আবির স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে। আর অপেক্ষাকরতে ইচ্ছে করছে নাহ। এখন ৪ টা বেজে ৩২ মিনিট। ৫ টায় ট্রেন। সময় যেন শেষই হতে চায় নাহ। ওদিকে অহনাও এখনও আসেনি। এত লেইট করতে পারে মেয়েটা!
হঠাত্ করেই বিয়ে ঠিক হয়ে গেল অহনার। ছেলে বিদেশ থাকে। ছেলের বাবার অবস্থাওখুব ভাল। শুনে মনে হয় বেশ টাকা পয়সাও আছে ওদের। তাইতো অহনার অহংকারী বাবাও ছেলের হাতে মেয়ে তুলে দিতে মুহূর্তেই রাজি হয়ে গেলেন। বিয়ের আর একদিন মাত্র বাকি। ছেলে বিয়ে করে বউকে আমেরিকা নিয়ে যাবে।
সব এত দ্রুত ঘটে গেছে যে এখন আর পালিয়ে বিয়ে করা ছাড়া কোন উপায়ই নেই ওদের। বেকার ছেলের কাছে কে মেয়ে বিয়ে দিবে। তাই আবির অহনাকে এখানে আসতে বলছে। গন্তব্য ময়মনসিংহ। সেখানে আবিরের ছোটখালা থাকে। গেলে কোন না কোন ব্যবস্থা তিনি করবেন এ বিশ্বাস আবিরের আছে!
ঘড়িতে ৪ টা ৪৭ বেজেছে। সময়কে কে যেন স্থির করে দিয়েছে। এখনও অহনাই এসে পৌঁছায়নি। সেই প্রথম থেকেই লেইট অহনার। ক্লাসেও প্রতিদিন দেরি করে যেত। কত ঘন্টা যে ক্লাসের বাইরে ব্যাগ হাতে গাধার মত দাঁড়িয়ে ছিল আবির তার কোন হিসেব নেই। কিন্তু অহনার কাজল কালো চোখের দিকে তাকিয়ে কিছুই বলতে পারত নাহ ও। অহনা ফরসা না হলেও উজ্জ্বল শ্যামলা ওর গায়ের রং। নীল শাড়ি আর কালো কাজলে ওকে বেশ মানাত। প্রকৃতির যেন সমস্ত সৌন্দর্য দিয়ে ওকে নিজের মত করে সাজিয়েছে!
ওর হাত ধরেই ভালোবাসার প্রথম পরশ পেল আবির। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে যাওয়া, বৃষ্টির মধ্যে কাকভেজা হয়ে ফুচকা খাওয়া, অকারনে ঝগড়া করা, একটা ডেইরি মিল্কের জন্য দুদিন বন্ধ করা, মধ্যরাতে আইসক্রিম খাওয়ার বায়না করা, অর্থহীন কিছু পাগলামি করা, অজানা আকুলতায় কাছে টানা সব কিছুই যেন আবিরের জীবনকে পরিপূর্ন করে রেখেছে। ওরা ধূসর রংয়ের স্বপ্ন দেখত। স্বপ্নে বহুদূর হারিয়ে যেত। কখনও বা নীল আকাশে ভেসে বেড়াত।
অহনার মধ্যে এক আশ্চর্যরকম ক্ষমতা আছে মানুষকে ভালোবাসার। এক চিলতে হাসিতে চরম শত্রুকে পরম বন্ধুতে পরিনত করার ক্ষমতা খুব কম মানুষকেই বিধাতা দিয়েছেন। এমন একটা মেয়েকে জীবনসঙ্গীনি পাওয়া সোভাগ্যই বটে!
ট্রেন চলে এসেছে। কিন্তু অহনা এখনও আসেনি। অহনার ফোনে কল দিচ্ছে আবির। রিং হয়ে যাচ্ছে। কেউ ফোন ধরছে নাহ।
ট্রেন চলে যাচ্ছে। আবির অসহায়ভাবে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সমস্ত পৃথিবী যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে। চোখ থেকে অবিশ্রান্ত পানি পরছে ওর। চোখের পানিতে ট্রেন ঝাপসা হয়ে আসছে! আশেপাশের মানুষরা কর্মব্যস্ততা ভুলে তাকিয়ে আছে ছেলেটির দিকে। ছেলেটি গত চার বছর ধরে একই সময়ে এসে কারো জন্য দাঁড়িয়ে থাকে আর ট্রেন চলে গেলে নিশব্দে কাঁদে। এ দৃশ্য তাদের কাছে নতুন নয়। কিন্তু প্রতিবারই তারা ছেলেটা থেকে চোখ ফেরাতে পারে নাহ! ছেলেটির অশ্রুসিক্ত চোখে তাদের প্রিয়জনের জন্য গভীর ভালোবাসা দেখতে পায়!
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন