-হ্যালো......এটা কি দীপার নাম্বার?
-নাম্বার ভালোমতদেখে ফোন দিতে পারেন না!সাত-সকালে ঘুম টা নষ্ট করছেন!
-Sorry...ঘুমের ডিস্টার্ব করার জন্য।
-That's o.k...
এটা বলেই ফোনটা রেখে দিলো নুহান।সারারাত বই পড়ে ভোরের দিকে ঘুমিয়েছিল নুহান তাই সকালে অহেতুক একটা ফোনের জন্য তার ঘুম ভাঙ্গাতে সে ভীষণ বিরক্ত।একটা মেয়ে ফোন দিয়েছে তো কী হয়েছে? নুহানের কাছে এটা বিশেষ কোন কিছু না।সে মেয়েদেরকে এড়িয়ে চলে।তাকে এই পর্যন্ত ৩টা মেয়ে
অবুজ ভালোবাসা
প্রোপোজ করেছে,আর সে তিনটা মেয়েকেই রিফিউজ করেছে।তার ধারনা ভার্সিটির ৩য় বর্ষ ছাড়া প্রেম করা যাবে না কারণ এর আগে প্রেম করলে ভার্সিটির ৩য় বর্ষে উঠার আগেই কবি হতে হবে।বর্তমানে সে যেহেতু ভার্সিটির ১ম বর্ষে সেহেতু কোন মেয়েকে সে পাত্তা দেয় না।
বিরক্তি নিয়ে বিছানা থেকে উঠলো নুহান।আজকে ভার্সিটি বন্ধ তাই আজকে সে তার বাসাতেই থাকবে।ঘুম থেকে উঠেই প্রতিদিনকার মতো রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনছে আর চিন্তা করছে কী করবে।হঠাৎ তার মনে পড়লো যে তিন গোয়েন্দার একটা বই পড়া বাকী।তাই সে বইটি নিয়ে বারান্দায় গেলো পড়তে।কিন্তু পড়ায় কেন জানি তার মন বসাতে পারছে না।বার বার বিপরীত পাশের বিল্ডিং এর তার মুখমুখী ফ্ল্যাটের বারান্দার দিকে তাকাচ্ছে।সে নিজেকেই প্রশ্ন করছে কেনো?গতকালকে পর্যন্তও সে বারান্দাটির দিকে তাকাতে বিরক্ত লাগত কারন সে বারান্দায় যতবারি যেত বারান্দিটিতে একটি মেয়ে দাঁড়ানো থাকত।কিন্তু আজকে বারান্দাটিতে মেয়েটি নেই।এই জন্য কি সে বারান্দাটিতে বার বার তাকাচ্ছে? এই কথাগুলো যখন সে চিন্তা করছিলো তখনি মেয়েটি বারান্দায় আসলো।মেয়েটি যখনই বারান্দায় আসলো তখনই বারান্দাটির দিকে তাকাতে তার বিরক্ত লাগা শুরু করল।না,আজকে আর তার বই পড়া হবে না তাই সে তার রুমের ভিতর চলে গেলো।রুমের ভিতর গিয়ে সে চিন্তা করছে তার মনে কেন এইরকম চিন্তা হচ্ছে।নুহানের শখ সাইকোলজি নিয়ে পড়া।বন্ধুমহলে সাইকোলজিস্ট হিসেবে তার সুনাম রয়েছে।কিন্তু সে তার নিজের সাইকোলজি নিজেই এখন বুঝতে পারছে না।তাই সে সিধান্ত নিল ভার্সিটির সোহেল ভাইকে তার সমস্যার কথা বলবে কারন ভার্সিটিতে প্রেম বিষয়ক কোন সমস্যা হলে সবাই তাকে বলে।
পরের দিন ভার্সিটিতে গিয়ে সৌভাগ্যক্রমে সোহেল ভাই কে পেল।সোহেল ভাইকে তার সমস্যার কথা বলল।

-তোমার কি বারান্দায় গেলে মেয়েটাকে দেখতে মন চায়?
-ব্যাপারটা তা না।কিন্তু না দেখলে কেমন জানি লাগে?
-আর বলা লাগবে না।বুছতে পারছি তুমি তার প্রেমে পরেছো.........
-কি যে বলেন।আমি ভার্সিটির ৩য় বর্ষ ছাড়া প্রেম করব না।
-প্রেম কোন নির্দিষ্ট সময় বলে আসে না।প্রেম যেকোন সময় আসতে পারে।
সোহেল ভাইয়ের শেষ কথাটা তার মনে ধরে।সারাদিন সে কথাটি সে চিন্তা করে।
দুইদিন পর বারান্দায়ঃ
- এই যে শুনছেন।
-আমাকে বলছেন?
-হুম
-জি বলেন।
-আপনার সাথে কথা বললে কি বিরক্ত হবেন?
-না,বলেন।
-আপনার নাম কি?
-নূপুর।আপনার?
-নুহান।কী করেন?
-ইন্টার 2nd year।আপনি?
-ভার্সিটি 1st year.
এইভাবে তাদের মধ্যে শুরু হয় কথা......... কিছুদিন পর হয় ভাল বন্ধুত্ত...............

১ বছর পর...
নূপুর নুহানের ভার্সিটিতে ভর্তি হয়।নূপুর আর নুহান এখন best friend।
এদিকে নুহান প্রতিদিন প্রতিমূহুর্তে তার মনের সাথে যুদ্ধ করে।একবার মনে হয় সে নূপুরকে ভালবাসে আর একবার তার নীতির উপর সে থাকতে চায়।এভাবে দোটানায় চলছে তার দিন।অবশেষে সে সোহেল ভাইয়ের শেষ কথাটা মানে এবং সিদ্ধান্ত নেয় নূপুরকে প্রোপোজ করবে।কিন্তু কবে? সিধান্ত নিল নূপুরের জন্মদিনে প্রোপোজ করবে।
নূপুরের জন্মদিনে ভার্সিটিতে...
-নূপুর একটা কথা বলবো।
-একটা কেন?হাজারটা বলো।
-I love you
-তোমার মাথা নষ্ট হয়েছে?
-না,আমি সুস্থ মস্তিষ্কে বলছি I love you
- But I don't love you
- কেন?
-কারন তুমি সবসময় নিজেকে নিয়ে চিন্তা করো।অন্যজনের feelings তুমি বুঝতে পারো না। You are a selfish.
- তুমি এগুলো কি বলতেছো?
- যা বলতেছি তা সত্য।এক বছর আগে আমি তোমাকে দেখার জন্য বারান্দায় যেতাম।মনে আছে এক বছর আগে একটা মেয়ে তোমাকে ফোন দিয়েছিল আর তুমি তার সাথে কিভাবে কথা বলছ?কেন বলেছ??কারণ তুমি মেয়েদেরকে পাত্তা দাও না।মেয়েদেরকে সম্মান দিতে তুমি পারো না।
-কিন্তু?
-কোন কিন্তু না.........
এই বলে নূপুর হাঁটা শুরু করল......
আর নুহান তার চলার পথের দিকে তাকিয়ে থাক্ল...আর তার চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো......

২ ঘন্টা পর...
নুহান হাতিরঝিলের একটা লেকের ধারে বসে কাদছে...সে যতই তার ভুল বুঝতে পারছে ততোই তার কান্নার পরিমাণ বাড়ছে.........এইসময় তার মোবাইল এ মেসেজ আসলো নূপুরের নাম্বার থেকে...'পিছনে তাকাও'
নুহান পিছনে তাকালো এবং দেখলো যে নূপুর হাতে তার পছন্দের কদম ফুল এবং নূপুর গাল বেয়ে অশ্রুগুলো সবুজ ঘাসের উপর পড়ে রোদের আলোয় চকচক করছে।নুহান কিছু বলার আগেই নূপুর তার সামনে এসে ফুল দিয়ে তার হাতে দিয়ে বলল,'দুই ঘন্টা তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য আমাকে মাফ করে দাও।আমি তোমাকে তোমার ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য মিথ্যা বলেছি।আসলে আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি।'
নুহান কিছু বলতে যাওয়ার আগেই নূপুর তার হাত দিয়ে নুহানের ঠোঁট স্পর্শ করে বলল,'তোমার কিছু বলা লাগবে না।তোমার চোখ দেখে আমি বলতে পারি তুমি কি বলবা।তোমাকে ছেড়ে থাকতে এই ২ ঘন্টা তোমার থেকে বেশী আমি কষ্ট পেয়েছি'

৪ বছর পর...
নুহান আর নূপুরের বিয়ের অনুষ্ঠান চলছে...নূপুর যখন তার পরিবার থেকে অশ্রুসিক্তভাবে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠলো...নুহান তার চোখ মুছে দিয়ে বলল।'এই খুশির দিনে কান্না না।তোমার কারনেই এই খুশির মূহুর্তটা দেখতে পারছি।সেই দিন দুই ঘন্টা তুমি যদি আমাকে না কাদাতে তাহলে হয়তো এই খুশির দিন দেখতে পারতাম না'
 
Top