ওই তুমি আমার কথা মনে করছিলে,তাই না?
ওই পাগল,ডিষ্টার্ব করিসনাতো!আমার অনেক কাজ।
- ও তাই!কি কাজ একটু আমিও শুনি?
: তোমারে বলা যাবেনা।
- কেনো!থাবরা দিয়ে দাঁত ভেঙ্গে ফেলবো!বলো কি করছিলে?
: ইশ্!সুন্দরীর হাতের থাবরা,সুস্বাদু than লাউয়ের লাবড়া! হা হা হা!- তুমি আর তোমার থার্ড ক্লাস জোক্স,পঁচে মরো!
আমি রাখি!
: এই শুনো শুনো! লাভ ইউ তো!
**সন্ধির উপর যত রাগ করেই থাকুক না কেনো,ওর মায়াজড়ানো কন্ঠে অর্পিকে আটকে রাখার ডাকে অর্পি না গলে পারেনা।
সেদিনও অর্পি গলে গিয়েছিলো যেদিন সন্ধি তাকে কবিতার ছলে নিেজর মনের কথা বলে ফেলে।
কত ছেলে তার পিছে পড়েছে কিন্তু কাউকে পাত্তা দেয়নি।
সন্ধিকে তার পাত্তা দিতে ইচ্ছে করছে,প্রচন্ড রকম ইচ্ছে! **
- ইহ্ আসছে উনার লাভ ইউ নিয়া!
: আমিই তো আসবো।আর কেউ আসলে হালার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে ফেলবো!
- বাদ দাওনা।বলোনা কি করছিলে?
: আগে বলো তুমি কি কারনে এত এক্সাইটেড!আমার কথা ভাবছিলে নাকি! হা হা
- তোমারা লেখক টাইপের মানুষগুলা এত ইতর গবেট টাইপ কেনো বলোতো!
আর একটা কথা আমি এক্সাটেড না মোটেও!
ব্যাপরটা হলো এই নিলে তিনবার ঠোটে কামড় পড়লো,ভাবলাম আমার কথা ভাবছো।তাই..
**অর্পি বাচ্চাদের মতো এখনো দুই শালিক দেখলে লাকি কিস দেয় কিংবা এক শালিক দেখলে মন খারাপ করে কার্স ব্রেক করে।
ঠোটে কামড় পড়াও ওই অদ্ভুত খেলাগুলোর মধ্যে পড়ে।কামড়ের জোরের উপর নির্ভর করে সুপারফিশিয়াল অনুভব নাকি ডিপ অনুভব!
এরকম এক পাগলামি করাকালীন সন্ধি অর্পির প্রেমে পড়ে।
ক্যাম্পাসের সবচেয়ে সুন্দর জায়গাটা সন্ধি আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখা,পাঁচতলার বিশাল বড় বারান্দাটার একটা কোণা,যেখানে বসে দিব্যি গল্প লিখতে পারে সে।
এরকমই একদিন ক্লাশ ব্রেকে বারান্দায় পিলারটা দখল করে নিয়ে চায়ে চুমুক দেয়।আনমনা হতে না হতে,উল্টাদিকের দোতালার বারান্দায় চোখ আটকে যায়!
একটা মেয়ে নিজের সাথেই কি জানি বিড়বিড় করে যাচ্ছে,রাগে মুখ লাল করে,কাউকে গালি দিয়ে যাচ্ছে মনে হলো।সন্ধি ক্যামেরাটা হাতে নিয়ে লেন্স ঠিক করছে,জুম করলো মেয়েটির উপর।হঠাৎ করে মেয়েটি কিছু একটা দেখে চোখ বড় বড় করলো!মুখে একটা মায়াবী আবার চঞ্চলতার ছাপ!সন্ধি এত প্রাণবন্ত হাসি আগে দেখেনি।তার নার্ভাস সিস্টেমের কাজ বেড়ে গেছে,হার্টবিট বাড়ছে।তারপর মেয়েটি দুইটা আঙ্গুল ঠোটে ছুয়ে কিস করলো,আবার উল্টোপিঠ করে কিস করলো।
সন্ধি মনে মনে ঠিক করে ফেললো সেদিন,এই মেয়েটাকে সে এই অদ্ভুত কিসের কথা একদিন জিজ্ঞেস করবে।**
: এই মেয়ে,কি হ্যাঁ! তোমার কথাই কি আমার সারাদিন ভাবতে হবে নাকি!আমার কি আর কাজ নেই?
- সেটাই!
:ওই আবার বাড়াবাড়ি! সেটাই আবার কি পাগল!তোমার কথাই ভাবছিলাম,নতুন একটা গল্প লিখছি।শেষ হলে পড়ে শুনাবো।
- নায়িকা কি আমি? হি হি!
: আরে আমার গল্পের নায়িকা তো তুমিই।কিন্তু এবারের গল্পে নায়িকা নেই!
- বলো কি!তাহলে তো গল্পো ফেইল।
: সব গল্পের নায়িকারা কি আর ফিরে আসে,কেউ কেউ হারিয়ে যায়।কেউ নিজ থেকে চলে যায়!
**অর্পির কাদঁছে খুব সাবধানে,যাতে সন্ধি না বুঝতে পারে।কিন্তু সন্ধি সবই বুঝে।তারপরও সে মানা করছেনা।কাঁদুক একটু!অর্পি যখন নিশব্দে কাঁদে,চোখ বেয়ে বেয়ে কষ্ট গড়িয়ে পড়ে তখন সন্ধি হা করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।সন্ধির ভিতরটা ভোঁতা ব্যাথায় মোচড় দিয়ে উঠলেও সে কেঁদে যাওয়া ভয়াবহ রুপসী মেয়েটার থেকে চোখ সরাতে পারেনা।
অর্পি অনেক ইমোশনাল!সন্ধির হাত ধরে যখন বসে থাকতো তখনও কাঁদতো,কাঁধে মাথা রেখেও চোখ বন্ধ করে কাঁদতো।সন্ধির খুব মায়া এই ইমোশনে ভরপুর মেয়েটার জন্য।
সন্ধি জানে অর্পি কেনো কাঁদে!অর্পির সন্ধিকে হারানোর খুব ভয়।অর্পির মতো ভালো ঘরের মেয়েদের কখনো সন্ধির মতো ছেলেদের সাথে বিয়ে হয়না।
অর্পি জানতো তার বাবা কখনো এ সম্পর্ক মেনে নিবে না।সে তার বাবাকেও যথেষ্ট শ্রদ্ধা করে।কিন্তু সন্ধির অবাধ আকর্ষনকে সে এড়াতে পারেনা।অনেক চেষ্টা করে মনের বিরুদ্ধে যাওয়ার,অবশেষে হার মানে।
সন্ধিও নাছোড়বান্দা!এই মেয়েকে কিছুতেই সে হারাতে চায়না।শুধু আকড়ে ধরে,আরো জোরে,যখনই অর্পি চলে যেতে চায়!
সে নিজেও বুঝে,সে সামান্য একজন বাংলায় মাস্টার্স করা ছেলে হবে,শিক্ষকতা হবে তার পেশা আর জীবনের তাগিদে সে লিখে যাবে কিছু গল্প।অর্পির মতো আর্কিটেকচারে পড়ুয়া মেয়েদের বাবারা কখনই এমন উজবুক বেকার,অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ছেলেদের কাছে নিজের মেয়ে দিবেনা।
তা সত্তেও সন্ধি অর্পিকে ছাড়তে পারেনা,অর্পিও সন্ধির হাত ছাড়তে চায়না।সে উচ্চাভিলাষী না,নিজের একটা ভালো চাকরী আর সন্ধির সাথে তার ছোটোখাটো সংসার।এর বেশী সে কিছু চায়না।
তারপরও একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের উদ্দেশে ওরা হেঁটে যেতে থাকে।**
-আচ্ছা শুনো রাখি এখন?
: হুম..
- খেয়ে নিয়ো,রাতে আর ফোন দিতে পারবোনা।
: কেনো!?
- বাবা কি যেনো কথা বলবে।
: ওকে,টাটা পিচ্চি!
- হুম।
**অর্পি জানে বাবা তাকে বাসায় আসা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে কথা বলবে।
বাবা তার দায়িত্ব পালন করছে।মেয়ে বড় হচ্ছে,মেয়েকে বিয়ে দিতে হবে,তার একমাত্র,মা হারা মেয়েটা।মেয়ের জন্য সে দ্বিতীয় বিয়ে করেনি,খুব যত্ন নিয়ে বড় করেছে।**
: অর্পি,তোর জন্য একটা বিয়ের ঘর এসেছে।ছেলে ভালো বুঝলি।আমার চেনা,আমার অফিসেই জব করে।
ফ্যামিলি ভালো,তুই কালকে দেখা করিস ওর সাথে।
- বাবা আমি বিয়ে করতে চাইনা এখন।
: তোকে তো আর এখনই বলছিনা করতে,দেখ কেমন লাগে আগে ছেলেকে।
- বাবা,আমি আসলে..বাবা ক্ষমা করো আমায় প্লিজ..
বাবা আমি একটা ছেলেকে ভালবাসি!
- কে!
: আমার ভার্সিটিতে পড়ে।
- ও! বাসা কোথায়?নিজেদের বাড়ি? তোকে রাখবে কোথায়?
: বাবা আমি এতো কিছু জানিনা,শুধু জানি আমি ওর সাথে সুখে থাকবো।
বাবা তুমি আশীর্বাদ করো আমাদের,আমরা পারবো দেখো।
- শোন মা,এরকম ভালবাসা দিয়ে দুইদিন বেঁচে থাকবি।তারপর যখন অভাব এসে কড়া নাড়বে তখন ভালবাসা যেদিক পায় সেদিক দিয়েই পালাবে।
: বাবা আমার উপর বিশ্বাস রাখো।
- আমি ছেলের বাবাকে কথা দিয়ে দিয়েছি।
: বাবা ওর সাথে একবার দেখা করো।
- আমি যা বলেছি ফাইনাল,তোর খারাপ চাইনা এটাতো বুঝিস?
: বাবা..
- যারে আমি একটু একা থাকবো।
** অর্পি কাঁদলো সারারাত,তার বাবাও হয়তো কাঁদছে।অর্পি জানে বাবা এখন মাকে মিস করছে।অর্পির সন্ধিকে ভুলে যেতে হবে।**
কয়েকদিন এভাবেই কেটে গেলো,সন্ধি পাগলের মতো অর্পিকে ফোনের পর ফোন আর টেক্সট দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু অর্পির কোনো রিপ্লাই নেই।বাসার বাইরেও ঘুরঘুর করেছে কয়দিন।কয়েকদিন বাদে অর্পির বান্ধবিদের কাছ থেকে জানতে পারলো তার অপরাজিতা অন্য কারো হতে যাচ্ছে।সন্ধির জগতটা এলোমেলো হয়ে যেতে লাগলো।অর্পিকে সে কিছুতেই হারাতে চায়না।
মেসেজে লিখলো-
: অর্পি আমি কাল টি.এস.সি তে 2টার দিকে অপেক্ষা করবো তোমার জন্য।কালই তোমাকে বিয়ে করবো।আসা/না আসা তোমার উপর ছেড়ে দিলাম!
** অর্পি একদিকে বাবার কথা ভাবছে,অন্যদিকে তার সন্ধি।সন্ধিকে ছাড়া অর্পি অন্য কারো সাথে জুড়তে পারবেনা।ভীষন পাপ হবে,ঘোর অন্যায় হবে।কি ভেবে ঠিক করে ফেললো সে ফিরে যাবে তার সন্ধির কাছে**
দু বছর কেটে গেলো,সন্ধি আর অর্পি একটা এক কামরার ঘরে ভাড়া থাকে।খুব কম জিনিষপত্র,যেগুলো একেবারে না লাগলেই নয়।তারপরও তারা গুছিয়ে নিয়েছে।সন্ধি সারাদিন টিউশনি করে,অর্পিও শোরুমগুলোও পার্ট টাইম জব করে।**
: এই চোখ বন্ধ করো।
- কি?
: আহা করো না
- এমনেই দাও,দুই বছর হয়ে গেলো,এখনও নতুন বউয়ের মতো লজ্জা!
: আরে! স্বাভাবিক কিছু চিন্তা করতে পারোনা? বন্ধ করো চোখ।
**অর্পি নিজের রোজগারের টাকা জমিয়ে সন্ধির জন্য শার্ট আর ঘড়ি কিনেছে।আজকে অন্য কারো আগমনবার্তা দিতে হবে সন্ধিকে!সন্ধি অনেক খুশি হবে অর্পি জানে,আশঙ্কাও থাকবে সব মিলিয়ে পথ চলার।তবে সে মানিয়ে নিবে সব।সন্ধি খুশিতে কাঁদবে আজ অর্পিকে বুকে জড়িয়ে রাখবে শক্ত করে।**
: সন্ধি আর কতক্ষন লাগবে তোমার?
- এইতো জ্যামে আছি।দেখি তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করছি।
: জানো বাবা এসেছে!মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছে।বাবা আমাদের ক্ষমা করে দিয়েছে সন্ধি।
- সত্যি বলছো! দাঁড়াও আমি হেঁটে আসার ট্রাই করছি,আর শোনো ভালবাসি কিন্তু!
** অর্পিকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হলো।ফুটফুটে একটা দেবশিশুর জন্ম দিয়েছে তারা।অর্পি আর কখনো দেখেনি সন্ধিকে,সন্ধির ও দেখা হলো না অর্পিকে কোলে নিয়ে বসে থাকা তার পুত্র সন্তানকে!
তাড়াহুড়ায় রাস্তা পার হতে গিয়ে সন্ধি বাসের নিচে চাপা পড়ে যায়।
পথচারীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে।অর্পির বাবা সন্ধির নাম্বারে ফোন দিলে এক পথচারী তাকে জানায় যে সন্ধি আর নেই।মৃত্যুর আগে সে অর্পি নামের একজনকে ডাকছিলো।**
: সন্ধি!...সন্ধি!
- কি?
: কই ছিলে,কতক্ষন ধরে ডাকছি তোমাকে..
- আচ্ছা মামনি,ওই তারা টা এত বেশী জ্বলে কেনো?
: ওই তারা টা তোমার বাপি,তোমাকে ইশারায় বলছে সে তোমার সাথে আছে!
- মামনি,বাপি কি তোমার সাথেও কথা বলে?
**হুম সন্ধি অর্পির সাথেও কথা বলতো।ওই এক কামরার রুম অর্পি ছেড়ে আসতে চায়নি।কিন্তু সেখানে সন্ধি শুধু তাকে ডাকে।সেখানে টিভির রিমোটে সন্ধির ছোয়া আছে,আলমারি,বিছানা,রান্নাঘরের চায়ের পাতিল,সবজি কাটার ছুরি..সব জায়গায়!
অর্পি পারছিলোনা আর।তাকে বাবার কাছে ফিরে আসতে হয়।
কিন্তু অর্পি এখন তার পিচ্চি সন্ধিকে নিয়ে খুব ভালো আছে।পুরোই বাবার উপর গেছে,সারাদিন অর্পিকে জ্বালায়।
এখনও হঠাৎ হঠাৎ আনমনে থাকলে সন্ধি এসে জিজ্ঞেস করে,"ভালো আছো তো?"
অর্পি জবাব দেয়না,শুধু কেঁদে যায়।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন