বর্তমান বিশ্বে একটি ভয়াবহ হুমকির নাম যৌন নিপীড়ন। ইংরেজিতে একে বলা হচ্ছে সেক্সুয়াল
হ্যারাসমেন্ট। অন্যান্য দেশগুলোর মত বাংলাদেশেও এই অভিশাপ ছড়িয়ে পড়েছে এবং আশঙ্কাজনক ভাবে বাড়ছে দিনকে দিন। মেয়েরা এখন কেবল রাস্তায় নয়, ঝুঁকির সম্মুখীন বাসায়,ক্যাম্পাসে, অফিসে বা যে কোনও জায়গায়। আর তাই এই নীরব অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার সময় এসেছে সবার। শুধু নারী নন, পুরুষরাই কি এই কদাচার থেকে মুক্ত থাকেন সবসময়? তাই সবাইকেই জোর গলায় প্রতিবাদ করতে হবে, এগিয়ে আসতে হবে আন্দোলনে।সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের আওতায় আছে যা যা-
প্রথমত, নিপীড়ন সরাসরি হতে পারে। যেমন- শারীরিক নির্যাতন, অন্যায়ভাবে স্পর্শ করা, অন্যায়ভাবে লোভ দেখিয়ে বা হুমকি প্রদর্শন করে কোনও খারাপ কাজে বাধ্য করা।
দ্বিতীয়ত, এই নিপীড়ন মৌখিক ভাবেও হতে পারে। যেমন- লিঙ্গ, শারীরিক খুঁত বা গঠন বা ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মন্তব্য করা,অশালীন মন্তব্য,জোকস বা গল্প শুনতে বাধ্য করা,বারবার সামাজিকভাবে আমন্ত্রণ জানিয়ে বিব্রত করা,লিঙ্গ বৈষম্য করা,পুরুষতান্ত্রিকতা বজায় রেখে অধিকার ক্ষুণ্ণ করা।
এছাড়া শিস দেয়া, অশ্লীল ছবি বা ভিডিও বা চিত্র দেখতে বাধ্য করা ইত্যাদিও যৌন নিপীড়নের অন্তর্ভুক্ত।
এর বিরুদ্ধে করনীয় কি হতে পারে?
যৌন নিপীড়নের ছড়িয়ে আছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। একে সমূলে উৎপাটিত করতে প্রথমেই মানসিকতার পরিবর্তন আবশ্যক। এছাড়াও কর্মক্ষেত্রে একে দূর করার জন্য দায়িত্বে থাকা প্রধান এবং কর্মচারী সকলকেই থাকতে হবে সমান ভাবে তৎপর।
অফিস প্রধানের দায়িত্ব-
১) সবাইকে বুঝিয়ে দিন, আপনি অফিসে এই ধরনের আচরণ কিছুতেই সহ্য করবেন না।
২) সমস্ত স্টাফকে এই ব্যাপারে সচেতন করে তুলুন নিয়মিত আলোচনার ব্যবস্থা রেখে।
৩) ম্যানেজার বা সমিতি প্রধান এই ধরনের যারা আছেন তাদেরকে বিশেষ ভাবে গড়ে তুলবেন, এবং নিশ্চিত করুন যে তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব পালন করছেন।
৪) কোনও অভিযোগ আসলে খুব ভালো করে খতিয়ে দেখুন।
৫) অভিযুক্তকে উপযুক্ত শাস্তি দিন যেন অন্যরা শিক্ষা নেয়।
৬) নিজেকে একজন নির্ভরযোগ্য বস প্রমাণ করুন।
যিনি শিকার হচ্ছেন তিনি কি করবেন?
কথা বলুনঃ
১) মুখ বুজে সহ্য করবেন না, প্রথমেই ভদ্রভাবে জানিয়ে দিন, এই আচরণকে আপনি অফেন্সিভ ধরে নিচ্ছেন।
২) জানিয়ে দিন আপনার উপর খারাপ প্রভাব পড়ছে, আপনার কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
৩) নিশ্চিত হয়ে নিন, আসলেই কী নিপীড়ন করা হচ্ছে? হলে তা কিভাবে? আপনার অপছন্দের কথাবার্তা বা আচরণ হলে সোজাসাপ্টা বিনয়ী ভাষায় জানিয়ে দিন।
খেয়াল রাখুনঃ
১) শুধু আপনার ক্ষেত্রেই নয়, অন্যদের ক্ষেত্রেও উত্যক্ত করা হচ্ছে এমন জোকস বা কথাবার্তাকে নিঃস্পৃহ করুন।
২) নজরে রাখুন, শুধু কি আপনিই শিকার হচ্ছেন? নাকি আর কেউ আছে এমন?
৩) অফিসে এরকম অভিযোগের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয় বা কোন কোন আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন সেটা কৌশলে জেনে নিন।
৪) প্রমাণ রাখার চেষ্টা করুন।
৫) আপনার কোনও শুভাকাঙ্ক্ষীকে জানিয়ে রাখতে পারেন।
৬) কখনও অপরাধীকে মুখের উপর হুমকি দিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনবেন না, কৌশল অবলম্বন করুন।
৭) প্রথমে ব্যক্তিগত ভাবে সমাধান করার চেষ্টা করতে পারেন, ফল না হলে দ্রুত কর্তৃপক্ষকে জানান।
সহকর্মী হিসেবে দায়িত্বঃ
যদি জানেন যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন এমন কেউ আছে আপনারই সহকর্মী, তবে তাঁকে অবশ্যই পাশে থেকে সাহস যোগান। কখনোই অপরাধীর পক্ষে কথা বলবেন না। একজন শিক্ষিত বিবেকবান মানুষের মত আচরণ করুন। অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ নিন সকলে মিলে। আজ না হয় কাল আপনাকেও তো এরকম পরিস্থিতির শিকার হতেও হতে পারে, তাই নয় কি?
আরও জানতে হবেঃ
আপনি নিজেকে যাচাই করুন, আসলে আপনার কোনও আচরণ এ ধরনের আচরণকে উৎসাহিত করছে না তো? যদি কিছু থেকে থাকে, সেই স্বভাব পাল্টান। আপনাকে যদি কোনও ভাবে নিপীড়ন করা হয়ে থাকে, চুপ করে থাকবেন না। হাসি বা চুপ থেকে এদের আরও উৎসাহিত করা হবে, তখন হয়তো পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে দেখা দিতে পারে। তাই, প্রথমেই সচেতন হয়ে যান। আর এ ধরনের ঘটনাকে কখনই হালকা ভাবে দেখার মত ভুল করবেন না।
আর নিপীড়নের শিকার অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন, তাঁদের জন্য পরামর্শ রইল- নিজের উপর বিশ্বাস হারাবেন না। দৃঢ়চেতা থাকুন, সম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে চলা শিখুন। অপরাধীকে শাস্তি দিন, প্রতিবাদী হন। আর নিজেকে সময় দিন। আর প্রয়োজনে কাউন্সেলরের সাহায্য নিতে পারেন। এতে মানসিক জোর বজায় থাকবে। কাছের বন্ধুর সাথে সব শেয়ার করে দেখেন, মন ভালো থাকবে।
আইনি সহায়তাঃ
নিপীড়নের বিরুদ্ধে কোর্ট থেকে বেশ কিছু আইন পাস করা হয়েছে। তাই অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া কঠিন কিছু নয়। এ ধরনের অপরাধের জন্য দুই থেকে সাত বছরের কারাদণ্ড, জরিমানা প্রভৃতি বিভিন্ন মেয়াদের শাস্তি দেওয়া হয়।
সবশেষে, পরামর্শ রইল, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদি হওয়ার, কেননা নিজের সাথে অন্যায় হতে দেওয়াও অনেক বড় অন্যায়। তাই সকলে হয়ে উঠুন সমাজের সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার কণ্ঠ।
হ্যারাসমেন্ট। অন্যান্য দেশগুলোর মত বাংলাদেশেও এই অভিশাপ ছড়িয়ে পড়েছে এবং আশঙ্কাজনক ভাবে বাড়ছে দিনকে দিন। মেয়েরা এখন কেবল রাস্তায় নয়, ঝুঁকির সম্মুখীন বাসায়,ক্যাম্পাসে, অফিসে বা যে কোনও জায়গায়। আর তাই এই নীরব অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার সময় এসেছে সবার। শুধু নারী নন, পুরুষরাই কি এই কদাচার থেকে মুক্ত থাকেন সবসময়? তাই সবাইকেই জোর গলায় প্রতিবাদ করতে হবে, এগিয়ে আসতে হবে আন্দোলনে।সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের আওতায় আছে যা যা-
প্রথমত, নিপীড়ন সরাসরি হতে পারে। যেমন- শারীরিক নির্যাতন, অন্যায়ভাবে স্পর্শ করা, অন্যায়ভাবে লোভ দেখিয়ে বা হুমকি প্রদর্শন করে কোনও খারাপ কাজে বাধ্য করা।
দ্বিতীয়ত, এই নিপীড়ন মৌখিক ভাবেও হতে পারে। যেমন- লিঙ্গ, শারীরিক খুঁত বা গঠন বা ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মন্তব্য করা,অশালীন মন্তব্য,জোকস বা গল্প শুনতে বাধ্য করা,বারবার সামাজিকভাবে আমন্ত্রণ জানিয়ে বিব্রত করা,লিঙ্গ বৈষম্য করা,পুরুষতান্ত্রিকতা বজায় রেখে অধিকার ক্ষুণ্ণ করা।
এছাড়া শিস দেয়া, অশ্লীল ছবি বা ভিডিও বা চিত্র দেখতে বাধ্য করা ইত্যাদিও যৌন নিপীড়নের অন্তর্ভুক্ত।
এর বিরুদ্ধে করনীয় কি হতে পারে?
যৌন নিপীড়নের ছড়িয়ে আছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। একে সমূলে উৎপাটিত করতে প্রথমেই মানসিকতার পরিবর্তন আবশ্যক। এছাড়াও কর্মক্ষেত্রে একে দূর করার জন্য দায়িত্বে থাকা প্রধান এবং কর্মচারী সকলকেই থাকতে হবে সমান ভাবে তৎপর।
অফিস প্রধানের দায়িত্ব-
১) সবাইকে বুঝিয়ে দিন, আপনি অফিসে এই ধরনের আচরণ কিছুতেই সহ্য করবেন না।
২) সমস্ত স্টাফকে এই ব্যাপারে সচেতন করে তুলুন নিয়মিত আলোচনার ব্যবস্থা রেখে।
৩) ম্যানেজার বা সমিতি প্রধান এই ধরনের যারা আছেন তাদেরকে বিশেষ ভাবে গড়ে তুলবেন, এবং নিশ্চিত করুন যে তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব পালন করছেন।
৪) কোনও অভিযোগ আসলে খুব ভালো করে খতিয়ে দেখুন।
৫) অভিযুক্তকে উপযুক্ত শাস্তি দিন যেন অন্যরা শিক্ষা নেয়।
৬) নিজেকে একজন নির্ভরযোগ্য বস প্রমাণ করুন।
যিনি শিকার হচ্ছেন তিনি কি করবেন?
কথা বলুনঃ
১) মুখ বুজে সহ্য করবেন না, প্রথমেই ভদ্রভাবে জানিয়ে দিন, এই আচরণকে আপনি অফেন্সিভ ধরে নিচ্ছেন।
২) জানিয়ে দিন আপনার উপর খারাপ প্রভাব পড়ছে, আপনার কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
৩) নিশ্চিত হয়ে নিন, আসলেই কী নিপীড়ন করা হচ্ছে? হলে তা কিভাবে? আপনার অপছন্দের কথাবার্তা বা আচরণ হলে সোজাসাপ্টা বিনয়ী ভাষায় জানিয়ে দিন।
খেয়াল রাখুনঃ
১) শুধু আপনার ক্ষেত্রেই নয়, অন্যদের ক্ষেত্রেও উত্যক্ত করা হচ্ছে এমন জোকস বা কথাবার্তাকে নিঃস্পৃহ করুন।
২) নজরে রাখুন, শুধু কি আপনিই শিকার হচ্ছেন? নাকি আর কেউ আছে এমন?
৩) অফিসে এরকম অভিযোগের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয় বা কোন কোন আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন সেটা কৌশলে জেনে নিন।
৪) প্রমাণ রাখার চেষ্টা করুন।
৫) আপনার কোনও শুভাকাঙ্ক্ষীকে জানিয়ে রাখতে পারেন।
৬) কখনও অপরাধীকে মুখের উপর হুমকি দিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনবেন না, কৌশল অবলম্বন করুন।
৭) প্রথমে ব্যক্তিগত ভাবে সমাধান করার চেষ্টা করতে পারেন, ফল না হলে দ্রুত কর্তৃপক্ষকে জানান।
সহকর্মী হিসেবে দায়িত্বঃ
যদি জানেন যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন এমন কেউ আছে আপনারই সহকর্মী, তবে তাঁকে অবশ্যই পাশে থেকে সাহস যোগান। কখনোই অপরাধীর পক্ষে কথা বলবেন না। একজন শিক্ষিত বিবেকবান মানুষের মত আচরণ করুন। অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ নিন সকলে মিলে। আজ না হয় কাল আপনাকেও তো এরকম পরিস্থিতির শিকার হতেও হতে পারে, তাই নয় কি?
আরও জানতে হবেঃ
আপনি নিজেকে যাচাই করুন, আসলে আপনার কোনও আচরণ এ ধরনের আচরণকে উৎসাহিত করছে না তো? যদি কিছু থেকে থাকে, সেই স্বভাব পাল্টান। আপনাকে যদি কোনও ভাবে নিপীড়ন করা হয়ে থাকে, চুপ করে থাকবেন না। হাসি বা চুপ থেকে এদের আরও উৎসাহিত করা হবে, তখন হয়তো পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে দেখা দিতে পারে। তাই, প্রথমেই সচেতন হয়ে যান। আর এ ধরনের ঘটনাকে কখনই হালকা ভাবে দেখার মত ভুল করবেন না।
আর নিপীড়নের শিকার অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন, তাঁদের জন্য পরামর্শ রইল- নিজের উপর বিশ্বাস হারাবেন না। দৃঢ়চেতা থাকুন, সম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে চলা শিখুন। অপরাধীকে শাস্তি দিন, প্রতিবাদী হন। আর নিজেকে সময় দিন। আর প্রয়োজনে কাউন্সেলরের সাহায্য নিতে পারেন। এতে মানসিক জোর বজায় থাকবে। কাছের বন্ধুর সাথে সব শেয়ার করে দেখেন, মন ভালো থাকবে।
আইনি সহায়তাঃ
নিপীড়নের বিরুদ্ধে কোর্ট থেকে বেশ কিছু আইন পাস করা হয়েছে। তাই অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া কঠিন কিছু নয়। এ ধরনের অপরাধের জন্য দুই থেকে সাত বছরের কারাদণ্ড, জরিমানা প্রভৃতি বিভিন্ন মেয়াদের শাস্তি দেওয়া হয়।
সবশেষে, পরামর্শ রইল, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদি হওয়ার, কেননা নিজের সাথে অন্যায় হতে দেওয়াও অনেক বড় অন্যায়। তাই সকলে হয়ে উঠুন সমাজের সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার কণ্ঠ।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন