পঁচিশ বছর পরে/আবার তোমার সাথে/দেখা হবে/আসিবে তো/তুমি আসিবে তো/’
চোদ্দো-পনেরোর একটা মেয়ের কাছে পঁচিশ বছর একটা সংজ্ঞাহীন সময়! ফলে জীবনানন্দের ‘পঁচিশ বছর পরে’ কবিতাটা পড়লে ‘পঁচিশ বছর’ এই দীর্ঘ সময়কালকে ভেতরে অনুধাবন করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হতাম এবং আমার ভেতর এমন একটা হু হু বাতাস খেলা করে যেত যে বাতাসকে আমি আমাদের সেই টালার বাড়ির ছাদে ‘ফুটফুটে জ্যোৎস্না রাতে’ রেলমাঠে সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা সবুজ মেলট্রেনের স্তব্ধতার ওপাশে কিছু দেখতে না পাওয়ার সঙ্গে, শুধু ফাঁকফোকর দিয়ে বয়ে যাওয়া বাতাসের গন্ধের সঙ্গে তুলনা করতে পারতাম একমাত্র। আর সেই মেদুর মর্মর ধ্বনি আমাকে ভীষণভাবে শিহরিত করত। আর তখন সেই বয়সে যে আমার প্রেমিক ছিল– আমি ভাবতাম পঁচিশ বছর পর আবার তার সঙ্গে দেখা হবে…! আমি শুধু জীবনানন্দকে উপলব্ধি করতে গিয়ে তার সঙ্গে পঁচিশ বছর একত্রে কাটানোর মধ্যে যে প্রেমের সার্থকতা আছে তাকে বাতিল করে দিতাম। আমি চাইতাম এই প্রেম ছুটে যাবে হাত থেকে, এই প্রেম শিবির, ছাউনি পার হয়ে মিলিয়ে যাবে পশ্চিম আকাশে এবং তারপর পঁচিশ বছর পর আবার তার সঙ্গে দেখা হবে মাঠের ওপারে, হয়তো এই রেল মাঠের ওপারে, হয়তো তখন ভাঙা পাঁচিল জুড়ে গুল্মলতা, চোরকাঁটা, হয়তো তখন আমি খোঁপা বাঁধি, হয়তো তখন সে নাক উঁচু গম্ভীর, আর সেই পঁচিশ বছর নিজের ভেতরে না দেখা হওয়ার অনুভূতি, তাকে হারানোর বোধ, এবং তার পর এই দেখা হওয়া– এই সব ছন্দগুলো নিজের মনের ভেতর মিলিয়ে, কুরে কুরে নিজের ভেতর পঁচিশ বছরের একটা গল্প বানিয়ে ফেলতে ফেলতে, শুধু জীবনানন্দের প্রতি সৎ থাকতে থাকতে, কবিতার সঙ্গে আমার সম্পর্ক-চেতনাকে আরও প্রগাঢ় করে তুলতে তুলতে, গল্পের পরতগুলো বুনতে বুনতে, কে জানে, আজ মনে হয় আমি এভাবেই লেখক হয়ে গেলাম কি না!
কিংবা ‘আমাদের যেদিন গেছে চলে/সত্যিই কি গেছে/কই নেই/রাতের সব তারাই আছে/দিনের আলোর গভীরে/’ এই কবিতাটা বা এরকম আরও অনেক কবিতাকে বুঝতে চেষ্টা করে, তার ব্যথাকে স্পর্শ করতে গিয়ে, ‘আমরা দুজন একটি গাঁয়ে থাকি/সেই আমাদের একটি মাত্র সুখ/’ অথবা ‘লিখিত উহা ফিরত চাহো কিনা/’- এইসব কত কায়ক্লেশে, কত ‘না’- বিরহের আগুনে নিজেকে প্রতিনিয়ত সেঁকে, রোজ শুধু কষ্ট পেয়েছি এই ভেবে যে আছে সে আসলে নেই!
এখন সেই সব কবিতারা সহজ হয়ে এসেছে, তাদের আর অন্তরের তীব্রতা দিয়ে বুঝতে হয় না, তার আজ এই বাইশ-তেইশ বছর পর সব আপনা-আপনিই সত্যি হয়ে ঝরে পড়েছে জীবন আকাশে, শুধু কবিতাগুলোর সঙ্গেই জীবন কেটেছে– বললে ভুল বলা হয় না। কাব্যকে নয়, জীবনকেও নিজের মতো করে ভাঁজ খোলার সময় দিতে হত– এটুকুই মনে হয় এখন।
চোদ্দো-পনেরোর একটা মেয়ের কাছে পঁচিশ বছর একটা সংজ্ঞাহীন সময়! ফলে জীবনানন্দের ‘পঁচিশ বছর পরে’ কবিতাটা পড়লে ‘পঁচিশ বছর’ এই দীর্ঘ সময়কালকে ভেতরে অনুধাবন করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হতাম এবং আমার ভেতর এমন একটা হু হু বাতাস খেলা করে যেত যে বাতাসকে আমি আমাদের সেই টালার বাড়ির ছাদে ‘ফুটফুটে জ্যোৎস্না রাতে’ রেলমাঠে সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা সবুজ মেলট্রেনের স্তব্ধতার ওপাশে কিছু দেখতে না পাওয়ার সঙ্গে, শুধু ফাঁকফোকর দিয়ে বয়ে যাওয়া বাতাসের গন্ধের সঙ্গে তুলনা করতে পারতাম একমাত্র। আর সেই মেদুর মর্মর ধ্বনি আমাকে ভীষণভাবে শিহরিত করত। আর তখন সেই বয়সে যে আমার প্রেমিক ছিল– আমি ভাবতাম পঁচিশ বছর পর আবার তার সঙ্গে দেখা হবে…! আমি শুধু জীবনানন্দকে উপলব্ধি করতে গিয়ে তার সঙ্গে পঁচিশ বছর একত্রে কাটানোর মধ্যে যে প্রেমের সার্থকতা আছে তাকে বাতিল করে দিতাম। আমি চাইতাম এই প্রেম ছুটে যাবে হাত থেকে, এই প্রেম শিবির, ছাউনি পার হয়ে মিলিয়ে যাবে পশ্চিম আকাশে এবং তারপর পঁচিশ বছর পর আবার তার সঙ্গে দেখা হবে মাঠের ওপারে, হয়তো এই রেল মাঠের ওপারে, হয়তো তখন ভাঙা পাঁচিল জুড়ে গুল্মলতা, চোরকাঁটা, হয়তো তখন আমি খোঁপা বাঁধি, হয়তো তখন সে নাক উঁচু গম্ভীর, আর সেই পঁচিশ বছর নিজের ভেতরে না দেখা হওয়ার অনুভূতি, তাকে হারানোর বোধ, এবং তার পর এই দেখা হওয়া– এই সব ছন্দগুলো নিজের মনের ভেতর মিলিয়ে, কুরে কুরে নিজের ভেতর পঁচিশ বছরের একটা গল্প বানিয়ে ফেলতে ফেলতে, শুধু জীবনানন্দের প্রতি সৎ থাকতে থাকতে, কবিতার সঙ্গে আমার সম্পর্ক-চেতনাকে আরও প্রগাঢ় করে তুলতে তুলতে, গল্পের পরতগুলো বুনতে বুনতে, কে জানে, আজ মনে হয় আমি এভাবেই লেখক হয়ে গেলাম কি না!
কিংবা ‘আমাদের যেদিন গেছে চলে/সত্যিই কি গেছে/কই নেই/রাতের সব তারাই আছে/দিনের আলোর গভীরে/’ এই কবিতাটা বা এরকম আরও অনেক কবিতাকে বুঝতে চেষ্টা করে, তার ব্যথাকে স্পর্শ করতে গিয়ে, ‘আমরা দুজন একটি গাঁয়ে থাকি/সেই আমাদের একটি মাত্র সুখ/’ অথবা ‘লিখিত উহা ফিরত চাহো কিনা/’- এইসব কত কায়ক্লেশে, কত ‘না’- বিরহের আগুনে নিজেকে প্রতিনিয়ত সেঁকে, রোজ শুধু কষ্ট পেয়েছি এই ভেবে যে আছে সে আসলে নেই!
এখন সেই সব কবিতারা সহজ হয়ে এসেছে, তাদের আর অন্তরের তীব্রতা দিয়ে বুঝতে হয় না, তার আজ এই বাইশ-তেইশ বছর পর সব আপনা-আপনিই সত্যি হয়ে ঝরে পড়েছে জীবন আকাশে, শুধু কবিতাগুলোর সঙ্গেই জীবন কেটেছে– বললে ভুল বলা হয় না। কাব্যকে নয়, জীবনকেও নিজের মতো করে ভাঁজ খোলার সময় দিতে হত– এটুকুই মনে হয় এখন।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন