আমি রোহান । তিন ভাই বোনের মাঝে সবার বড় । আমার ছোট দুই বোন আছে । বাবা মায়ের আদরের ছেলে ।দাদা এবং নানার পরিবারের বড় নাতি । বলতে গেলে আমার জন্ম হয়েছে আদরের জন্য । মাঝে মাঝে আব্বু বলে “ আদর কে যদি ওজনে মাপা যেত তাহলে আদরের ওজন তোর থেকে শত শত গুন বেশী হত ” ।
সবাই ভাবছেন আমি কোটিপতি পরিবারের আদরের ছেলে…তাই না ? আদতে তা নয় । আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সবচেয়ে আদরের ছেলে ।ছোট থেকেই যখন যা চেয়েছি তাই পেয়েছি । ছোট থেকে বড় হতে হতে কখন যে এস.এস.সি পরীক্ষা দিয়ে কলেজে উঠলাম টের পাই নি । এই কলেজ জীবনে পেয়ে গেলাম কিছু চেয়ে না পাওয়ার স্বাদ ।
এইবার আসি মূল গল্পে ।
আমি মেয়েদের সাথে খুব কম কথা বলতাম । কলেজে উঠার দুই দিন পর আমি , টিপু , বাবু কলেজে ক্লাস শেষে আড্ডা দিচ্ছিলাম ।হঠাৎ একটা মেয়েকে দেখে আমি পুরা থ হয়ে গেলাম । মেয়েটা দেখতে খুব সুন্দর । একবার মেয়েটার চোখাচোখি হয়ে গেলাম । মেয়েটা কে প্রথম দেখেই এই চারটা লাইন মাথায় ঘুরতে লাগল । প্রথম দেখাতে আমি প্রেমে পরেছি তোমার চোখেতে চোখ আমি রেখেছি আসো যদি তুমি বুকে ভালোবাসার আবেশে নেবো জড়িয়ে
খোঁজ নিয়ে জানলাম তার নাম রোদেলা । মনে মনে ভাবলাম (ROHAN + RODELA = What a Chemistry….) । কয়েকদিন পর পেয়ে গেলাম তার মোবাইল নাম্বার । আমি ক্লাস খুব কম করতাম । ক্লাসের সামনের দরজা দিয়ে ঢুকতাম শুধু তাকে এক নজর দেখার জন্য আর ওকে দেখে দশ মিনিট পর ক্লাসের পিছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে যেতাম । ওর নাম্বার থাকা স্বত্তেও ওকে আমি কখনো ফোন দিই নি ভয়ে । কিন্তু ওকে যত দেখি আমি মুগ্ধ হয়ে যায় । এইভাবে কলেজ জীবনের এক বছর পার হয়ে গেল । তবুও রোদেলাকে বলা হয়নি আমার ভালোবাসার কথা । ভেবেছিলাম ভুলে যাব । রোদেলা কে কলেজের অনেক ছেলে পছন্দ করত । শুনেছিলাম অনেক ছেলে ওকে প্রপোজ করেছিল । সবাই কে ও না করে দিল । 1st year এ আমরা একই ব্যাচে ইংরেজী প্রাইভেট পরতাম । ঐখানেও ওর সাথে কখনো কথা বলি নি । লুকিয়ে লুকিয়ে ওকে দেখতাম । একদিন ওর দিকে তাকাতে গিয়ে চোখাচোখি হয়ে গেলাম , দেখলাম ও হাসতেসে । আমি লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে ফেললাম । আর মনে মনে বললাম মুছকি হেসে যখন তুমি দেবে আমার প্রেমে সাড়া তখন এই অবুঝ আমি হয়ে যাব দিশেহারা
এভাবে দিন কেটে যায় । কিন্তু বলব বলব করে বলা হয় না আমার ভালবাসার কথা । একদিন প্রাইভেট এ গিয়ে দেখি ও একটা ছেলের সাথে কথা বলতেসে । ঐদিন রাতেই বন্ধুদের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানলাম ও ছেলেটাকে ভালোবাসে । এবং মাএ দুই দিন হল ওদের প্রেমের । আমিতো পুরা থ । কিযে কষ্ট হচ্ছিল বলে বুজাতে পারবো না । জীবনে এত কষ্ট কখনো পাইনি ।
দেখে যাও এসে প্রিয়া আমার বুকের ভিতর তোমার প্রেমের তাজমহল
সারাজীবন ভরে যে স্বপ্ন বুকে নিয়ে বেঁধেছি আমি সুখের ঘর কষ্টের নোনা জলে মেঘের আধাঁর দেখে করো না আমায় কভু পর
হঠাৎ ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বন্ধুর ডাক শুনে বুজতে পারলাম আমি এতক্ষণ আনমনা ছিলাম । ও বলল : মামা তোরে আগেই বলেছিলাম ওরে তোর ভালোবাসার কথা বলে ফেল । আমি : বাদ দে । আমি যেমন ব্যাক্তিগত ভাবে ওকে পছন্দ করি ঠিক ওরও ব্যাক্তিগত পছন্দ অপছন্দ থাকতে পারে । ও : কথাটা মন থেকে বলতেসস ত ? আমি : হুমম । ( ওকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে লাইন টা কেটে দিলাম ) এরপর ও বারবার কল দিতে লাগল । কিন্তু আমি রিসিভ করলাম না । বুঝলাম ও আমাকে স্বান্তনা দিবে ।
ঘড়ির দিকে তাকালাম । রাত ১২:১৭ বাজে । বারান্দায় বসে আছি । কি করব কিছু বুজতেসি না । প্রচুর কাঁদতে ইচ্ছে করতেসে । জীবনে এত কষ্ট কখনো পাই নি । হঠাৎ বুঝলাম চোখ থেকে পানি পরতেসে । কিছুক্ষণ পর রুমে ঢুকে গীটার টা নিয়ে আবার বারান্দায় বসলাম । নিজে নিজে সুর তুলে গাইলাম
মনের পাখি যায় উড়ে যায় এই মন আমার কাঁদে নিরালায় মন মানে না একাকীর যাতনা মন বোঝে না সে যে কি বেদনা
মনে মনে বললাম আর যা করি রোদেলার কোনো ক্ষতি করব না । পারলে ওর উপকার করব । সারারাত নিঘু্র্ম ছিলাম । ( এভাবে কত রাত যে নিঘু্র্ম কাটালাম আমি নিজেও জানি না )
সকালে কলেজে গেলাম যথারীতি তাকে দেখতে । ক্লাসে ঢুকলাম । বন্ধুরা দেখেই বুজে গেল যে সারারাত নিঘু্র্ম ছিলাম । বন্ধুরা আমাকে স্বান্তনা দিচ্ছে । আমি বললাম দূর শালা এইটা ব্যাপার না ( কথাটা বলার সময় বুকটা ফেটে যাচ্ছিল )
পুরা ক্লাসের ভিতর চোখ বুলাতে লাগলাম রোদেলাকে দেখার জন্য । তখন আমার একটা বন্ধু বলল ব্যাপার না হলে ওকে ক্লাসের ভিতর খুঁজতেসস কেন ? আমি চুপ হয়ে গেলাম । তখনো ওকে খুঁজতে লাগলাম । কিছুক্ষণ পর দেখলাম ও আসতেসে । কিন্তু চেহারা দেখে বুজলাম কিছু একটা হয়সে যার কারণে ওর মন খারাপ । ২ মিনিট পর আমার বন্ধু সময় এসে বলল মামু রোদেলাকে কলেজ গেইট দিয়া ঢুকার সময় অনার্স এর মিঠু ভাই আর জিহাদ ভাই চরম Foul talk করসে । কথাটা শুনে আমার মাথা পুরা খারাপ হয়ে গেসে । হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম স্যার আসতে ২০ মিনিট বাকী আছে । আমি বন্ধুদের কে বললাম আজ জিহাদ ভাই আর মিঠু ভাই ২টারে মারমু এবং এখন । জাহিদ বলল বাদ দে । রোদেলা ত তোর কিছু না । ওর জন্য মারামারি করার কি দরকার ? আর উনারা আমাদের ৩ ব্যাচ সিনিয়র । উনাদের সাথে ১টা মেয়ের ব্যাপার নিয়া মারামারি করলে কলেজের নেতারা আমাদের কে চাপ দিবে । আমি বললাম সবাই ক্লাস থেকে বের হ । কথা আছে । আমি আর কিছু না বলে বের হয়ে গেলাম । পিছন থেকে সবাই আমাকে ডাকতেসে । আমি পিছনে ফিরে তাকালাম না । সবাই বুজে গেছে আজ আমার একরোখা জিদ উঠে গেছে । ওরা আমার ছোটবেলার স্কুল জীবনের বন্ধু । ছোটবেলা থেকে আমরা একসাথে বড় হয়েছি । ওরা ভালো করেই জানে আমি চুপচাপ থাকি কিন্তু আমার জিদ উঠে গেলে যেটা বলি সেটা করেই ছাড়ি । তাই ওরাও ( প্রায় ৪৩ জন ) আমার পিছন পিছন বের হয়ে গেল । আমাদের গ্রুপ টা কলেজের সবচেয়ে বড় গ্রুপ । জাহিদ গ্রুপ লিডার । আর আমি ডেপুটি । আমরা সবাই মাঠের একপাশে দাড়ালাম । জাহিদ কে বললাম বড় সমস্যা হলে তুই জাবেদ ভাই কে ম্যানেজ করিস ( জাবেদ ভাই জাহিদ এর চাচাত ভাই , আমাদের কলেজের ভি.পি )
ও বলল ঠিক আছে । এরপর জাহিদই প্লান করল সব । ও বলল আমরা ১০জন যাব । বাকীরা ক্লাসে চলে যা । এরপর জাহিদ বলল উনাদের সামনে দিয়া হেঁটে যাব আমরা । যাওয়ার সময় কয়েকজনের হাতে থাকবে সিগারেট আর একজন অন্যজন কে গালি দিব । যদি উনারা ডাক দেয় তাহলে নিজ থেকেই আমরা লেগে যাব । আর যদি কিছু না বলে তাহলে অন্য প্লান হবে । যে কথা সে কাজ হয়ে গেল । উনারাও ডাক দিলেন সাথে সাথে কেউ কিছু বলার আগেই আমি লাথি দিলাম । এরপর মারামারি শুরু । ২ মিনিট এর মধ্যে উনাদের কিছু বন্ধু ( প্রাই ১৭-১৮ জন ) এসে আমাদেরকেও মারা শুরু করল । আমাদের ক্লাস থেকে মাঠ দেখা যায় । আমাদের বন্ধুরা সবাই ক্লাস থেকে বের হয়ে আমাদের সাথে যোগ দিল । এরপর উনাদেরকে বেশী মারি নি ( প্লান ছিল মারব কিন্তু রক্ত বের হবে না । পরিস্হিতি এমন হল যে উনাদের আর আমাদের কয়েকজনের মুখ , হাত ,পা কেটে গেছে )
এটা বড় ভাইদের কানে যেতে বেশী দেরী হয় নি । স্যাররাও আমাদের উপর ক্ষেপে গেছে বড়দের গায়ে হাত দেওয়ায় । প্রিন্সিপাল স্যার আমাদের গ্রুপের সবাই কে ৩০ মিনিট পর স্যারের রুমে যেতে বলল । সবাই মাঠে বসে রইলাম । কলেজ ছুটি হয়ে গেল । রোদেলা ক্লাস থেকে বের হল । আমাদের সামনে দিয়ে যখন রোদেলা হেঁটে যাচ্ছিল তখন ও আমাদের কে শুনিয়ে শুনিয়ে ওর বান্ধবীদের কে বলতেছিল ‘ দেখ নেতারা বসে আছে ’ আমি ত কথাটা শুনেই গরম হয়ে গেলাম ( যার জন্য করলাম চুরি সে বলে চোর ) ।
কথাটা যদি শুধু আমাকে বলত তাহলে আমার গায়ে লাগত না । কিন্তু সাথে তো আমার বন্ধুরা ও আছে , ওদের কি দোষ ? ওরা ত আমার ( রোদেলা ) জন্যই মারামারি করসে । রোদেলার দিকে তাকাতেই দেখলাম ও প্রায় ৫০ গজ সামনে চলে গেছে । ইচ্ছে করতেছিল ওকে ডেকে সবার সামনে মারামারির আসল কারণ টা বলে দিই । কিন্তু ওকে সবার সামনে ছোট করতে মন চাইল না । দেখলাম জাবেদ ভাই মানে আমাদের কলেজের ভি.পি এসে গরম হয়ে গেল । জাহিদ উনাকে একপাশে নিয়ে গিয়ে সবকিছু খুলে বলল । এরপর জাবেদ ভাই আমাকে ডেক বলল : শোন পছন্দ করলে ওকে বলে দে । আর সামান্য ব্যাপার নিয়ে এত কিছু করার দরকার ছিল না । আমি বললাম : ভাইয়া প্রিন্সিপাল স্যারের হাত থেকে বাঁচান । এরপর উনি আমাকে আর জাহিদ কে নিয়ে প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে গেলেন । প্রিন্সিপাল স্যারকে অনেক কষ্টে বুঝিয়ে ভবষ্যতে আর এমন হবে না বলে আমাদেরকে বাঁচালেন । এরপর উনি যে ভাইয়াদেরকে মারছিলাম তাদের সামনে নিয়ে আমাদেরকে বকে মিলিয়ে দিলেন । রোদেলাকে নিয়ে এরকম আরও কত মারামারি করসি কতজনকে হুমকি দিসি কতজন থেকে হুমকি পাইসি তা আমার বন্ধুরা রা আর একমাএ আল্লাহ জানে । ও কখন কখন বাসা থেকে বের হত , কি ড্রেস পরে বের হত , কোথায় যেত , কখন বাসায় ঢুকত সব খবর আমি পেতাম । কিছুদিন পর 1st year final শুরু হল । ওর আর আমার সিট পরল একই হলে । আমাদের হলে ৩ সারি সিট ছিল । ওর সিট ১ম সারিতে আর আমার সিট ৩য় সারিতে । ১ম পরীক্ষার দিন পরীক্ষা শুরু হওয়ার ২০ মিনিট আগে হলে ঢুকলাম । দেখলাম ও ওর সিটে বসে আছে । আমি আমার সিটে বসলাম । কিন্তু আমার সিট থেকে ওকে দেখা যায় না । কি করা যায় তা ভাবতেসি । ওর দিকে তাকাতে গিয়ে দেখলাম ২য় সারিতে ওর এক বেঞ্চ পিছনে আমার একটা বন্ধু বসছে । ওকে পরীক্ষার পর সিগারেট খাওয়াব বলে সিট চেন্জ করলাম । এবার রোদেলাকে ভালোভাবে দেখা যায় । রোদেলার সামনের সিট ছিল আমার ঘনিষ্ট বন্ধু মিজানের । মিজান কে ডেকে বললাম রোদেলা তোর থেকে দেখতে চাইলে ওকে দেখাবি । তোর জন্য প্রতি পরীক্ষা শেষে ১০ টাকা লোড বরাদ্দ । ও বলল ঠিক আছে । এভাবে 2nd year pre test , test ও দিলাম । আমি প্রত্যেক পরীক্ষায় ২ ঘন্টার বেশী লিখতাম না । ৬০-৭০ এর উত্তর দিয়ে পাশ নিশ্চিত করে বসে বসে ওকে দেখতাম । একদিন 2nd year pre test পরীক্ষার সময় এক স্যারের কাছে ধরা খেয়ে গেলাম । স্যার আমাকে সামনে ডেকে নিয়ে বললেন আমি ব্যাপারটা অনেকদিন দেখছি । এভাবে তাকিয়ে না থেকে খাতায় লিখ । নিজেকে প্রতিষ্ঠিত কর । একদিন দেখবে ঐ মেয়েটা তোমার দিকে তাকিয়ে আছে । 2nd year এ উঠার পর আমি ইংরেজী প্রাইভেটে অন্য ব্যাচে চলে গেলাম । কারণ স্যার ছেলে মেয়ে আলাদা ব্যাচ করে ফেলসে । ওকে দেখার জন্য প্রতিদিন বিকালে রিক্সা নিয়ে ওদের পাড়ায় ঘুরে আসতাম । খুব কম দেখা পেতাম । সময় তার নিজস্ব গতিতে বয়ে যায় । কলেজ জীবনও প্রায় শেষ হয়ে আসে । কিন্তু রোদেলাকে আমার ভালবাসার কথা বলা হয় নি । একদিন বিকালে মার্কেটের ২তলায় বারান্দায় বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছিলাম আর আমি গীটার নিয়ে টুং টাং আওয়াজ করছিলাম । সবাই বলল একটা গান ধরতে । কিন্তু আমার ইচ্ছে করছিল না । হঠাৎ নীচের দিকে তাকিয়ে দেখলাম রোদেলা মার্কেটে ঢুকছে । ওর ছোট বোনকে নিয়ে ২তলায় আসতেসে । মনটা ফ্রেশ হয়ে গেল । ও ২তলায় উঠতে মিজান ওকে ডাক দিল । কেমন আছে জিগ্গাসা করল । ও ভালো আছি বলে আমরা সবাই কেমন আছি জিগ্গাসা করল । সবাই ভালো আছি বলল ( আমি কিছু বলি নাই )
জাহিদ রোদেলাকে মার্কেটে কেন আসছে জিগ্গাসা করল । রোদেলা নীচের দিকে দেখিয়ে বলল ঐ যে দেখ শিলা,মিথি,তিথি,জয়া উঠতেছে ( কলেজ ব্যাচমেট ) ওদের সাথে কিছুক্ষণ ঘুরব । ওরাও এসে গেল । আমরা এখানে কি করতেসি তা ওরা জানতে চাইল । মিজান বলল আমরা এখানে প্রায় আড্ডা দিই আর রোহানের গান শুনি । আমি বললম না না মিথ্যা কথা । আমি গান গাই না । রোদেলা বলল তাহলে তোমার হাতে গীটার কেন ? এতকথা না বলে আমাদেরকে ১টা গান শোনাও । জাহিদ বলল মামা চল কলেজ মাঠে চল । ঐখানে সবাই বসব । মার্কেট আর কলেজ পাশাপাশি । সবাই মাঠে বসলাম । আমি সুর তুললাম –
জানো তুমি প্রিয়া বুকের ভিতরে কে রই মানো হৃদয় জুড়ে তুমি শুধু আর কেউ নয়
এসো না বুকের গভীরে শুণ্যতা মুছে দিয়ে ভালবেসে
সুখের পরশ দেব বুলিয়ে তোমাকে রঙে রঙে পৃথিবী রাঙিয়ে দেবে কি আমাকে…..
গান শেষ হতে সবাই হাত তালি দিল । তিথি বলল চরম হয়সে । রোদেলা বলল খুব ভালো লাগসে । ( আমি মনে মনে বললাম তুমিই ত আমার প্রিয়া । তোমাকে নিয়ে আমার এই গানটা লেখা। ভাগ্য ভালো তাই তোমাকে শোনাতে পারলাম ) সন্ধ্যা হয়ে গেল । যে যার বাসায় চলে গেলাম ।
Test পরীক্ষা ও কাছে চলে আসছে । পড়ালেখার চাপ বেড়ে গেল । কিন্তু পড়ায় মন বসাতে পারিনা । শুধু রোদেলাকে মনে পরে । আমার এমন কোনো বই খাতা বাকী ছিল না যেখানে ‘ রোদেলা ’ নামটা লিখা ছিল না । প্রতি পাতায় পাতায় লিখা ছিল । কত রাত যে ঘুমহীন কাটসে মনে নাই । একদিন বিকালে আমার বন্ধু সুজাত কল দিল । আমি তখন বাসায় ছিলাম । বলল তাড়াতাড়ি মার্কেটে যেতে । আমি : কেন ? সুজাত : আমি মার্কেটে । রোদেলা ও মিথিও মার্কেটে । ওকে আর মিথি কে Boom Boys এর রানারা ( ওরাও আমাদের বন্ধু ) Distrub করতেসে । মাথা চরম গরম হয়ে গেল । আমি সাথে সাথে জাহিদ কে কল দিলাম - জাহিদ : বল আমি : কোথায় তোরা ? জাহিদ : তোদের গলির মুখে । কেন ? আমি : বলব । আসতেছি । দৌড়ে বাসা থেকে বের হলাম । জাহিদ কে সব বললাম । ও বলল রানাকে কল দিয়ে মানা কর । আমি বললাম মার্কেটে যাব , সরাসরি কথা বলব । না মানলে হাত চালাই দিব । জাহিদ বলল পাগলামী করিস না , ও আমাদের বন্ধু । আমি বললাম গেলে চল । ঐখানে ১৩-১৪ জন ছিল । সবাই মার্কেট গেলাম । সুজাত কে কল দিলাম । ও বলল ৩য় তলায় উঠতে । ৩য় তলায় উঠেই সিঁড়িতে রানাকে একা পেলাম । সব বললাম । রানা বলল মামা আমি কিছু বলি নাই । কে বলসে জিগ্গেস করলাম । রানা বলল মিশু , লিমন ( চিনি না, রানার বন্ধু ) । জিগ্গেস করলাম ওরা কোথায় ? বলল ঐ ত । রানা বলল মামা বাদ দে আমি মানা করে দিব ওদের কে । পিছনে ফিরে দেখলাম মিশু , লিমন করিডরের শেষের দিকে একটা ফাস্ট ফুড দোকানের সামনে আর রোদেলা ও মিথি ফাস্ট ফুড দোকানের বিপরীতে একটা লেডিস দোকানে । আমি রানাকে বললাম দাঁড়া তোরা । আমি যাই । ওরা কি বলে শুনি । রানাকে আর আমার বন্ধুদের কে সিঁড়িতে দাঁড় করিয়ে আমি মিশু ও লিমনের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম । মিশু তখন মিথিকে বলল এত ভাব মারো কেন ? আমরা ২জন আছি তোমরাও ২জন । প্রেম করবা ? আমি এমনভাবে দাঁড়ায়সি যাতে রোদেলা ও মিথি আমাকে না দেখে । আমি লিমনকে বললাম ভাই কিছু বলিয়েন না । লিমন বলল ওরা আপনার বউ নাকি ? আমি বললাম ওরা আমার বন্ধু । লিমন বলল বউ ত না । ( মারামারি করার ইচ্ছা ছিল না তাই ঠান্ডা মাথায় কথা বলতেসি ) আমি বললাম কথা এভাবে বলতেসেন কেন ? মিশু বলল এভাবে বললে কি করবি ? ফাস্ট ফুড দোকানের মালিক আমাকে ভালো করে চিনে কারন মার্কেটে গেলে ঐখানেই আমরা খাই । উনারে বললাম মামা এরা কি বলে ? উনি লিমন , মিশু কে বলল বাদ দেন এসব । ওরা আমাকে বলল তুই কি বুজাতে চাস ? এবার আমি গরম হয়ে গেলাম । আমার গলার আওয়াজ শুনে রোদেলা ও মিথিও আমার দিকে তাকাল । লিমন , মিশু কে বললাম তোদেরকে মারতে মারতে মার্কেট থেকে বের করব । সাথে সাথে লিমন আমাকে ধাক্কা মারল দেয়ালে । লোকজন জড় হয়ে গেল । এতক্ষণে রানা জাহিদ এরা সবাই চলে আসল । রানা কিছু বলার আগেই মিশু রানাকে বলল ( আমাকে দেখিয়ে , ভাবসে সবাই রানার হয়ে আসছে ) মার । আমি রানাকে বললাম তুই কিছু বললে তোর কপালে ও মার আছে । আমাকে মিশু আবার ধাক্কা দিল । আমি টেবিল থেকে পানি ভর্তি জগ নিয়ে মিশুর মাথায় বাডি মারলাম । রানা ধরতে চাইলে আমি ওকে সরিয়ে দিলাম । লিমন , মিশু কে সবাই মিলে মারা শুরু করলাম । মারতে মারতে ৩ তলা থেকে নীচে নামালাম । পুলিশ চলে আসাতে সবাই পালালাম ।
দিন চলে যায় । রোদেলার সাথে কথা বলা হয় নি ( সাহস করতে পারি না ) । Test পরীক্ষাও শুরু হয়ে গেল । সিট প্লান আগের মত ছিল । শেষ পরীক্ষা ছিল ইংরেজী । ১০ টা বাজে পরীক্ষা শুরু হল । ১১:৪৪ মিনিটে আমার প্রায় ৬০ নাম্বারের মত উত্তর দেয়া শেষ । পাশ নিশ্চিত । ৫ মিনিট এর জন্য লেখা থেকে ব্রেক নিয়ে ওকে দেখি আর ভাবি আজ কলেজে হয়ত লাইফের শেষ পরীক্ষা । তাই আজ ৫ মিনিট এর বেশী ওকে দেখব না । পুরা ১০০ নম্বর উত্তর দিয়ে তারপর বের হব । ৫ মিনিট পর আবার লেখা শুরু করলাম । মাঝে ওর দিকে আবার তাকালাম । দেখলাম ও মিজান থেকে কি একটা দেখে লিখতেসে । ১২:৩৭ আমার লেখ শেষ । মনটা খুব ফ্রেশ লাগল । এবার ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম । ১২:৪১ দেখে দেখে লেখার জন্য স্যার ওকে ৫ মিনিট এর জন্য দাঁড়ায় থাকতে বলল । পুরা ক্লাসে প্রায় ১৩০ জনের মধ্যে ও সহ ৭ জন দাঁড়ায় ছিল । ওকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমার খারাপ লাগল । আমি সাথে সাথে খাতা জমা দিয়ে বের হয়ে গেলাম ।
আজ কলেজ অডিটরিয়ামে বিদায় অনুষ্ঠান । আমরা সবাই ছিলাম । রোদেলার দিকে তাকাতেই দেখলাম ওকে খুব সুন্দর লাগছে । অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছে সিফাত আর জয়া । অনুষ্ঠানের মাঝে হঠাৎ জয়া আমাকে গান গাওয়ার জন্য মঞ্চে ডাকল । আমি লজ্জায় অডিটরিয়াম থেকে দৌড়ে বের হতে যাব কিন্তু বন্ধুরা ধরে ফেলল । এখানে ছোট বড় ভাইয়া আপুরা এবং কলেজ এর সব শিক্ষকরা আছে । আমার লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেল । বন্ধুরা ঠেলে আমাকে মঞ্চে তুলে দিল । জয়ার দিকে চোখ গরম করে তাকাতেই ও বলল সিফাত আমাকে শিখায় দিসে । আমার দোষ দিও না । সিফাত মঞ্চের পিছন থেকে একটা গীটার ( প্লান করা ছিল ) এনে আমাকে দিয়ে কানে কানে বলল রোদেলার ( emotional blackmail ) জন্য হলেও একটা গান গা । আমি গীটার হাতে নিয়ে মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়ালাম । দশর্ক সারিতে রোদেলার দিকে এক পলক তাকালাম ।
হোক না কথা মনে মনে ইশারাতে আলাপন থেকো তুমি হৃদয় নীড়ে সাজাব মধুর জীবন
এই মনেতে সারাটিক্ষণ শুধু তোমারই বিচরণ ….
গান শেষ হওয়া মাত্র সবাই করতালি দিল । কিছুক্ষণ পর অনুষ্ঠান শেষ হল । ভাবছিলাম রোদেলাকে আজ আমার ভালবাসার কথা বলে দিব । কিন্তু যদি ও মন খারাপ করে ফেলে তাও আবার কলেজ জীবনের শেষ দিন এই ভেবে আর বলি নি । রোদেলার দিকে দূর থেকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম ভেবেছিলাম তোমাকে আজ বলে দিব আমার ভালবাসার কথা তোমার মন খারাপের কথা ভেবে বলা হয়নি আমার ভালবাসার কথা
আমার কথাগুলো একান্তই আমার হয়ে থাক না বলা কথা
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন