ছাদে বসে আছে কমল, সন্ধ্যা মিলাচ্ছে প্রায়। এই সময়টা তে আকাশের রঙ নিল থাকে না কোন এক অদ্ভুত কারনে আকাসে মায়া মায়া একটা রঙ হয়। নিজের মনে হাসল কমল মায়া মায়া নামে কোন রঙ নেই। হাল্কা বাতাস আসছে, কমলের ভালো লাগা কে বাড়িয়ে দিল বহুগুনে। মনে মনে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে কমল, তাঁকে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে কিছুদিনের মধ্যেই। কিন্তু কিভাবে, নিবে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না কমল। ঠিক এমন সময়েই পিছন থেকে হাউ করে উঠলো দিশা, চমকে গেল কমল। কমলের ভয় পাওয়া দেখে হাসতে হসাতে গড়িয়ে পরছে দিশা। কমল মুগ্ধ চোখে দেখছে দিশা কে। একটা মানুষ কি করে এত সুন্দর হয়???? আচ্ছা দিশা কি আগেও এত সুন্দর ছিল??? নাকি ইদানিং হয়েছে??? এমনও তো হতে পারে দিশা আগে থেকেই সুন্দর ছিল কমল খেয়াল করে নি, সময় পাল্টেছে তার সাথে সাথে কমলের দৃষ্টি ও। দৃষ্টি এমন একটা জিনিস যা সময়ের সাথে পরিবর্তন হবেই। দিশার হাসি রেকর্ড করে রাখতে পারলে ভালো হতো। মন খারাপ থাকলে শুনা যেত, হাসি তো নয় যেন একসাথে অনেকগুল কাচের চুড়ি রিনঝিনিয়ে বেজে উঠা। এই এমন করে কি দেখছ??? প্রশ্ন করে দিশা। এই প্রশ্নে ধ্যান ভাঙ্গে কমলের। বলে নাহ কিছু না তোমাকে দেখছি। তুমি কি জানো দিশা তুমি এই ছয় বছরে ঠিক আগের মতই রয়েছ। সময় বদলেছে আমি বদলেছি, কিন্তু তোমার রুপ যেন দিন দিন বাড়ছে। দিশা হেসে বলে তাই নাকি???? সুন্দর হওয়া তো ভালো কথা, কিন্তু এসব বাদ দিয়ে বল তুমি এখানে কেন??/ কে দিয়ে গেল??? জবাব দেয় না কমল। দিশা বলে চল ঘরে চল, আমি ইব্রাহিম কে ডাক দিয়ে আনছি ও তোমাকে ঘরে নিয়ে যাবে, কমল দিশার হাত ধরে বলে দিশা সারাক্ষন তো ঘরেই থাকি, থাকি না এখানে কিছুক্ষন, ঘরে দম বন্ধ হয়ে আসে আমার। দিশা অবাক হয়ে তাকায় কমলের দিকে, বলে কি ব্যাপার বাবু? কোন সমস্যা??? আমি কি কোন ভুল করেছি??? কি হয়েছে তোমার??? বলতে বলতে চোখে পানি আসে দিশার। কমল দিশার এই ব্যাপারটা খুব ভালো করেই জানে যে তার কিছু হলে দিশা অস্থির হয়ে পরে, খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। তাই নিজের কোন সমস্যা ভুলেও বলে না দিশা কে। নিজেকে সাম্লে নিয় কমল বলে না কোন সমস্যা নেই, ছাদে থাকতে ভালো লেগেছিল তাই বললাম আর কি, তোমার ভালো না লাগলে চল রুমেই চল। দিশা কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে আর কোন সমস্যা নাতো?? কমল কিছুক্ষন দিশার দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে হেসে উত্তর দেয়, নাহ। দিশা বলে এমনভাবে তাকিয়ে কি দেখ তুমি??? কমল বলে, তোমার দৃষ্টি দেখি, একটা জিনিস খুঁজি। দৃষ্টি বড় অদ্ভুত জিনিস। তোমার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝি না বলে হাসে দিশা।
সময়ঃ রাত সাড়ে বারোটা, কমলের বাসা থেকে চলে এসেছে দিশা, এসেছে অনেক আগেই। দিশার চিন্তা হচ্ছে কমল কে নিয়ে, কেমন যেন অদ্ভুত ব্যাবহার করছে কমল গতকয়েক দিন ধরে। কিছু লুকচ্ছে নিশ্চয়ই, কিন্তু কি?? আগে এমন ছিল না কমল কিন্তু এক্সিডেন্ট এর পর পর ই যেন কেমন বদলে যাচ্ছে সবকিছু। পরিবর্তন তা আনছে কমলই, আর খুব ধীরে ধীরে যেন দিশা বুঝতে না পারে, কিন্তু ব্যাপারটা দিশার নজর এড়ায় নি। কমল আর দিশার সম্পর্ক আজ প্রায় সাত বছর হয়ে এলো, দিশার এখনো মনে পরে সেই দিনের কথা দিশা আর তার ছোট বোন যাচ্ছিল স্কুলে, তার আগের দিন রাতে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে রাস্তা পানির নিচে। রাস্তায় পানি উঠে গেছে। রাস্তার একপাশে জে ড্রেন সেটা দেখা যাচ্ছিল না। এক সাইকেল ওয়ালা হর্ন বাজাতে বাজাতে দিশার দিকেই আসছে, দিশা ওই সাইকেল ওয়ালা কে সাইড দিতে গিয়ে নিজেই নর্দমার মধ্যে পড়ে গেল, সে কি লজ্জা, দিশা কান্না করছিলো ড্রেনে বসেই এম্ন সময় সেই সাইকেলয়ালা এসে টেনে তুলে দিশা কে, বই খাতাও তুলে দেয় তারপর এক ধমক লাগায় এই মেয়ে বেকুবের মতো কান্না বন্ধ করো, লজ্জা লাগে না এত বড় হয়ে কাদতে???? তারপর সাইকেলে বইখাতা নিয়ে হেঁটে বাসায় পৌঁছে দিয়ে যায় দিশা আর তার ছোট বোন কে। পরেরদিন সকালে যখন দিশা আর তার ছোট বোন স্কুলে যাবার জন্য বের হয় তখন দেখে সেই ছেলেটা দাঁড়ানো। হাতে কয়েকটা রজনীগন্ধা ফুল, সেগুলো দিশার হাতে দিয়েই বলে ইয়ে, মানে, আমি সরি ।আসলে কাল আমাকে সাইড দিতে গিয়েই এই ঘটনা। দিশা বলল রজনীগন্ধা ফুল এনেছেন কেন??? আমি এই ফুল পছন্দ করি না। কমল হড়বড় করে বলল গোলাপ দিলে তো আবার মনে করবেন আপনার প্রেমে পড়ে গিয়েছি এই জন্যই গোলাপ আনি নি। কমল তখন এইচ এস সি ক্যান্ডিডেট। ব্যাস তখন থেকেই দিশা কমল একসাথে। সময় গড়িয়ে আজ দিশা অনার্স ৩য় বর্ষে আর কমল তার এম বি এ শেষ করেছে দুই বছর আগে। এই ছয় বছরে একটা বারের জন্যও তাদের ঝগড়া বা ভুল বুঝাবুঝি হয় নি। দিশা যতবার ঝগড়া করতে চাইত কমল চুপ করেই থাকত একা একা দিশার ঝগড়া বেশী দূর আগাত না। পুরানো দিনের কথা ভাবতেই মুখে একটা হাসি চলে আসে দিশার। রাত কম হয় নি প্রায় দেড়টা বাজে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যায় দিশা।
রাত দেড়টাঃ কমল নিজের ঘরে বসা, সে বুঝতে পারছে না সুইসাইড করার জন্য কোন পথটা বেছে নিবে??? ছাদ থেকে লাফ দেয়া তার পক্ষে সম্ভব না, তাছাড়া ছাদে যাওয়াও অনেক ঝামেলার ব্যাপার। অনেকগুল ঘুমের ওষুধ খেতে পারে কমল কিন্তু তাতে যদি কাআজ না হয়???? নিজের প্রতি রাগ লাগছে কমলের। কি বিশ্রী লাইফ তার হয়েছে, সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকা নয়তো হুইলচেয়ারে বসে থাকা, এছাড়া আর কোন কাজ নেই তার। নিজের শরীরের উপর কনট্রোল তো নেইই এখন তো দেখল মৃত্যুর উপরেও নেই। এই জীবন রাখার চেয়ে না রাখা অনেক ভালো। কমলের বাবা সারা জীবন দেশের বাইরে বাইরেই কাঁটালো আর মা ব্যাস্ত তার সোসাইটি পার্টি নিয়ে, কমল চলে গেলে এদের জীবনে খুব বড় কোন পরিবর্তন আসবে না। জদিও দিশার দৃষ্টি ভঙ্গি মোটেও বদলায় নি কমলের প্রতি, দিশা এখনো পাগলের মতই ভালবাসে কমল কে। কিন্তু কমল জানে সত্যিটা জানার পড়ে দিশাও এমন থাকবে না, পরিবর্তন হবে, আর এই পরিবর্তন টাই দেখতে চাইছে না কমল। তাই সত্যিটা বলে নি দিশা কে, কমল বলে নি যে ডাক্তার বলেছে কমল কখনোই নিজের পায়ে দাড়াতে পারবে না আর, কখনোই ঠিক হবে না কমল। কাউকেই জানায় নি কমল এই কথা। দিশা জানে কমল সাময়িক ভাবে প্যারালাইজড। ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে। কমল চায় নি দিশার চোখে তার জন্য করুনা দেখুক। প্রতিটা মুহূর্ত প্রতিটা সেকেন্ড কে ভয় পাচ্ছে কমল, ভিশন ভয় পাচ্ছে। কে জানে কখন দিশা সত্যি জেনে যায়, কখন দিশার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যায়। দৃষ্টিভঙ্গি পালটানোর এই ব্যাপার টা কমল খুব কাছ থেকে দেখেছে, তার বড় মামাও প্যারালাইজড হয়ে পরেছিলেন। বড়ই করুন মৃত্যু হয়েছিলো তার, এক পর্যায়ে শরীরে পোকা ধরে গিয়েছিল। মামি সারাদিনে একবার মাত্র আসতো মামার রুমে জৈবিক কাজ এর জন্য, সারা দিন মামা একা রুমে পড়ে থাকতো কথা বলার মানুষের জন্য অস্থির হয়ে যেত, কাউকে না পেয়ে একা একাই কথা বলত। কমল যখন যেত তখন মামা শক্ত করে কমলের হাত ধরে রাখতো, যেন হাত ছাড়লেই কোথাও পালিয়ে যাবে কমল।অবশ্য দোষ মামি কেও দেয়া যায় না অসুখ বিশুখ কিছু দিনের জন্য ভালো দীর্ঘ পাঁচ বছরের জন্য নয়। সেবা শ্রুশ্রুষা করতে করতে এক্সময়য় বিরক্ত চলে আসে, সেই বিরক্ত জন্ম দেয় ঘৃণার। দিশার চোখে কমল নিজের জন্য ঘৃণা কখনোই সহ্য করতে পারবে না। ভয়ে গা কাঁটা দিয়ে উঠে কমলের, কিভাবে দেখবে সে দিশা বিরক্ত নিয়ে তার দিকে তাকাচ্ছে, মনে মনে রাগ করছে গাল দিচ্ছে। আবার মাঝে মাঝেই চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকাচ্ছে সেই দৃষ্টি ভালোবাসার দৃষ্টি নয় ঘৃণার দৃষ্টি। নাহ কিছু না কিছু করতে হবে কমলের।
কিছু দিন পরের কথা, কমল আর দিশা পাশাপাশি বসে আছে। আজ দিশার জন্মদিন। প্রত্যেক বারের মতো এবার কোন সারপ্রাইজ দিতে পারে নি কমল।
দিশাঃ কি ব্যাপার কিছু বলছ না যে???, কমল নিশ্চুপ।
দিশাঃ উয়িশ তো করতেই পার আমাকে। এবার কমল চোখ তুলে তাকাল। কাল শাড়ি পরেছে দিশা, কমলের ফেভারিট কালার। শাড়িতে সুন্দর লাগছে তোমাকে, রাজকন্যা রাজকন্যা টাইপের লাগছে। দিশা অল্প করে হাসল। কমল বলল জানো দিশা রাজকন্যা দের পাশে কাকে মানায়??? রাজপুত্র দের। কোন অর্ধমানব কে নয়। দিশার মুখ কালো হয়ে গেল, দিশা বলল কমল প্লিজ আজ না, আজকের দিনটা তোমার সাথে কাটাবো বলে বাসায় মিথ্যে কথা বলে এসেছি। এবার কমল বলল যাও আমার টেবিলের ড্রয়ারে একটা বক্স আছে ওটা নিয়ে আস, দিশা ড্রয়ার থেকে বক্সটা এনে কমলের হাতে দিল। কমল ছোট বক্সটা দিশার দিতে এগিয়ে দিয়ে বলল হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ। দিশা বক্স খুলে অবাক, গোল্ড এর একটা রিং। এত্ত সুন্দর যে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়েই রইল। কমল বলল জানতে চাইলে না যে কিভাবে কিনলাম???? দিশা নিশ্চুপ। আংটি টাকেই দেখছে, কমল একা একাই বলা শুরু করল অনলাইন শপিং একটা ব্যাপার আছে, ওখানে শপিং করাটা খুব সুবিধার তাই না???? অন্তত আমাদের মতো অতি ব্যাস্ত মানুষের জন্য, হা হা হা। দিশা বলল তোমার জন্য ও একটা গিফট আছে। কমলের দৃষ্টি তে প্রশ্ন দেখে দিশা বলল তোমার গিফট টা আজ বিকেলে দিব। আমি এখন বের হব। কমল বলল এই না বললে আজ সারা দিন কাটাবে?? হুম বলেছিলাম কিন্তু দরকারি একটা কাজ মনে পড়ে গেল, আমি বিকেলের মধ্যেই চলে আসব। কমলের অনেক ইচ্ছে করছিল যে দিশা কে বলে যেও না, থাক কিছুক্ষন এভাবে, তোমাকে মন ভরে দেখি, কিন্তু নিজের আবেগ কে চাপা দিয়ে বলল যাও। দিশা চলে গেল পেছন থেকে কমল দিশার চলে যাওয়া দেখল। সময় যেন কাটে না আর বিকেলে আসেই না, কমলের রাগ উঠছে দিশার উপর, দুপুরে খায় নি সে একসাথে খাবে বলে। একসময় দিশা ফিরে, দিশা কে দেখে চমকে যায় কমল কি ব্যাপার তোমার চোখ ফুলা কেন???? প্রশ্ন কমলের। দিশা তার জবাব না দিয়ে বলে তোমার গিফট এনেছি। ব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করে বলে এটা তোমার গিফট, কি এটা??? প্রশ্ন করে কমল??? দিশা বলে চল বিয়ে করি। আমার কাছে পেপার আছে জাস্ট সাইন করলেই হবে। কমল হতভম্ভ, সে ভাবে নি দিশা এই কাজটা করবে। কমল বলল এই কাজ টা কি ঠিক হবে দিশা?? দিশা বলে কেন নয়?? গত বছরি তো আমাদের বিয়ের কথা ছিল, তোমার এক্সিডেন্ট এর জন্য না পিছান হোল বিয়েটা। কমল বলল সময় বদলে গেছে দিশা, আমিও বদলে গিয়েছি, তাছাড়া আমি সিউর যে তোমার পরিবার ও এখন আমার কাছে তোমাকে বিয়ে দিবে না। দিশা শান্ত ভঙ্গিতে বলল আমি তো বদলাই নি, ঠিক ই আছি, তাছাড়া কয়েক মাস পরেই তো তুমি ঠিক হয়ে যাচ্ছ, তখন আমার পরিবার ও মেনে নিবে। কমল আর কথা না বাড়িয়ে বলে যা বলছ ভেবে বলছ তো??? দিশা বলল ভাবাভাবির কিছু নেই। কমল বলল ওকে রেখে যাও কাগজটা, পড়ে সাইন করে দিব নে।
রাত ১ টা দশঃ কমলের মনে প্রচণ্ড ঝড় উঠেছে, দিশা অনেক খানি এগিয়ে গেছে, এতটা আগাতে দেয়া ঠিক হয় নি, সব দোষ কমলের আরও আগেই ব্যাবস্থা নেয়া দরকার ছিল। নাহ মেয়েটার জীবন এভাবে নষ্ট করা ঠিক হবে না, ড্রয়ার থেকে কমল ঘুমের ওষুধ গুলা নিল। খাটের পাশেই পানির গ্লাস। পাশেই তার বিয়ের কাগজ, হলেও হতে পারত সুন্দর একটা জীবন। হাত বাড়িয়ে কাগজ টা স্পর্শ করল কমল। একি!!!!! এটা তো একটা চিঠি। দিশার চিঠি।
সেখানে লেখাবাবু জানো প্রতিদিন ভয়ে থাকতাম আমি, এই বুঝি তুমি আমাকে সব সত্যি খুলে বল, এই বুঝি বল, কিন্তু না তুমি বল নি। তুমি যে সত্য লুকিয়েছ টা আমি ওইদিন থেকেই জানি যেদিন থেকে তুমি লুকাচ্ছ। আমি ভেবেছিলাম আমার কাছে গোপন করেছ কারন আমাকে কষ্ট দিতে চাও না, কিন্তু আমি এটা ভাবি নি যে আমার কাছ থেকে দূরে সরার জন্য এগুলা করছ। তোমার এক্সিডেন্ট এর পড়ে তুমি সবসময় আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে, আমার মধ্যে কোন পরিবর্তন এসেছে কিনা তা বুঝার চেষ্টা করতে, আমি হলপ করে বলতে পারি তুমি আমার মধ্যে কোন পরিবর্তন পাও নি। তুমি চেয়েছিলে ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে আমি সেটাও হতে দেই নি। কিসের এত ভয় তোমার কমল???? ভালবাসার প্রতি এত ঠুনকো বিশ্বাস???? তুমি ভাবলে কি করে যা তোমার মামার সাথে হয়েছে সেটা তোমার সাথেও হবে????? তোমার মামির দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে বলে আমারটাও হবে???? যেই চোখ দিয়ে আমি ভালবাসা নিয়ে তোমার দিকে তাকাই সেই চোখ, সেই দৃষ্টি দিয়ে ঘৃণার নিয়ে তোমার দিকে তাকাব??? এই অধিকার আমার দৃষ্টি কে আমি দেই নি, আজ না, কাল না, দশ বছর পড়ে না এমনকি একশ বছর পরেও না। তুমি যদি চাও তবে এই দৃষ্টিই আমি রাখবো না। তখন নিশ্চই আমাকে গ্রহন করতে তোমার কোন আপত্তি থাকবে না???? দুনিয়াতে এমন মানুষ আছে হয়ত যার দৃষ্টি না থাকায় তার ভালোবাসার অন্তরায় হয়েছে, আমিই দুনিয়ার প্রথম মেয়ে হয়ত যার দৃষ্টি থাকা টা ভালোবাসার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম এই দৃষ্টি আর রাখবো না। আমার দৃষ্টি দিয়ে কেউ তার জীবন ভালবাসায় পূর্ণ করুক আর আমি দৃষ্টিহীন হয়ে আমার জীবন ভালবাসায় পূর্ণ করি। আগামিকাল ১১ টায় আমার অপারেশন, ব্লাড মেচিং, ক্রস মেচিং জনিত ঝামেলা আগেই সেরে ফেলেছি। আমাকে ছেড়ে যেও না কমল আমার তোমাকে দরকার, তোমার দৃষ্টির দরকার নয়ত এইজিবনে চলব কি করে??? ড্রয়ারে রাখা ওষুধ গুলো ফেলে দাও বাবু। আর আমার জন্য অপেক্ষা করো।
কমল চিঠি পড়ে সাথে ফোন দিল, দিশার মোবাইল বন্ধ। টি এন টি তে ফোন দিল কেউ ধরল না, আতঙ্কে সারাটা রাত কাটল কমলের। সকাল হতে না হতেই ফোন দিতে লাগলো কিন্তু মোবাইল বন্ধ, আজ যদি দিশা কিছু করে ফেলে কমল নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না কখনোই। হাজার বারের মতো ফোন দিল কমল কিন্তু বার বার একি আওয়াজ ভেসে আসছে। আপনি যে নাম্বারে কল করেছেন তা এখন বন্ধ.................. কমল দিশার ফোন খোলা পেল সকাল সাড়ে দশটার দিকে। হ্যালো দিশা??????? ওপাশ থেকে কোন কথা নেই। এপাশ থেকে বাচ্চাদের মতো চিৎকার করে কাদছে কমল। এত চেষ্টা করছে কথা বলার কিন্তু মুখ দিয়ে কোন আওয়াজ বের হচ্ছে না। দিশা ফিরে এসো এই শব্দ টা কমলের মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না, দিশা কি পারবে আজকের চোখের জলের ভাষা বুঝতে???? দিশা কি বুঝল কে জানে?? ওপাশ থেকে ফোন কেটে দিল/ গেল।
সাত বছর পরের কথাঃ ছাদে বসে আছে কমল, এখন শুধু সন্ধ্যা না সারা দিনই আকাশে মায়া মায়া একটা রঙ থাকে। মায়া মায়া একটা রঙ আসলেই আছে। সব দৃষ্টি দিয়ে সেটা দেখা যায় না, ভালোবাসার দৃষ্টি ছাড়া। পিছন থেকে হাউ করে উঠলো দিশা, কমল এখন আর চমকায় না কারন দীর্ঘ সাত বছরে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে তারপরও দিশার হাসি দেখার জন্য চমাকন একটা ভাব করল। দিশা হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। কমল মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে তার মায়া রঙটার দিকে। দিশা বলে আবারো কি দেখছ এভাবে??? এখন থেকে কিন্তু আমিও হাঁ করে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকব। হাসছে দিশা। দিশা বলেছিল তার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাবে না, কিন্তু বদলেছে, তাদের ভালবাসা তিব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। হুইলচেয়ার কমলের পিছু ছাড়ে নি। কিন্তু জীবনের এই পথে ভালভাবেই চলতে পারে কমল কারন কেউ একজন গভীর মমতায় শক্ত করে ধরে রেখেছে তার হাত। ভালোবাসার শক্তি অনেক বড় শক্তি যার জোড়েই সচল জীবন, সচলদেরও আবার অচলদেরও।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন