-আমি ভালো আছি।। নিজেকে আয়নায় দেখেছো ইদানিং...

ঐ যে আগে বলছিলাম আমি মাঞ্জা দিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। সেই আমি আর এই আমির মাঝে অনেক তফাত অনেক। কোন অন্ধ লোকও এই তফাত বুঝতে পারবে।

-আমি মানে সিনেমায় নামবো তাই ডায়েট করছি। মিশন ৬ প্যাক...হা হা হা।
-তোমার হেয়ালির স্বভাব যায়নি এখনো, সত্যি বলছি তোমাকে দেখতে মরা লাশের মত লাগছে।
‘Oh I wish I could touch you once,
I wish few more days to larn,
I wish so many wishes to you
One day we shall meet again near the Thames’ (-nyeeM)

-তোমার ফোন নাম্বারটা কি আজ দিবে? কলেজেতো দাওনি, বললে মা বকবে!!! আজ নিশ্চয় কোন সমস্যা হবে না।
-সমস্যা বিরাট সমস্যা, আমার বউ রাগ করবে।

সে আমার দিকে চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে। থাকুক আমার তাতে কি!!

আমি খুব করে চাইছি যেন কোন ডোনার না পাওয়া যায়। আমার ওপারের দৃশ্য দেখতে ইচ্ছে করছে। অইতো যেখানে আমি আর আমার হৈমন্তি মানে আমার ex গার্লফ্রেন্ড সিমা বসে থাকতাম, আজ আমার জায়গায় আরেকজন কে বসিয়েছে সে। বাহ! মানুষ এখন ঘড়ির কাটার চেয়েও fast।

-হিমেল কেমন আছো। তোমার শরীরের একি অবস্থা। যাইহোক পরিচয় করিয়ে দেই আমার ফ্রেন্ড রাসেল, রাসেল ও হচ্ছে হিমেল, আমরা একসাথে পড়ি।
-হায় রাসেল ভাই কেমন আছেন। ভাই কি খাচ্ছেন চটপটি। do you mind ভাই একটা ফুচকা নিলাম।
-please sure,আমি আরেক প্লেট অর্ডার করি।
-না না থ্যাংকস, সিমা আমি আসি রে, ভাল থাকিস।
বাহ! এই সিমা নামের মেয়েটাই কি আমাকে বলেছিল ভালবাসি, এই কি সে যার সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা চটপটি খেতে খেতে আড্ডা দিয়েছি। হায়রে আমার ভালবাসা, এই ভাবে সত্যিই continue করা যায় না, তাই না। হা হা হা।

ডোনার পাওয়া গেছে কিন্তু পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে। ২ দিন পরেই অপারেশন। সবাই এসে দেখে যাচ্ছে। বর্ষা কেও দেখলাম এসেছে। কিভাবে ঠিকানা যোগাড় করেছে কে জানে।

-কি আমাকে মানুষ মনে হয় না, না...
-বর্ষা আপনি এ কথা আমায় কেন বলছেন। আমি আবার কি করিয়াছি।
-চুপ একদম চুপ ঢং করবানা,...উ উ সাধু ভাষায় কথা বললেই সাধু হওয়া যায় না। I love you….

সে এই কথাটা মনে হয় অনেক দিন ধরেই বুকে জমিয়ে রেখেছিল, তাইতো আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বুকের ঢিপ ঢিপ বাদ্য শুনাচ্ছে। ঘর ভর্তি মানুষ তার ভে ভে কান্না দেখছে।

আমার নাকি অপারেশন হয়ে গেছে। আমারতো কিছুই মনে নাই। শুধু মনে আছে ৬ পোল্টা বিষয়ক ইন্টারভিউটা শেষ হয়েছে ভালোভাবেই।

-ওহ আমরা যেন কোথায় ছিলাম..
-হ্যা স্যার যা বলছিলেন আপনার ৬ পেক সমন্ধে।
-ও হ্যা হ্যা মনে পড়েছে। বলছিলাম আমাদের যুবক সমাজ খুবি কষ্ট করে নিজেকে সুন্দর দেখাতে ৬ পেক বানাতে কঠোর পরিস্রম করছে। কেউ কেউ গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে ডেটিংয়ের টাকা যোগাতে রাত বিরাতে অলিতে গলিতে পথচারীর কাছ থেকে সব কেড়ে নিচ্ছে। আবার কেউবা HIV থেকে দূরে থাকতে দেশি ব্রান্ড বাদ দিয়ে বিদেশি ব্রান্ডের জন্য ফার্মেসিতে ঢু দিচ্ছে। কিন্তু মন নামক বস্তুকে কেন যেন অবহেলা করছে এবং তাকে পরিপাটি করে সাজাতে ভুলে গেছে।
-আপনি অসাধারন বলেছেন, অনেক ধন্যবাদ যুব সমাজ সত্যি অনেক উপকৃত হবে।
-জী জী আমিতো তাদের নিয়ে খুবি আশাবাদি। I am not একদম fed up তাদের উপর। হা হা হা।

.........
আমার শরীরে যার কিডনি তার খোজ পাওয়া গেছে। সে আর কেউই নন আমার বড় মামা (ঘুষ খোর)। কিন্তু আমাকে কেন যে তার কিডনি ঘুষ দিল সেইটাই বুঝতে পারলাম নাহ।
........

অনেক বছর পরে একদিন বৃষ্টিতে ভিজছিলাম বাড়ির ছাদে। হঠাত কে যেন পিছন থেকে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আমাকে, আর বলল-
-এই যে সাধু বাবা আমার যদি জ্বর হয় তাহলে আপনার খবর করিবো। এখন যাহা আছে তাড়াতাড়ি দিয়ে দেন, এই বুকে জমা করে রাখি, কি হলো জলদি করেন।


 
Top